মন খারাপ মানেই কি বিষণ্ণতা?
বিষণ্ণতা একটি মানসিক সমস্যা। বিভিন্ন কারণে আমাদের মন খারাপ হতে পারে। তবে সব মন খারাপই কি বিষণ্ণতা ? এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬৬৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ। বর্তমানে তিনি চিকিৎসা উচ্চতর এমফিল ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : অনেক সময় হঠাৎ মন খারাপ লাগে। এই মন খারাপ লাগাটাই কি বিষণ্ণতা? আপনাদের মনোচিকিৎসকদের সংজ্ঞায় বিষণ্ণতা কী?
উত্তর : আমরা যেহেতু মানুষ, আমাদের একটি আবেগ আছে। আমাদের আবেগ সবসময় একই রকম থাকে না। সেটা কখনো ভালো থাকে। কখনো স্বাভাবিক থাকে। কখনো অতি ভালো থাকে। কখনো খুব মন খারাপ থাকে।
অনেক সময় আমরা বলি আমার মন ভালো না, ‘আমি বিষণ্ণ’-এটা আমাদের আবেগের সাধারণ একটি অংশ। এটা রোগের পর্যায়ে পড়ে না। যদি কোনো কিছু মনের মতো না ঘটে, মনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তাহলে মন খারাপ হওয়াটা স্বাভাবিক। খারাপ না হওয়াটা তখন অস্বাভাবিক। মানুষ হলে এগুলো থাকতেই হবে। আমাদের মানবিক যে আবেগ আছে, আবেগের যেই ওঠানামা, সমস্তটাই থাকবে। থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে বিষণ্ণতাকে রোগ হিসেবে তখনই বলি, যখন তাদের এই মন খারাপটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। এতটাই খারাপ অবস্থায় থাকে যে নিজের দিকে একেবারেই ঘামখেয়ালি থাকে। নিজের কোনো যত্ন না নিতে পারা, কারো সঙ্গে মিশতে না পারা, কারো সঙ্গে কথা বলতে না চাওয়া, কেউ কথা বলতে এলেও বিরক্ত বোধ করা – এমন ঘটে। আবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ না থাকা কিংবা অতিমাত্রায় খাওয়া, সারা দিন শুয়ে থাকা, শরীর শক্তিহীন অনুভূত হওয়া – এসব সমস্যাও হয়।
এ ছাড়া নিয়মিত যে আমাদের কাজ, কোনোটাই ঠিকমতো যেন হচ্ছে না, করার মতো যে উৎসাহ উদ্দীপনা কোনোটাই হচ্ছে না- এমনটাও ঘটে। অনেকে দেখা গেল চাকরির ক্ষেত্রে নিয়মিত অনুপস্থিত থাকছে। ছোটো বাচ্চা হলে সে স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। নিয়মিত লেখাপড়া করতে পারছে না। কোনো কিছুতেই তার মনোনিবেশ হচ্ছে না। ভালো লাগছে না। সে নিজেকে অসুস্থ ভেবে তো শুয়ে থাকছেই, এমনকি পরিবারের লোকজনও অনেক সময় বিরক্ত হচ্ছে তার প্রতি। এই অবস্থা যদি মাসখানেকের বেশি একই রকমভাবে থাকে এবং কোনো উন্নতি না হয়ে অবনতির দিকে যেতে থাকে, তাহলে একে বিষণ্ণতা রোগের পর্যায় বলা হয়। তখনই ডিপ্রেসেটিভ ডিজঅর্ডার বলি। নিজের স্বাভাবিক কার্যক্রমগুলো পারছে না। পরিবারের প্রতি তার যে দায়িত্ব- কর্তব্য সেগুলো পালন করছে না। তার কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার ব্যাঘাত ঘটছে। সেটা এক মাসের বেশি সময় ধরে স্থায়ী হচ্ছে। নিজেকে সব কিছু থেকে গুটিয়ে নিতে চায়। একা একা থাকতে চায়, অন্ধকারে থাকতে চায়। এমনকি সে অনেক সময় মনে করে কেউ আমাকে সাহায্য করতে পারবে না। আমার এই মন খারাপ থেকে, বিষণ্ণ জীবন থেকে হয়তো কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। এমনকি আত্মবিশ্বাসও কমে যায়। একপর্যায়ে তার মনে হয় পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই কঠিন। আমি একটি বোঝা হয়ে গেছি। আমার জন্য বোঝা, পরিবারের জন্য বোঝা, সমাজের জন্য বোঝা। আমি না থাকলে সবকিছুই ভালোভাবে চলবে। আমি তো আর পারছি না। এই বিষয়গুলো খুব ঘটতে থাকে।