তৃণমূলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ছড়িয়ে দিতে চাই : প্রধানমন্ত্রী
এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ পদক্ষেপ হিসেবে সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর মাধ্যমেই দেশের মানুষ সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু ঢাকা শহর বা দেশের বড় বড় শহরে যেন এটা সীমাবদ্ধ না থাকে, আমরা সারা দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানমালা ছড়িয়ে দিতে চাই।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এ দেশের মানুষ যাতে উদ্বুদ্ধ হয় এবং বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের কাছে একটা মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে যেন আমরা গড়ে তুলতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার সকালে তাঁর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি এবং বাস্তবায়ন কমিটির যৌথ সভায় প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন।
সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে এরই মধ্যে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময়কে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করে তা যথাযথভাবে উদযাপনে বিশিষ্টজনকে নিয়ে একটি ১০২ সদস্যের কমিটি এবং বাস্তবায়নের জন্য ৬১ সদস্যের যে কমিটি করেছে, আজ ছিল তারই প্রথম যৌথ বৈঠক। ‘মুজিব বর্ষের’ প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সারা দেশের সব জেলা, উপজেলা থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এই অনুষ্ঠানমালা চলবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে আমরা নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্রের হার আমরা ১১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য এটা আরো কমিয়ে আনা এবং হতদরিদ্র বলে এ দেশে কিছু থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মার্চ মাসটা আমাদের জন্য খুবই অর্থবহ মাস। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন। আবার ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। কাজেই ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বছরটাই আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে উদযাপন করব।’
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী যথাযথভাবে উদযাপন করা জাতীয় কর্তব্য বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে এ দেশের মানুষের জন্যই কষ্ট স্বীকার করে গেছেন জাতির পিতা। আর সেই কষ্টের ফসল হিসেবেই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, স্বাধীন জাতির মর্যাদা। কাজেই এটা আজকে আমাদের একটা জাতীয় কর্তব্য। আমি মনে করি, তাঁর জন্মশতবার্ষিকী আমরা ভালোভাবে উদযাপন করব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তাঁর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় এ দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ব্যয় করেছেন। মানুষের ওপর অত্যাচার, শোষণ, বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দিনের পর দিন কারাবরণ করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জে জাতির পিতা দেখেছেন দারিদ্র্যের হাহাকার; বুভুক্ষু নর-নারীর কষ্ট। মানুষ ওষুধ পায়নি, চিকিৎসা পায়নি, খাবার পায়নি, থাকার জায়গা নাই। মানুষের এই দুঃখ-কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারেননি।’
অনুষ্ঠানে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বক্তব্য দেন। উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ এবং আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও মতিয়া চৌধুরী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বৈঠকে নিজ নিজ অভিমত ব্যক্ত করেন।
২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর সরকার জাতির পিতার আদর্শে দেশটা গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক বাধাবিঘ্ন পেরিয়েই এ বছর জাতীয় প্রবৃদ্ধি আট ভাগ অর্জনের দোরগোড়ায় উপনীত হয়েছি। মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৯০৯ ডলার হয়েছে এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যে মর্যাদা পেয়েছি, তা ধরে রাখার জন্য এরই মধ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো বলেন, ‘গত ১০ বছরে আমরা চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের, যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। তিনি বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। তিনি সব সময় চাইতেন তাঁর মানুষ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জন করবে এবং বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে একটি মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে।’
তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটাই নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্য অর্জনেই তাঁর সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই জন্মশতবার্ষিকীটা উদযাপনে আমাদের সমাজে যাঁরা বিশিষ্ট বিজ্ঞজন, তাঁদের নিয়ে আমরা একটা কমিটি করেছি ১০২ সদস্যবিশিষ্ট। তবে এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এই কমিটিতে থাকা দরকার, যাঁদের আমরা ধীরে ধীরে অন্তর্ভুক্ত করে নেব। আর সেইসঙ্গে আমরা আরেকটি কমিটি করেছি ১০০ সদস্যবিশিষ্ট, যারা সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। তা ছাড়া বিভিন্নভাবে যেসব কমিটি করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারেও আপনাদের পরামর্শ নেব। কেননা, এটা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। তা ছাড়া আমরা দল হিসেবেও আওয়ামী লীগের আলাদা একটা কমিটি করেছি। সে ক্ষেত্রে আপনাদের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের হাতেও সময় খুব বেশি নেই। কারণ, নির্বাচনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের বেশ কিছু সময় পেরিয়ে গেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক এবং মেহনতি মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যার সুফলও মানুষ পেতে শুরু করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় একটা সময় ছিল, ভাষা আন্দোলনে তাঁর (জাতির পিতার) অবদান একদমই মুছে ফেলা হচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর যে অবদান, সেটাও মুছে ফেলার একটা চেষ্টা করা হয়েছিল। ২১ বছর এ দেশের মানুষ সত্য জানতেই পারেনি। আসলে সত্যকে কেউ কখনো মুছে ফেলতে পারে না। সত্য কখনো না কখনো উদ্ভাসিত হবেই আর তার স্থানটা সে করে নেবে। আজকে আমরা সেটার প্রমাণ পাচ্ছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান অগ্রযাত্রা আমরা অব্যাহত রেখেই জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। আর তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে সেটাই হবে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’