বিশ্ব রক্তদাতা দিবস : কত দিন পর রক্ত দেওয়া যায়?
আজ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। রক্তদান নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। রক্ত দিলে একজন মানুষের প্রাণ যেমন বাঁচে, তেমনি রক্তদাতাও সুস্থ থাকে।
তবে কারা রক্ত দিতে পারবেন, কারা পারবেন না, কত দিন পর রক্ত দেওয়া যাবে—এসব বিষয় নিয়ে অনেকের ভেতরই বিভ্রান্তি রয়েছে। এসব বিষয়ের উত্তর দিয়েছেন ডা. শেখ সাইফুল ইসলাম শাহীন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪৬১তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের তাৎপর্য কী?
উত্তর : কার্ল ল্যান্ডসটেইনার ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের জনক। তাঁর জন্মদিন হলো ১৪ জুন। ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯০০ সালে মতান্তরে ১৯০১ সালে ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম আবিষ্কার করেন। এর আগে রক্তদানের বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না। গ্রুপ নির্দিষ্ট ছিল না। উনি ১৯৩০ সালে এবিও ব্লাড গ্রুপ আবিষ্কারের জন্য নোবেল প্রাইজ পান। তাঁর জন্মদিনকে স্মরণ করে প্রতিবছর রক্তদাতা দিবস পালন করা হয়। এ দিনটিতে রক্তদাতাদের উৎসাহিত করা হয়।
প্রশ্ন : এ উৎসাহিত করার পেছনে কারণ কী?
উত্তর : রক্তদানের প্রতি অনেকের ভীতি কাজ করে। আমাদের অসচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরা যদি এ সম্পর্কে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান বেশি করতে পারি, সে ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা হওয়ার কথা নয়। বিশ্বে অনেক দেশেই স্বেচ্ছায় রক্তদান ১০০ ভাগ। আমাদের দেশে মাত্র ৩১ ভাগ।
প্রশ্ন : এ দিবসের মধ্যে কী কী বিষয় থাকে?
উত্তর : এর মধ্যে র্যালি থাকে। রক্তদাতাদের পুরস্কৃত করা হয়। স্বেচ্ছায় রক্তদান ক্যাম্প থাকে। সচেতনতামূলক কার্যক্রম থাকে। এ রকম দিনব্যাপী অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
আমাদের দেশের রক্তদাতার প্রধান উৎস হলো, রিপ্লেসমেন্ট ডোনার বা রিলেটিভ ডোনার। যেমন—আপনার প্রয়োজনে আপনার আত্মীয়স্বজন এসে রক্ত দিল। আর স্বেচ্ছায় রক্ত দিল হয়তো নির্দিষ্ট সময় পর পর। কে রক্ত পাবে, কোথায় যাবে, কী হবে কিছুই সে জানবে না। এই স্বেচ্ছায় রক্তদাতার হার ৩১ ভাগ। আসলে আমাদের দেশে বছরে আট লাখের মতো রক্ত প্রয়োজন। ডব্লিউএইচওর একটি পরিসংখ্যানে এটি দেখা গেছে। এর মধ্যে সাত লাখ ইউনিট সংগ্রহ হয়, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এই যে সংখ্যাটা সংগ্রহ হলো এর ৩১ ভাগ হলো স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে। আর বাকিটা রিপ্লেসমেন্ট ডোনারের মাধ্যমে আসে। তাই এখনো কিন্তু বছরে এক লাখ ব্যাগ রক্তের ঘাটতি রয়েছে।
প্রশ্ন : রক্তদান কারা করতে পারবেন?
উত্তর : আমাদের দেশে ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ যেকোনো ব্যক্তি রক্ত দিতে পারবেন।
প্রশ্ন : কারা রক্ত দিতে পারবে না?
উত্তর : ডব্লিউএইচও একটি গাইডলাইন দিয়েছে এ বিষয়ে। ক্যানসার, থ্যালাসেমিয়া মেজর এ ধরনের রোগগুলো যাদের থাকবে, তারা রক্ত দিতে পারবে না। যেসব মানুষের ওজন কম, তারা দিতে পারবে না। সাধারণত ৪৫ কেজির ওপরের লোকেরা রক্ত দিতে পারবে।
প্রশ্ন : হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কত হলে সে রক্ত দিতে পারবে?
উত্তর : ১২ দশমিক ৫ গ্রাম পার ডিএল হলে একজন সুস্থ মানুষ রক্ত দিতে পারবে।
প্রশ্ন : কত দিন পর পর রক্ত দেওয়া যাবে?
উত্তর : আমরা সাধারণত বলি চার মাস পর পর । বছরে তিনবার রক্ত দেবে। এটা পুরুষদের ক্ষেত্রে। আর নারীদের ক্ষেত্রে ছয় মাস পর পর। এ হিসাবগুলো স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে। আর জরুরি অবস্থায় তিন মাস পর হতে পারে, যদি নিয়মিত রক্তদাতা না হয়ে থাকে সে।
প্রশ্ন : যারা চার মাস পর পর স্বেচ্ছায় রক্তদান করে তাদের কি কোনো ঝুঁকি রয়েছে?
উত্তর : আসলে আমরা এ জন্য চার মাস ও ছয় মাস কথাটি বলেছি। নারীদের ক্ষেত্রে ছয় মাস পর পর আর পুরুষের ক্ষেত্রে চার মাস পর পর রক্ত দিতে পারবে। এভাবে যদি কেউ দেয়, তার কোনো সমস্যা হবে না। তবে এর চেয়ে বেশি দ্রুত কেউ দিলে তার আয়রনের ঘাটতি হতে পারে।
প্রশ্ন : রক্তদাতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে যাঁরা রক্ত নিচ্ছেন তাঁরা কী করবেন?
উত্তর : আমি আগেই বলেছি, ১৮ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সের একজন সুস্থ মানুষ রক্ত দিতে পারবে। রক্ত দিলে রক্তদাতার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আসলে হতেই পারে। এ ক্ষেত্রে আমরা গ্রুপ ভাগ করি। এর পর আমরা ক্রস ম্যাচ করি। ক্রস ম্যাচ করার পর যদি দেখা যায় মিলে গেছে, তাহলে রক্ত দেওয়া যাবে। তবে যদি দেখা যায় গ্রুপ ঠিক রয়েছে, কিন্তু ক্রস ম্যাচে মেলেনি, তখন আমরা অন্যান্য পরীক্ষাগুলো করতে দিই।
ব্লাড গ্রুপে দুটো পদ্ধতি রয়েছে। মেজর ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম, মাইনর ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম। মেজর ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম হলো এবিইউ ও আরএইচ। সাধারণত মেজর ব্লাড গ্রুপ সিস্টেমেই সবার জানা থাকে।
প্রশ্ন : রক্তদানের ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সেগুলো কী?
উত্তর : আমাদের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন খুব প্রচলিত। হেমোলাইটিক ট্রান্সফিউশন রিঅ্যাকশন হতে পারে। এই ব্লাড গ্রুপের কারণে আরো কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়। অনেক দিন যদি রক্ত নেয়, তাদের কিন্তু আয়রন বেড়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন : রক্তদানের সময় দাতাকে পানি বা তরল খাবার খেতে দেওয়া হয়। এর প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর : হোল ব্লাড ডোনেশন হলে আমরা ৪৫০ এমএল রক্ত নিই। ৩৬ এমএল অ্যান্টিকোয়াগুলেশন থাকে। আসলে যখন দুই গ্লাস পানি পান করল ৫০০ এম এল, ফ্লুইডের ভলিউমের যে ঘাটতিটা সেটি গুণগত না সংখ্যায় প্রতিস্থাপন হয়ে গেল। মোটামুটি দুই দিন পর তার প্লাজমাটা ঠিক হয়ে যায়। তাই তরলের গুরুত্ব রয়েছে।