‘নিখোঁজ’রা এলেন ইসিতে, প্রার্থিতা ফিরে পেলেন রেজভী
খুলনা-৪ আসন। এই আসনে স্বতন্ত্র লড়তে চেয়েছিলেন রেজভী আলম। যদিও তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। কারণ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরে ছিল জটিলতা। তালিকায় থাকা একজন ভোটারকে পাননি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর বাকি দুজন স্বাক্ষরের কথা অস্বীকার করেন। তাতেই বাধ সাধে ইসি। পরে আপিল করে আজ সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ফিরে পান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বৈধতা।
আজ রেজভী ও তার সমর্থকদের তথ্যে এসব জানা যায়। আজ শুনানি শেষে বের হয়ে রেজভী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তিনজন ভোটারকে খুলনা থেকে ঢাকায় নিয়ে এসে নির্বাচন কমিশনের সামনে উপস্থিত করেছি। শুনানিতে তারা অংশ নেওয়ার পর আমার প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছি। আমি খুব খুশি।’
নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হলে এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। ফলে, এক শতাংশ হিসেবে রেজভী তিন হাজার ৫৫২ জনের স্বাক্ষর জমা দেন। সেখান থেকে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ১০ ভোটারের তথ্য যাচাই করে রিটার্নিং কর্মকর্তা। ওই ১০ জনের মধ্যে ছিলেন বৃদ্ধা রেখা বেগম (৭২), শোভা রাণী মজুমদার (৬৮) ও আফিজুল ইসলাম (২৩)।
রেজভী জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তার পক্ষ থেকে রেখাকে খুঁজতে যাওয়া হয়। কিন্তু, সে সময় ৭২ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বাড়িতে ছিলেন না। ফলে, তাকে পাওয়া যায়নি মর্মে সিদ্ধান্তে পৌঁছান রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে শোভা রাণী মজুমদার ও আফিজুল ইসলামের কাছে পৌঁছান রিটার্নিং কর্মকর্তার লোকজন। রেজভীর দাবি, শোভা রাণী ও আফিজুল ভয়ে স্বাক্ষরের কথা অস্বীকার করেন।
আজ আপিল শুনানিতে নিখোঁজ বৃদ্ধা রেখাকে নির্বাচন ভবনের উপস্থিত করান খুলনা-৪ আসনের এই প্রার্থী। একইসঙ্গে ‘ভয়ে অস্বীকার’ করা শোভা ও আফিজুলকে হাজির করেন। পরে তাদের স্বীকারোক্তি পেয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন এ স্বতন্ত্র প্রার্থী।
এবারই প্রথমবার ভোটে লড়ছেন রেজভী। তিনি স্পেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। রেজভী বলেন, ‘বাছাইয়ে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিকে ১০ জন ভোটারের তথ্য যাচাই করে রিটার্নিং অফিসার। এর মধ্যে যোগাযোগ করে ও এলাকায় সরেজমিন গিয়ে সাতজনের সত্যতা পেয়েছিল। কিন্তু, তিনজনের বিষয়ে আপত্তি থাকায় আমার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়।’
এই স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, ‘রেখা বেগম এতই বয়স্ক যে ভালো মতো হাঁটতে পারেন না, কথাও বলতে পারেন না। যেদিন তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তার লোকজন খুঁজতে গিয়েছিলেন, সেদিন তিনি বাসায় ছিলেন না। আর বাকি দুজন ভয়ে অস্বীকার করেছিলেন।’
কীভাবে ঢাকায় আনার বিষয়ে রাজি করালেন তাদের, জানতে চাইলে এ স্বতন্ত্র প্রার্থী বলেন, ‘তারা আমার এলাকার ভোটার, আমাকে পছন্দ করে। এরা প্রথমবারের মতো ঢাকা শহরে এসেছেন। তাদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করে আনা হয়েছে।’ রেজভী বলেন, ‘উনাদের আনতে ঝামেলা হয়। সৌজন্যতাবোধ থেকে অনেক কিছু করতে হয়। সুতরাং, বুঝতে পারছেন কষ্ট হলেও প্রার্থিতা ফেরত পেতে এ ছাড়া বিকল্প ছিল না।’
এ তো গেল রেজভী আলমের কথা। তবে, তাকে সমর্থন দেওয়া রেখা বেগম সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় দিয়েছেন ভিন্ন তথ্য। তাকে বোঝানো হয়েছে, মৃত ভোটার দেখানোয় রেজভীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। ফলে, আগামীতে আর কোনো সরকারি সুবিধা পাওয়া যাবে না। সেজন্য, তিনি ঢাকায় এসেছেন।
প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর যখন চলে যাচ্ছিলেন, তখন নির্বাচন ভবনের সামনে রেখা বেগমের সঙ্গে থাকা আরেক নারী বলেন, ‘অফিসের (রির্টার্নিং কর্মকর্তা) লোকজন উনাকে (রেখাকে) মৃত ঘোষণা করেছিল। তাই নিজ থেকে নির্বাচন কমিশনে এসেছেন। প্রমাণটা দেওয়ার জন্য, সাক্ষী দেওয়ার জন্য।’ এমন সময় রেখা বেগম বলেন, ‘আমি তো মৃত হলে (ভাতা সুবিধা) কিছু পাব না। আমি গরিব মানুষ, এজন্য এসেছি। আমি জীবিত। আমি সাক্ষী দিছি। এখন ফিরে পাইছে।’