নতুন দাম কার্যকরের আগে বন্ধ ফিলিং স্টেশন : বিক্ষোভ-অবরোধ, পুলিশ মোতায়েন

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে গতকাল শুক্রবার রাতে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্ধ করে দেওয়া হয় ফিলিং স্টেশন। এর পেছনে রয়েছে তেল মজুত না থাকা এবং যানবাহনের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে না পারার অজুহাত। যদিও ভিন্ন কথা বলছেন চালক-মালিকেরা। এদিকে, রাতে তেল না পেয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘটেছে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের মতো ঘটনা। উত্তেজিত জনতাকে সামাল দিতে কোনো কোনো জেলার ফিলিং স্টেশনে মোতায়েন করতে হয়েছে পুলিশ।
এনটিভি অনলাইনের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে এসব জানা গেছে।
গাজীপুর থেকে আমাদের প্রতিনিধি নাসির আহমেদ জানান, সেখানের শ্রীপুরে ফিলিং স্টেশনগুলোতে তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন মোটরসাইকেল চালকেরা। রাত ১১টার দিকে অবরোধ শুরু করেন তাঁরা। এতে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানজট দেখা যায়।

বাইকচালক আরিফসহ অনেকে জানান, সরকার নির্ধারিত নতুন দাম কার্যকরের এক ঘণ্টা বাকি থাকতেই বেশি লাভের আশায় তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে স্টার ফিলিং স্টেশন। প্রতিবাদ করলেও স্টার ফিলিং কর্তৃপক্ষ তেল দেওয়া শুরু করেনি।
স্টার ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ক্যাশ কাউন্টারে থাকা ব্যক্তিও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান জানান, ৯৯৯ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। রাত ১২টা পর্যন্ত পুরোনো দরে তেল সরবরাহের কথা বলা হয়েছে।
খুলনা থেকে মুহাম্মদ আবু তৈয়ব জানান, নগরীর বেশির ভাগ পেট্রোল পাম্পে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিছু কিছু ফিলিং স্টেশনে রাত ১২টার পর থেকে পুলিশ প্রহরায় তেল সরবরাহ করতে হয়েছে। পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির আহ্বায়ক আব্দুল গাফফার বিশ্বাস এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রতিবাদ করার একজনকে সোনাডাঙা থানায় নেওয়া হয়েছে। যদিও পুলিশ এ বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি।
ফরিদপুর থেকে সঞ্জিব দাস জানান, হঠাৎ পেট্রোলের দাম বৃদ্ধিতে ফরিদপুরের পাম্পগুলো বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে রাতে চলাচলকারী পরিবহণ। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকেরা।
কুমিল্লা থেকে মো. জালাল উদ্দিন জানান, পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেনের দাম বৃদ্ধির খবরে জেলার তেলের পাম্পগুলো রাত সাড়ে ১০টার পরপরই বন্ধ হয়ে যায়। শহরের তেলিকোনা এলাকায় নূরুল হুদা পেট্রোল পাম্প খোলা ছিল। তেল নিতে সেখানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। যদিও সেখানে এক লিটারের বেশি তেল সরবরাহ করা হয়নি বলে রয়েছে অভিযোগ।

নোয়াখালী থেকে মো. মাসুদ পারভেজ জানান, সেখানে কয়েকটি ফিলিং স্টেশন ছাড়া সবই বন্ধ করে দেওয়া হয়। মেসার্স এ এস এম জহিরুল ইসলাম ফিলিং স্টেশন থেকে তেল সরবরাহ করা হলেও তা পরিমাণে কম। এ সময় সড়কের দুপাশে যানজট তৈরি হয়।
সুনামগঞ্জ থেকে দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী জানান, সরকারের বেঁধে দেওয়া নতুন দাম কার্যকরের ঘণ্টা দেড়েক আগেই জেলার পেট্রোল পাম্পকে বন্ধ পাম্প বন্ধ করে দিতে দেখা যায়। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েন মোটরসাইকেল ও পরিবহণচালক-মালিকেরা। এমন পরিস্থিতিতে সটকে পড়েন পাম্পের দায়িত্বশীলরা।

পেট্রোল নিতে আসা শিক্ষকনেতা হারুন অর রশীদ, নাট্যকর্মী সাদিকুর রহমান রুবেল, ব্যবসায়ী সুদ্দিকুর রহমান মাসুকসহ তেল নিতে আসা অনেকে জানান, সরকার তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। রাত ১২টায় কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু দেড় ঘন্টা আগে গিয়েও তাঁরা তেল পাননি। ৯৯৯-এ ও ভোক্তা অধিকারে জানালেও কেউই কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, সবাই পাম্প বন্ধ করে চলে যাওয়ায় কারও সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে না।
পঞ্চগড় থেকে সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ জানান, এ জেলায় তেল সংকট দেখা দেয়। গতকাল রাতে পাম্পগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। নতুন দাম কার্যকরের আগে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক অল্প পরিমাণ তেল সরবরাহ করা হয়। এতে বিক্ষোভ করেন যানবাহন মালিকেরা। পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

বিক্ষোভ সড়ক অবরোধ ও উত্তেজনা নিরসনে মাঠে নামতে বাধ্য হয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ বিভিন্ন পাম্পে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। পরে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
পঞ্চগড় ফিলিং স্টেশনের মালিক আবু হিরণ বলেন, 'গত জুন থেকে জ্বালানি তেলের সংকট চলছে। আমাদের চাহিদা অনুয়ায়ী কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ করতে পারছে না। আজকে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাম্পে ভিড় করছেন গ্রাহকেরা। যেহেতু মজুদ কম, তাই গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা সম্ভব নয়।’
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, পাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে পুলিশ পাম্পগুলো তদারকি করছে।
মেহেরপুর থেকে রেজ আন উল বাসার তাপস জানান, রাত ১২টা থেকে জ্বালানি তেলের নতুন দাম কার্যকর হওয়ার কথা শুনে এ জেলার তেল পাম্পগুলোতে দেখা দেয় ক্রেতাদের ভিড়। এদিকে, নতুন দামে তেল বেচবে বলে পাম্প বন্ধ করে কর্তৃপক্ষের সটকে পড়ার অভিযোগ করেন ক্রেতারা।