প্রবীণদের হাড় নরম রোগ
হঠাৎ করে বাসার ছাদে পড়ে গিয়ে হাড়ে ব্যথা পান ষাটোর্ধ্ব শাহরিয়ার আলম (ছদ্মনাম)। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে দেখা গেল, তাঁর কোমরের দুটি হাড়ে চিড় ধরেছে। যাকে মেডিকেলের ভাষায় কমপ্রেশন ফ্রাকচার বলে। বিএমআই পরীক্ষার পর চিকিৎসক জানালেন, তিনি হাড় নরম রোগ বা অস্টিওপরোসিস রোগে আক্রান্ত।
হাড় নরম প্রবীণ বয়সের একটি স্বাভাবিক রোগ। এই রোগ শরীরের হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। একে নীরব ঘাতকও বলা হয়। কেননা এই রোগ হলে আগে থেকে তেমন কোনো ধরনের লক্ষণ দেখা যায় না।
নারী-পুরুষ উভয়েরই এই রোগ হয়। তবে নারীর ক্ষেত্রে বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কেননা নারীর মেনোপজের সময় হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম ভিটামিন বি, ভিটামিন ডি-এর অভাবে এই রোগ হতে পারে।
লক্ষণ
কেউ পড়ে গেলে যদি কোনো বড় হাড় বা ছোট হাড় ভেঙে যায় তবে এটি মূল লক্ষণ। এ ছাড়া কোমরে ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা- এগুলোকেও এ রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক্স-রে করে ধরা পড়লে বিএমআই পরীক্ষা করে দেখতে হয় হাড় নরম আছে কি না।
চিকিৎসা
প্রথমে ব্যথা কমার জন্য চিকিৎসা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে। ফিজিওথেরাপি নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হালকা ব্যায়ামও করা যেতে পারে। এই রোগে রোগীকে উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট গ্রহণ, ভিটিমিন ডি দেওয়া হয়। এ ধরনের ওষুধ শরীরে হাড়ের ঘনত্ব ধীরে ধীরে বাড়ায়। এ ছাড়া রোগটি যদি তীব্র হয় তাহলে একলাসটা ইনজেকশন দিলেও হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
সতর্কতা
নারীর ক্ষেত্রে মেনোপজ হয়ে গেলে অবশ্যই হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা করা উচিত। ষাটোর্ধ্ব বয়সের যে কোনো ব্যক্তির হাড়ের ঘনত্ব কম আছে কিনা তার পরীক্ষা করে দেখতে হবে। নয়তো পড়ে গেলে বা অন্য কোনো দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙে যেতে পারে।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
শারীরিক পরিশ্রম বা কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। তরুণ বয়স থেকেই ফল, সবজি ইত্যাদি জাতীয় খাবার খেতে হবে। তাহলে এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যাবে।
ডা. মোহাম্মদ আলী : ফিজিও থেরাপি বিভাগের প্রধান, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল