‘সাতক্ষীরা হবে বাংলাদেশের ম্যাংগো ক্যাপিটাল’
সাতক্ষীরার আম এরই মধ্যে বাংলাদেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি হতে শুরু করেছে। চলতি বছর জেলায় আরো এক লাখ আমের চারা রোপন করা হবে। এ ছাড়া আরো বহুজাতের আম চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য অচিরেই সাতক্ষীরাকে ‘ম্যাংগো ক্যাপিটাল’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান আজ বৃহস্পতিবার সকালে ‘নিরাপদ আম বিপণনে নীতিনির্ধারণী পরিবেশ’ শীর্ষক এক সংলাপে এ কথা বলেন।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ওই সংলাপে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ রহিম। তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আমে ফরমালিন ব্যবহারের কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে উৎপাদনকালে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশের আমকে আরো নিরাপদ খাদ্যে পরিণত করতে এই প্রবণতা দূর করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এম এ রহিম বলেন, পরিপক্ব আমে কোনো কেমিক্যালের প্রয়োজন নেই। আমের বাগানে নিয়মিত ধোঁয়া দিলে হপার পোকা দমন হয়। তবে ভোমরা পোকা দমনে পরিমিত কীটনাশক ব্যবহার করা যায়।
অধ্যাপক এম এ রহিম আরো বলেন, পাকা আমে ফরমালিন ব্যবহার করলে আমের পচন তাড়াতাড়ি হয়। গত বছর ব্যবহৃত পরীক্ষা যন্ত্রটি ফরমালিন শনাক্তকরণ যন্ত্র না হওয়ায় ভুল বোঝাবুঝির ফলে আম শিল্প হুমকির মুখে পড়ে। সরকার আম পাকানোর জন্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কারণ তা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
এম এ রহিম বলেন, গাছ থেকে আম সংগ্রহের পর শতকরা ৩৩ ভাগ বিনষ্ট হয়। এটা রোধে আম সংগ্রহ, বাছাই, প্যাকিং, প্রেরণসহ সব বিষয়ে আরো বেশি যত্নবান ও সচেতন হতে হবে। এ সময় কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে আম পচনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। জাত হিসেবে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহের সম্ভাব্য সময় ১ মে থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করেন। তিনি আম উৎপাদনকারীদের আরো প্রশিক্ষণ দেওয়ারও আহ্বান জানান।
সংলাপে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির প্রতিনিধি অধ্যাপক বেথ এ হেইন বলেন, ‘বিদেশে সাতক্ষীরার আমের কদর রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমের গুরুত্ব রয়েছে। আম দিয়ে অন্যান্য খাদ্য তৈরিতেও আমরা সহায়তা দিতে চাই।’
এভিসি প্রকল্পের চিফ অব পার্টি ড. টি লিভাইন বলেন, ‘আমের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। সারা বছরের জন্য জনগণকে সহায়তা দিতে হবে। সাতক্ষীরাকে ম্যাংগো ক্যাপিটাল করতে আমরাও সহযোগিতা দিতে চাই।’
সংলাপ অনুষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান বলেন, ‘অচিরেই সাতক্ষীরাকে বাংলাদেশের ম্যাংগো ক্যাপিটাল ঘোষণা করা হবে। এ জন্য আম উৎপাদন ও বিপণনে আরো যত্নবান হতে হবে। ১৫ জুলাই থেকে শুরু হবে আমের আরো চারা রোপন কর্মসূচি।’
এর পর থেকে আমের উৎপাদন আরো বৃদ্ধির আশা প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বাড়ি ও অফিসের ছাদের ওপরও আমের বাগান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
সাতক্ষীরায় এ বছর আম্রপালি জাতের আমের ফলন সবচেয়ে বেশি হয়েছে। আরো একমাস পর এ আম সংগ্রহের উপযোগী হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
সংলাপে আরো বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মহসীন আলী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান, অধ্যাপক আবু আহমেদ, অধ্যাপক আনিসুর রহিম, মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন, মো. আবদুল্লাহ, মো. নুরুল ইসলামসহ আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
‘সব সময় সবার আগে সাতক্ষীরার আম বাজারে আসে’ মন্তব্য করে সংলাপে বলা হয়, চলতি বছর সাতক্ষীরায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হয়েছে। প্রথম দফায় যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে হিমসাগর জাতের আম। এরপর যাচ্ছে ল্যাংড়া ও সবার শেষে যাবে আম্রপালি জাতের আম। এ জেলার কৃষকরা হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, কিষানভোগ, কালাপাহাড়, গোলাপ খাস, মল্লিকা, রানী পছন্দ, লতা, বোম্বাই, রুপালি জাতের আম চাষ করে থাকেন প্রতিবছর। এ জন্য চার হাজার হেক্টর জমি ব্যবহৃত হয়ে আসছে বলে সংলাপে উল্লেখ করা হয়।