সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের জামিন, ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন ও তার ছেলে মো. ফয়সাল আবেদীনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের জন্য আগামী ৫ জুন দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। একইসঙ্গে সাবেক এ বিচারপতিকে জামিন দেওয়া হয়েছে। তবে অনুপস্থিত থাকায় তার ছেলে মো. ফয়সাল আবেদীনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
আজ বুধবার (৩ মে) ঢাকা মহানগর বিশেষ জজ আাদালতের বিচারক মো. বদরুল আলম ভূইয়া এ আদেশ দেন।
এর আগে ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে এই চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক গোলাম মাওলা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের মোট সম্পদ ১ কোটি ৩২ লাখ ৩৯ হাজার ১৭৪ টাকা। তার ১৯৮২-১৯৮৩ কর বর্ষ থেকে ২০১০-১১ কর বর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে ৬৪ লাখ ৭৪ হাজার ৩৯ টাকা। পারিবারিক ও অন্যান্য ব্যয়সহ অর্জিত সম্পদ ১ কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ২১৩ টাকা। এর বিপরীতে আয়ের উৎস পাওয়া যায় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩০৪ টাকার। তার আয়ের তুলনায় ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৯ টাকা বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদনের সুপারিশ তুলে ধরে কমিশনে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেওয়া হয়। সাবেক এ বিচারপতি ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সময় জুডিশিয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রতিবেদন আরও জানা গেছে, বিচারপতি জয়নুল আবেদীন তার ছেলেকে ২৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছিলেন বলে ঘোষণা দেন। যা তার ছেলে ফয়সাল আবেদীনের আয়কর নথিতে উল্লেখ রয়েছে। উক্ত ঋণ পরিশোধের তথ্য তার ছেলের আয়কর নথিতে উল্লেখ আছে। কিন্তু বিচারপতির আয়কর রিটার্নে ২৬ লাখ টাকা ঋণ দান এবং ফেরত প্রাপ্তির কোনো তথ্য নেই। বিচারপতির দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর সঙ্গে দাখিল করা ব্যাংক স্টেটমেন্টে (২০০৫-২০০৬ এবং ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর ) তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ লাখ টাকা উত্তোলনের তথ্য নেই। ফয়সাল আবেদীনের আয়কর নথিতে তার দায় ক্রমান্বয়ে পরিশোধ দেখানো হলেও বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীনের কাছে টাকা পরিশোধের কোনো দালিলিক প্রমাণ পাওয়া পাওয়া যায়নি। যা থেকে দুদক প্রমাণ পেয়েছে সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন তার অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ বৈধ করার জন্য ২৬ লাখ টাকা তার ছেলে ফয়সাল আবেদীনের ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করেন।
এছাড়া, মো. জয়নুল আবেদীন তার স্ত্রীর নামে ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ থাকার হিসাব দাখিল করেন। দুদকের তদন্তে তার বিরুদ্ধে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯০৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগদখলে রাখা এবং ছেলে ফয়সাল আবেদীনকে ফ্ল্যাট ক্রয়ের জন্য দেওয়া ২৬ লাখ টাকা নিজ আয়কর নথিতে ও দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে প্রদর্শন না করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। মো. ফয়সাল আবেদীন পিতার ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ২৬ লাখ টাকা জেনেশুনে বৈধ করার জন্য সম্পত্তি ক্রয় ও দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেন।
তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।