আপনার ত্বক বুড়িয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সহজ সমাধান
বয়স বাড়লে ত্বকে বলিরেখা পড়ে, কালচেভাব দেখা দেয়। আসলে বয়স বাড়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে আমাদের ত্বকে।
তবে একটু সচেতন হলে এই বুড়িয়ে যাওয়া অনেকটা ধীর করা যায়। এসব নিয়ে কথা বলেছেন ডা. ঝুমু খান। বর্তমানে তিনি নিজ প্রতিষ্ঠান ডা. ঝুমু খান’স লেজার মেডিকেলের পরামর্শক। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৬৫৮তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচার হয়।
প্রশ্ন : ত্বকের বয়স বাড়ছে, বোঝার উপায় কী?
উত্তর : আসলে অ্যাজিং খুব আপেক্ষিক একটি শব্দ। আমাদের দুই ভাবে বয়স বাড়ে। বায়োলজিক্যাল অ্যাজ, ক্রনোলোজিক্যাল অ্যাজ। ক্রনোলজি হলো, নম্বর। জন্ম তারিখ অনুযায়ী আমার বয়স কত হলো? জন্ম তারিখ অনুযায়ী আমার ২০, ৩০, ৪০ বা ৭০ বছর। আর বায়োলজিক্যাল অ্যাজ হলো আমি নিজেকে কীভাবে রাখলাম সেটি। ক্রনোলজিক্যালই আমার বয়স হয়তো ৩০ বছর। তবে আমি এতই নিজেকে অত্যাচার করলাম যে ৫০ বছরের মানুষের মতো দেখতে হয়ে গেলাম। এমনকি আমার চেহারাতেও সেটি ফুটে উঠল। আবার একটি মানুষের বয়স হয়তো ৫০ বা ৬০ হয়ে গেছে, তাকে বয়স স্পর্শ করছে না। কারণ, তার ক্ষতি অপেক্ষাকৃত কম। এ কারণে তার চেহারা ও শারীরিক ব্যাকরণ বয়স কম মনে হয়।
প্রশ্ন : ত্বকে লক্ষণগুলো কীভাবে প্রকাশ পায়?
উত্তর : আমাদের দেশে আমরা বয়সটা বুঝতে পারি, যখন ত্বকে এর লক্ষণ আসে। আমরা স্বাস্থ্যগতভাবে অতটা সচেতন নই।
স্বাস্থ্যগতভাবে আমি আগের মতো কর্মদক্ষ না, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছি। আমার অল্পতেই ক্লান্ত লাগছে। একটি কাজ করতে আমার দেরি হচ্ছে। চিন্তা করার প্রক্রিয়া আগের চেয়ে ধীর হয়ে যাচ্ছে। আমি অল্পতেই বিষণ্ণ হয়ে যাচ্ছি, ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছি। এগুলো বয়স বাড়ার লক্ষণ। সাধারণভাবে আমরা বয়সকে ধরে নিই ত্বকের উপর যা দেখা যাচ্ছে তার ওপর। ত্বকে বলিরেখা পড়ছে, কালচেভাব আসছে, দাগ আসছে, মুখ ভারী হয়ে যাচ্ছে, ত্বক ঝুলে পড়ছে। তার দেহেও এই পরিবর্তন আসছে। দেখা যাচ্ছে, দেহ আগে টান টান ছিল, এখন একটু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।
প্রশ্ন : অ্যান্টি অ্যাজিং বিষয়টি কী?
উত্তর : আমরা কাছে মনে হয়, বয়স বাড়ার বিষয়টি একটি ঘোড়ার গাড়ির মতো। যখন ঘোড়ার গাড়ি চলা শুরু করে, ধীর গতিতে শুরু করে। এটি যখন চলতে থাকে, গতি বাড়তে থাকে। বয়স বাড়ার বিষয়টিও এভাবে হয়। বয়স বাড়ার বিষয়টিও যেন টগবগ করে বাড়তে থাকে। জন্মের পর থেকেই কিন্তু বয়স বাড়ার প্রক্রিয়া চলছে। তখন হয়তো বুঝতে পারছি না। তবে ত্রিশের পর আমি অনুভব করছি, আমার ত্বকে কিছু পরিবর্তন আসছে বা শারীরিকভাবে আগের মতো কর্মক্ষম থাকতে পারছি না। তবে ৪০ বছরে গিয়ে সেটি আরো বাড়ছে। পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা, ক্লান্তিভাব। জীবনযাপনের ধরন যত খারাপ হয়, রোগ তত বাসা বাঁধতে শুরু করে। বিশেষ করে মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু মেটাবলিক ডিজঅর্ডার নিয়ে একদমই চিন্তা করে না। ওজন ১০ কিলো, ২০ কিলো বেড়ে গেল, থাইরয়েডের সমস্যা হচ্ছে—এসব বিষয়ে আমাদের দেশের মানুষ কম ভাবে।
প্রশ্ন : কী কী পদ্ধতি রয়েছে, যাতে বয়স বাড়ার প্রক্রিয়া একটু থামিয়ে দেওয়া যায়?
উত্তর : প্রয়োজনীয়তা কে, কখন অনুভব করবে, এটি বলা কঠিন। আমার অনেক ক্লাইন্ট রয়েছে, যাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর, যাদের একদমই লক্ষণ দেখা দেয়নি। তবে তারা সচেতন। তারা চায়, তাদের এই লুক ধরে রাখতে। বরং আরো ভালো কীভাবে দেখানো যায়, সেটি নিয়ে কাজ করে। ত্বকে বয়স বাড়ার প্রভাবের বিষয়টি আসলে প্রতিরোধ করা যায়।
আরেকটি দল রয়েছে, যাদের ক্ষতিটা শুরু হয়েছে। তখন তারা আসেন। আরেকটি দল রয়েছে যাদের বেশি খারাপ অবস্থা। তখন তার মনে হচ্ছে, আমাকে খুবই খারাপ দেখাচ্ছে। এবার আমার কিছু একটা করা দরকার।
ত্রিশের মধ্যে যারা আসে, তাদের এক ধরনের ব্যবস্থাপনা-চিকিৎসা করি। এটা আমরা লেজার দিয়ে করি। ব্যবস্থাপনার মধ্যে কিন্তু বোটক্সও আসে।
প্রশ্ন : বোটক্স আসলে কী?
উত্তর : বোটক্স এক ধরনের ইনজেকশন। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো, বটোমিনাম টক্সিন। পেশিকে শিথিল করে দেওয়া। আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের ক্ষয় হয়, কোলাজেন ক্ষয় হয়, চর্বি কমতে থাকে। তো ওই গভীর দাগগুলো আসা শুরু করে। যখন আমরা কম বয়স থেকে বোটক্স দেওয়া শুরু করি, পেশিগুলো টান থাকে বলে ক্ষয়ের পরিমাণ কম হয়।
ক্ষয় হওয়ার আরেকটি বিষয় হলো, মুখের এক্সপ্রেশন বেশি হওয়া। যারা অনেক কপাল কুচকায়, যাদের শুষ্ক ত্বক, তাদের বলিরেখা তাড়াতাড়ি পড়ে।
প্রশ্ন : বোটক্স কত বছর থেকে করতে হয়?
উত্তর : যার প্রয়োজন সে করবে। অনেকে চেহারার আকারের জন্য আসে। কারো হয়তো মুখ একটু ভারী, ক্যামেরা-ফেস ভালো নয়, সামনাসামনি হয়তো অনেক সুন্দর। তার মুখকে একটু পাতলা দেখানোর জন্য আসে। হয়তো কারো জো লাইন ভারী। বোটক্স করলে মুখে চাপানো ভাব আসে। তো কার কোনটি প্রয়োজন, তার ওপর নির্ভর করে বোটক্স করা হয়। দেখা যাচ্ছে, ৫০ বছর হয়ে যাচ্ছে, তার তীক্ষ্মভাব এখনো রয়েছে।
এরপর আমরা ফটোসেল বলে একটি চিকিৎসা দেই। অনেকে এখন পার্লারে যায়, ফেসিয়াল করে। আরেকটু বিজ্ঞানসম্মত যে পদ্ধতি সেগুলো আমরা আমাদের ক্লিনিকে করে থাকি।
প্রশ্ন : চুল পড়া নিয়ে অনেকেই শঙ্কিত থাকে? কী করতে হবে?
উত্তর : চুল পড়ার আসল কারণ হলো মানুষ নিজের প্রতি অত্যাচার করে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘটিয়ে ফেলে। আসলে আমাদের জীবনযাপনের ধরন নিয়ে সচেতন হওয়া খুবই দরকার। অনেক কম বয়সীদের অনেক জটিল সমস্যা হয়। বেশি বয়সীদের হয়তো হালকা সমস্যা থাকে। প্রধানত আমরা লেজার করি এবং পিআরপি করি। এটি আমরা প্রতিরোধের জন্যও করি, চিকিৎসার জন্যও করি। যার যা প্রয়োজন, সে সেটি করছে।
প্রশ্ন : খুব খারাপ অবস্থা হয়ে গেলে তখন কীভাবে চিকিৎসা দেন?
উত্তর : আসলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য একটি মানসিক প্রস্তুতি দরকার। আমার কিছু করা দরকার, আমার পরিবর্তন প্রয়োজন। আমরা যখন বুড়িয়ে যাওয়া শুরু করি, ক্লান্তি, অবসাদের পাশাপাশি বিষণ্ণতাও ভর করে। যার যত জটিল সমস্যা তার চিকিৎসা তত বিস্তারিত হয়। তবে যাদের চোখে কালো দাগের সমস্যা হয়, যাদের থুতনিতে চর্বি জমে যাচ্ছে, তাদের জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন জরুরি। আমি এত দিন নিজের ক্ষতি করেছি। তবে এখন ২০২০-এ নিজেকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারি।
দেখা যায়, একটু ধীর প্রক্রিয়া যেগুলো, সেগুলোতে রোগী উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। হাই এফিউ দিই। অনেক সময় আমরা ইনজেকশন দিয়েও চর্বি কমাই। এর পর যদি আরো বেশি ঝুলে পড়ে, আমরা থ্রেড লিফট করি।
প্রশ্ন : জীবনযাপনের ধরন কীভাবে পরিবর্তন করতে বলেন? রোগী ফলোআপের জন্য কয়দিন পরপর আসবে?
উত্তর : যেমন—বোটক্স। এটি আমরা ছয় মাস পর পর করতে বলি। ফিলার আমরা বছরে একবার করতে বলি।
আরেকটি বিষয় রয়েছে গ্লুটাথায়ন। অনেকে ভাবে মানুষ ফর্সা হওয়ার জন্য গ্লুটাথায়ন নেয়। ফর্সা কেন হয়? কারণ, এটি ভেতর থেকে ত্বককে পরিশোধন করে। এটি প্রত্যেকটি কোষ ডিটক্স করে। প্রত্যেকটি কোষের পুনর্গঠন সম্ভব হয়। ভেইনে এটি খুব ভালো প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি তার মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা কমাতেও সাহায্য করবে।
প্রশ্ন : বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকাতে আসলে সার্বিকভাবে কী করবে?
উত্তর : প্রাকৃতিকভাবে ভালো থাকতে হলে প্রকৃতির কাছে থাকতে হবে। আমরা প্রকৃতি থেকেই এসেছি। আমি যত নিয়মের ভেতর আসব ভালো থাকব। সকালে ঘুম থেকে ওঠা, আগে-আগে ঘুমোতে যাওয়া, সুষম খাবার খাওয়া। ক্যালরি একটু হিসাব করে খাওয়া। ঘুম খুব জরুরি। ঘুম ঠিকমতো হলে বয়স বাড়ার প্রক্রিয়া ধীর গতির করা যাবে।
ক্যাপশন : অ্যান্টি অ্যাজিংয়ের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন ডা. ঝুমু খান ও ডা. সানজিদা হোসেন। ছবি : এনটিভি