আজ ‘আশা’র জন্মদিন
গায়িকা না হলে তিনি শেফ হতে পারতেন। এ কথা নাকি একটা সময় তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন গায়িকা আশা ভোসলে। রান্না করতে তিনি বরাবরই ভালোবাসেন। বিশেষ করে আশা ভোসলের হাতের তৈরি গোয়ান ফিশ কারি, পায়া কারি আর ডাল নাকি সব সময়ই অসাধারণ। তাঁর রান্নার ফ্যানও বলিউডের অনেকেই।
আজ জীবনের ৮৩ বছরে পা রাখলেন ভারতের এই জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। অসাধারণ গায়িকা হিসাবে তাঁর পরিচিতি আজ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও তিনি নাকি যথেষ্ট ভালো একজন মিমিক্রি আর্টিস্টও! বিশেষ করে লতা মঙ্গেশকর এবং গুলাম আলীর গলায় নাকি সাবলীল ভাবেই গান গাইতে পারেন তিনি।
আশা ভোসলের ব্যক্তিগত জীবন নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে পেরিয়ে এসেছে। মাত্র নয় বছর বয়েসে বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই গান গাইছেন আশা ভোসলে। ১০ বছর বয়সেই সিঙ্গিং ডেবিউ করেন তিনি। মারাঠি ছবিতে তাঁর প্রথম ডেবিউ করা গানটি ছিল ‘চলা চলা নব বালা’। এরপর হিন্দি ‘চুনরিয়া’ ছবিতে তিনি প্রথম হিন্দি গান করেন। গানটি ছিল ‘সাওয়ন আয়া’।
জীবনের ষোলো বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন আশা। দিদি লতা মঙ্গেশকরের সেক্রেটারি গণপাত্র ভোসলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। যে বিয়ে লতা মেনে নিতে না পারায় দুই বোনের মধ্যে সেই সময় দূরত্ব তৈরি হয়। নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে গান গেয়ে তেমন নাম করতে পারেননি আশা ভোসলে। জানা যায়, প্রথমদিকে নাকি তিনি বলিউডের ‘বি’ এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির ছবিতেই গান গাইতেন। জীবনের প্রথমদিকে ভালো ছবিতে কণ্ঠ দেওয়ার তেমন সুযোগও ঘটেনি।
শোনা যায়, আশার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল বলিউডের দুটি গান। রাজ কাপুর এবং বি আর চোপড়ার ‘নন্নে মুন্নে বাচ্চে তেরি’ এবং ‘উড়ে জব জব জুলফে’ গান দুটিই তাঁকে জনপ্রিয়তার পথ দেখায়। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি আশা ভোসলেকে। জীবনে ২০টি আলাদা আলাদা ভাষায় প্রায় ১২ হাজার গান গেয়ে ফেলেছেন আশা ভোসলে। একমাত্র আশাই ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
১৯৮০ সালে নিজের থেকে ছয় বছরের ছোট রাহুল দেব বর্মণের সঙ্গে ফের বিয়ে হয় আশার। ওঠা পড়ার জীবনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠলেও একটা সময় ‘ক্যাবারে সিঙ্গার’ ট্যাগজুড়ে গিয়েছিল আশার সঙ্গে। যে ট্যাগ থেকে বের হওয়ার জন্য ‘উমরাও জান’ ছবিতে গজল গাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এবং সেই গজলের মধ্য দিয়েই প্রমাণ করে দেন তিনি শুধু ‘ক্যাবারে সিঙ্গার’ই নন। এ ছাড়া তিনি জীবনে মাত্র ১০ দিন রিহার্সাল করে ওয়েস্টার্ন টিউনে ‘আজা আজা ম্যায় হু পেয়ার তেরা’ গানটিও গান।
ক্যারিয়ারের শেষের দিকে যখন অনেকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবে, ঠিক সেই সময়ই নতুন উদ্যোমে ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে আসেন আশা। এ আর রহমানের সুরে ‘তানা তানা’, ‘মুঝে রঙ দে’ এবং ‘কহি আগ লগে’র মতো গান রেকর্ড করেন তিনি। এসব নতুন গানের জাদুতে ফের উদ্বেলিত করছেন শ্রোতাদের।

মনোজ বসু, কলকাতা