৪০তম বিসিএস : মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি

৪০তম বিসিএসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় আবেদন করেছিলেন চার লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছেন তিন লাখ ২৭ হাজার জন। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন ২০ হাজার ২৭৭ জন। তাঁদের মধ্য থেকে লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন ১০ হাজার ৯৬৪ জন। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে যাওয়া প্রতিযোগীদের প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেছেন ৩৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে উত্তীর্ণ আজহারুল ইসলাম সনেট (বর্তমানে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটিতে সহকারি সচিব পদে কর্মরত)।
আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪০তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হবে। হাতে খুব বেশি সময় নেই। এই অল্প সময়ের মধ্যে আদর্শ প্রস্তুতি কেমন হতে পারে, তার কিছু পরামর্শ এই লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মৌখিক পরীক্ষার আগে সময় যেহেতু কম থাকে, তাই খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই দিনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
আপনি কোন ক্যাডারের জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং আপনার রোল নম্বরের সিরিয়াল
সাধারণত বিসিএসে প্রথমে সাধারণ ক্যাডারদের ভাইভা নেওয়া হয়। এরপর উভয় ক্যাডারদের এবং সবশেষে টেকনিক্যাল ক্যাডারদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এখানে আপনি লিখিত পরীক্ষায় কত ভালো করেছেন সে অনুযায়ী ডাকা হবে না। পিএসসি ১৫-২০ দিন পরপর দুই সপ্তাহের একটি তালিকা দেবে, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫০-১৮০ জনের ভাইভা হবে। এখন আপনি মৌখিক পরীক্ষার আগে হিসাব করে নিন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকায় কত নম্বরে আছেন এবং সে অনুযায়ী ধারণা করে নিন কবে নাগাদ আপনার মৌখিক পরীক্ষার ডাক পড়তে পারে।
আপনাকে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় যে জিনিস মাথায় রাখতে হবে
মৌখিক পরীক্ষার আগে আপনার পছন্দের তালিকায় থাকা প্রথম তিনটি ক্যাডার মাথায় রাখুন। আপনি প্রথমে যে চয়েসগুলো দিয়েছেন, ভাইভা বোর্ডে আপনাকে সে অনুযায়ী প্রশ্ন করা হবে। তাই প্রস্তুতি নেওয়ার সময় নিজের ক্যাডার চয়েসগুলো মাথায় রাখবেন। সেই আলোকে নিজেকে প্রস্তুত করবেন।
যেসব বই অনুসরণ করবেন
ধরে নিলাম, আপনার প্রথম পছন্দ প্রশাসন ক্যাডার। এর জন্য আপনার কমপক্ষে তিনটি বই নেওয়া উচিত। প্রথমটি হলো বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি বই। এই বইতে ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ এর ঘটনাপ্রবাহ, উল্লেখযোগ্য দিন-তারিখ, আন্দোলন, নেতাদের অবদান, মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বাইরের বিশ্বের অবস্থান ও তখন কার কী ভূমিকা ছিল এসব নিয়ে বিস্তারিত পাবেন। এরপর বঙ্গবন্ধুর জীবনী, জাতীয় চার নেতার জীবনী ও তাঁদের ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর সমূহ, সেক্টর কমান্ডার—এই তথ্যগুলো এসব বইতে সুন্দরভাবে সাজানো পাবেন।
দ্বিতীয়ত, প্রশাসন ক্যাডারের জন্য আলাদা একটি মৌখিক পরীক্ষার বই। প্রশাসন ক্যাডারের পরীক্ষায় কেমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সে বিষয়ে ধারণা পাবেন। এ ছাড়া সবগুলো ক্যাডারের জন্যই যা যা পড়তে হবে সে ব্যাপারে আইডিয়া পাবেন। বইগুলোতে ক্যাডারভিত্তিক সত্যিকারের ভাইভার উদাহরণ দেওয়া হয়। আপনার প্রথম পছন্দের ক্যাডারের জন্য কী কী পড়তে হবে, আপনাকে কী কী ভাবে প্রশ্ন করা হতে পারে সে ব্যাপারে ধারণা পাবেন। তবে আপনি যেই ক্যাডারেই যান না কেন, আপনাকে বাংলাদেশ বিষয়ে খুব ভালো ধারণা থাকতে হবে সেটা প্রশাসনিক হোক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক হোক, প্রাকৃতিক কিংবা খনিজ সম্পদ বিষয়ক হোক। এ ছাড়া নিজ জেলা, বিভাগের ব্যাপারেও ভালো ধারণা রাখতে হবে।
তৃতীয়ত, সংবিধান নিয়ে একটি বই। এখান থেকে সংবিধানের মূলনীতি, সংশোধন, বাতিল হওয়া সংশোধনীগুলো, মৌলিক অধিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ আপনার জানা থাকা চাই। যাঁরা পুলিশ ক্যাডার প্রথম পছন্দ দিয়েছেন, তাঁরা পেনাল কোডের ওপর কিছু পাঠ্য বই আছে, সেগুলো কিনতে পারেন। সাধারণ জ্ঞান ও সাম্প্রতিক বিশ্ব নিয়ে সবার কাছেই প্রশ্ন থাকে। এ জন্য বাজারে প্রচলিত কারেন্ট এফেয়ার্স, কারেন্ট নিউজগুলো যারা নিয়মিত পড়েন তাঁদের জন্য কাজে আসবে। এ ছাড়া এ প্রকাশনীগুলো ডিসেম্বরে সালতামামি বের করে, সেখান থেকে ওই বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো গুছিয়ে নিয়ে পড়তে পারেন।
২০২০ সালে মহামারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একই সঙ্গে ব্রেক্সিট কার্যকর হবার পর যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের অবস্থা, মার্কিন নির্বাচন—এসব বিষয় নিয়ে ধারণা নিতে হবে। সম্ভব হলে বাংলা ও ইংরেজি দুটো পত্রিকাই অনুসরণ করতে পারেন।
প্রশাসন ক্যাডারের পরীক্ষার্থীরা লোকপ্রশাসনের ওপর প্রাথমিক লেভেলের কিছু বই কিনতে পারেন। ফলে প্রশাসনিক কাঠামোর বিভিন্ন স্তরের সম্পর্কে ধারণা পাবেন। যারা প্রথম পছন্দ ফরেন অ্যাফেয়ার্স দিয়েছেন, তাঁরা ডায়েরি মেনে চলুন। যেমন- সাম্প্রতিক সময়ের যেকোনো বড় দুর্যোগ, যুদ্ধ, সন্ধি চুক্তি, বড় উপলক্ষ্য, সামিট (সম্মেলন) এসবের ব্যাপারে নোট করে নিয়ে প্রস্তুতি নিন।
আরো কিছু কথা
মৌখিক পরীক্ষার জন্য পড়ালেখার কোনো পরিসীমা নেই। এখানে আপনাকে কতটুকু পড়তে হবে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কতটুকু ছাড়তে হবে। কারণ, আপনি যা জানছেন তা মাথায় রাখাটা বেশি জরুরি। যতটুকু পড়েছেন ততটুকু ভাইভা বোর্ড পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চর্চার উপায় হলো আলোচনা করা। দু-তিনজন মিলে অনলাইনে বা যেকোনো মাধ্যমে আলোচনা করতে পারেন। ইংরেজিতে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনার চেহারা যেমনই হোক, আপনার বাচন ভঙ্গিতে সৌন্দর্য রাখুন। উচ্চারণে কোনো জড়তা বা আঞ্চলিক টান থাকলে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। এসবের জন্য ইউটিউবে ভালো কোনো বক্তার চোখ-মুখের অভিব্যক্তি দেখুন। ইন্টারভিউতে বক্তার বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ অনুসরণ করুন। পরিমিত আত্মবিশ্বাসী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন।
মনে রাখবেন, ভাইভা বোর্ডে ২০০ নম্বর শুধু আপনার জ্ঞান যাচাইয়ের জন্য নয়। এখানে আপনার স্মার্টনেস, আত্মবিশ্বাস, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ও নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করবেন সেটাও যাচাই করা হবে।
আজহারুল ইসলাম সনেট (বর্তমানে বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটিতে সহকারি সচিব পদে কর্মরত)।