পাঁচ ভাইকে চাপা দেওয়া চালকের লাইসেন্স ছিল না : র্যাব
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাবার শ্রাদ্ধ শেষে ফেরার পথে পাঁচ ভাইকে চাপা দেওয়া পিকআপেরচালক সাইফুল ইসলামের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। পিকআপেরও নেই কোনো কাগজপত্র। তবুও সড়কে চলতো বেপরোয়া গতিতে। এতে করা হতো সবজি সরবরাহ।
শুক্রবার রাতে রাজধানীর ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার এসব তথ্য দিয়েছে র্যাব। এর আগে ঘটনার দিন থেকে গাড়ির মালিক মাহমুদুলের পরামর্শে আত্মগোপনে ছিলেন সাইফুল।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার শনিবার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পিকআপটির মালিক চকরিয়ার মাহমুদুল। ঘটনার সময় পিকআপে মালিকের ছেলে তারেক ও এক ভাগনে ছিলেন।’
২০১৮ সালের পর গাড়ির কোনো নথিপত্র হালনাগাদ করা হয়নি জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ঘটনার সময় কুয়াশা ছিল। গাড়িটি চলছিল ৬৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে। কুয়াশার কারণে সাইফুল কাউকে দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন। এ কারণে রাস্তা পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ব্যক্তিদের ওপর গাড়ি তুলে দেন। শেষ মুহূর্তে তিনি ব্রেক চেপেছিলেন। কিন্তু চাপা দেওয়ার পর ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে গিয়ে গাড়িটি ব্রেক করতে পেরেছিলেন।’
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গ্রেপ্তার সাইফুল জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর তিনি গাড়ি থেকে নেমে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু মালিকের ছেলে তারেক তাঁকে ডেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। যাঁরা আহত হয়েছিলেন, তাঁদেরকে হাসপাতালে না নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সাইফুলরা। পরে একটি বাজারে এসে মালিক মাহমুদুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তিনি।’
সাইফুলের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বাজারের পাশে পিকআপটি রেখে চকরিয়ায় মালিকের সঙ্গে দেখা করার কথা বলা হয়। দেখা করার পর মালিক মাহমুদুল তাঁকে এক বছর লুকিয়ে থাকার কথা বলেন। পরে আত্মগোপনে চলে যান তিনি।
কমান্ডার মঈন জানান, প্রথমে সাইফুল লামা এলাকায় একটি রাবার বাগানে কাজ নেওয়ার চেষ্টা করেন। সেখানে একদিন ছিলেন। ঘটনাটি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ায় ভয় পেয়ে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। সাইফুলের দাবি, দুর্ঘটনার শিকার পরিবারের কাউকে তিনি চিনতেন না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সাইফুল দুই বছর ধরে গাড়ি চালালেও তাঁর কোনো লাইসেন্স নেই। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চালিয়েছেন। সর্বশেষ তিনি পিকআপটি সাত দিন ধরে চালাচ্ছিলেন।
২০১৬ সালে মাহমুদুল নামে এক ব্যক্তি ঘাতক পিকআপটি কেনেন। তিনি ও তাঁর ছেলে তারেক পলাতক আছেন।
গত ৩০ জানুয়ারি মারা যান কক্সবাজারের চকরিয়ার সুরেশ চন্দ্র শীল। গত মঙ্গলবার তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়। ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান শেষে স্থানীয় একটি মন্দির থেকে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন সুরেশ চন্দ্রের পাঁচ ছেলে- অনুপম শীল (৪৬), নিরুপম শীল (৪০), দীপক শীল (৩৫), চম্পক শীল (৩০) ও স্মরণ শীল (২৯)।
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলা অংশের মালুমঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরও তিন ভাই-বোন। এর মধ্যে রক্তিম শীল (৩২) চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি আছেন। প্লাবন শীল (২৫) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও বোন হীরা শীল (২৮) চকরিয়ার মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।