হঠাৎ পরিবহন ধর্মঘটে চরম ভোগান্তি
বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন ও ট্রাকচালক মীর হোসেন মিরুর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সারা দেশে ধর্মঘট পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকরা। আগাম ঘোষণা ছাড়া এ ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে চলা এই পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের পরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সকালে রাজধানীর গাবতলী থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। কোনো পরিবহনকেই রাজধানীর ভেতরে প্রবেশ এবং যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতে দিচ্ছে না শ্রমিকরা। ঢাকার অভ্যন্তরীণ সব রুটও বন্ধ রয়েছে। রিকশা, ভ্যান এমনকি হেঁটেই গন্তব্যস্থলের উদ্দেশে যাচ্ছে মানুষ।
এক যাত্রী জানান, তিনি সাভার থেকে হেমায়েতপুরে এবং সেখান থেকে আবার আমিনবাজার আসেন। এরপর হেঁটেই সেখান থেকে তিনি গাবতলী আসেন।
আরেক যাত্রী বলেন, তিনি বিদেশ যাবেন, তাই সকালে চাঁদপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন। এরপর হাতের ছাঁপের জন্য তাঁকে কুমিল্লা যাওয়া লাগবে। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে তিনি যেতে পারছেন না।
এদিকে, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে শুধু গাবতরী নয়, সায়েদাবাদ, মহাখালীসহ ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলো দিয়ে কোনো যানবাহন প্রবেশ করছে না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল হঠাৎ করে আন্তজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের গাবতরী শাখার সদস্যকে জজ কোর্ট ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। সেই আদেশ শোনার পর তা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই আইন তুলে না নিলে কোনো পরিবহন শ্রমিক গাড়ি চালাবে না।’
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. আবু আলী সুবা বলেন, এই ঘটনার পর থেকে শ্রমিকরা খুব বিক্ষুব্ধ। উত্তরাঞ্চলে কয়েক দিন ধরে ধর্মঘট চলছে, ফেডারেশনের নেতারা ওই কর্মসূচির সঙ্গে এটা যুক্ত করে দিয়েছে।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার জন্য নির্ধারিত যে ধারাটি আছে সেই ধারায় যদি বিচার হতো তাহলে আমার শ্রমিক ন্যায়বিচার পেত। কিন্তু আমার শ্রমিক ন্যায়বিচার পায়নি। জজ সাহেব তাঁকে হয়তো রাগের মাথায় হোক, উত্তেজিত হয়েই হোক বা যেভাবে হোক তিনি যে রায় দিয়েছেন তা সঠিক দেননি।’
গতকাল সোমবার রাতে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রীর বাসায় শ্রমিক নেতাদের বৈঠক চলা অবস্থায় ট্রাকচালক মীর হোসেন মিরুর মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর এলে সারা দেশে ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় আদালত বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া সাভারে ট্রাকচাপায় এক নারীকে হত্যার দায়ে চালক মীর হোসেন মিরুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।