২০১৬ সালের শেষ দিকে বিএসইসির নতুন ভবনে কার্যক্রম
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিজস্ব ভবনের নির্মাণকাজ এখনো শেষ হয়নি। ২০১৬ সালে মাঝামাঝি সময়ে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। আর আগামী বছরের শেষ দিকে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির জন্য একতলা বেজমেন্টসহ ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর পুরোটাই অর্থায়ন করবে বিএসইসি। ভবন নির্মাণ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে বিএসইসি ও গণপূর্ত অধিদপ্তর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের (বিএসইসি) নিজস্ব ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এর আগে ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (এনডিই) সঙ্গে চুক্তি করে বিএসইসি ও গণপূর্ত অধিদপ্তর।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে দুই বছরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়। পরে এর মেয়াদ আরো ছয় মাস বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে।
নকশা অনুযায়ী নয়তলা এ ভবনের মোট আয়তন হবে ৮৯ হাজার ২৫০ বর্গফুট। অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা এখানে থাকবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আধুনিক এ ভবনে থাকছে বিএসইসির নিজস্ব অফিস, আন্তর্জাতিক মানের কনফারেন্স হল, বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারের এজলাস, আধুনিক লাইব্রেরি, ডে-কেয়ার সেন্টার, ক্যান্টিনসহ অন্যান্য সুবিধা।
সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে থাকবে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন জেনারেটর ও সৌরশক্তির ব্যবস্থা। ভবনের যাতায়াতকারীদের সুবিধার্থে থাকবে তিনটি আধুনিক লিফট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রস্তাবিত ১০০ ফুট রাস্তার পাশে নয়তলা ভবনের কাজ এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে আটতলা পর্যন্ত ছাদের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। চলছে শেষ তলার ছাদের কাজ। নকশা অনুযায়ী ভবনের সামনের সৌন্দর্যবর্ধনকারী অংশের কাজ বাকি আছে। নবম তলার কাজ শেষ হলেও ছাদে পানির রিজার্ভ ট্যাংক ও ভবনের সামনের অংশের কাজ একসঙ্গে শুরু হবে।
বিএসইসির নতুন ভবনের কার্যক্রম কবে নাগাদ স্থানান্তর হতে পারে—জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ভবনের নির্মাণকাজ পরিকল্পনা মাফিক এগোচ্ছে। অগ্রগতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। ভবনের কাজটি একটি প্রকল্পের অধীনে রয়েছে। এর কাজ শেষ করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।’
সাইফুর রহমান বলেন, ‘শুরুতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৫ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। ভবনের কাজ শেষ হলেও আমাদের নিজস্ব কিছু কাজ থাকবে। আমরা আশা করছি, ২০১৬ সাল শেষের আগে এসব কাজও শেষ হবে। বিশেষ কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হলে আগামী বছরের শেষ দিকে নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।’
নতুন ভবনের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সাইফুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু এটি একটি নতুন ভবন, আগামী দিনে বিএসইসি কার্যক্রম-সংশ্লিষ্ট সব সুবিধা এখানে রাখার চেষ্টা থাকবে। প্রাথমিকভাবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের একটি এজলাসসহ নতুন কিছু স্থাপনার জন্য বরাদ্দের চিন্তা ছিল। অভ্যন্তরীণ কাঠামো তৈরির নকশা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ও প্রকল্প তত্ত্বাবধায়ক মীর আবদুর রব বলেন, ‘এটি আমাদের হাতে থাকা প্রকল্পের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। চলতি ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এরই মধ্যে নির্মাণকাজের মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। যদিও এর কোনো কাগজ এখনো আমাদের হাতে আসেনি। তবে বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে এর শতভাগ কাজ শেষ হবে। এখন যে হারে কাজ চলছে, তাতে মেয়াদ শেষের আগেই আমরা প্রকল্প হস্তান্তর করতে পারব।’
নির্মাণকাজের দায়িত্বে থাকা এনডিইর কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, ‘কাজের চার ভাগের প্রায় তিন ভাগই শেষ। এখন যেভাবে কাজ চলছে, তাতে কোম্পানির চুক্তি শেষ হওয়ার আগেই আমরা কাজ বুঝিয়ে দিতে পারব। ২০১৬ সালের জুনে আমাদের প্রকল্প হস্তান্তরের কথা রয়েছে। তার আগেরই নির্মাণকাজ শেষ হবে।’
ভবন ব্যবহারের উপযোগী হতে কেমন সময় লাগবে—এ প্রশ্নের জবাবে মনসুর বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির অংশ ছাড়াও ইন্টেরিয়র ডিজাইনসহ আরো কিছু প্রস্তুতি রয়েছে। এর মধ্যে সেসব কাজের জন্য বেশ কিছু যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। কোনো কোনো ফ্লোরে কিছু কাজও শুরু হয়েছে।’
বিএসইসি ভবন সম্পর্কে গণপূর্ত উপবিভাগ-৮-এর কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পের মূল কাজ শেষের পথে। এখন ছাদের ওপর পানির রিজার্ভ ট্যাঙ্ক ও ভবনের সম্মুখভাগের কাজ বাকি।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এর কাজ শুরু হবে। এর সঙ্গে চলবে ভবনের ভেতরের ফিনিশিং ও ইলেকট্রিকের কাজ।’
রফিকুল বলেন, ‘ফ্লোরের অভ্যন্তরীণ চূড়ান্ত ডিজাইন এখনো আমাদের হাতে আসেনি। ডিজাইন এলে সে অনুযায়ী ভবন ব্যবহার উপযোগী করে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করব।’