ত্বকের উজ্জ্বলতা কেন হারায়? বাড়ানোর কৌশল
উজ্জ্বল ও দীপ্তিময় ত্বক সবারই পছন্দ। তবে ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপারই বটে। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে কিন্তু ত্বককে সুন্দর রাখা যায়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা কেন হারায় এবং উজ্জ্বলতা বাড়ানোর কৌশল কী, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫২০তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন।
বর্তমানে তিনি শিওর সেল-এর ডার্মাটোলজি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে করণীয় আসলেই কী?
উত্তর : আমরা আজ খুব চমৎকার একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। দর্শকের সঙ্গে সঙ্গে আমি নিজেও বেশ উচ্ছ্বসিত। দর্শকদের উদ্দেশে প্রথমে বলতে চাই, উজ্জ্বল ত্বক বলতে আমরা কী বুঝি। উজ্জ্বল ত্বক নিয়ে কিন্তু অনেক রকম দ্বিধা থাকে। উজ্জ্বল ত্বক বলতে আমরা সেই ত্বককে বলব, যেই ত্বক সুস্থ-স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত, যে ত্বকে পানির পরিমাণ ঠিকঠাক থাকে, সঠিক আর্দ্রতা বজায় থাকে। কারণ, আর্দ্রতা হারালে ত্বক হয়ে যাবে মলিন। আর ত্বকের যে প্রতিটি কোষ, সেগুলো যেন থাকে সুস্থ। কারণ, সুস্থ কোষই নির্দিষ্ট পরিমাণ মেলানিন তৈরি করবে। কোষগুলো যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়, তখন সে হাইপার অ্যাকটিভ হয়ে বেশি বেশি মেলানিন তৈরি করবে, যা উজ্জ্বলতার পথে বাধা দেবে।
এর পর ত্বকের একটি গভীরে থাকে তৈল গ্রন্থি। এটি সেবাম তৈরি করে, যা প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। কোনো কারণে গ্রন্থিগুলো যদি হাইপার অ্যাকটিভ হয়ে যায়, বেশি বেশি সেবাম তৈরি করে, ত্বক তখন দেখায় চকচকে। অক্সিডাইসড হয়ে যায়। আর সেবাম প্রয়োজনের তুলনায় যদি কম তৈরি করে, সে ক্ষেত্রে ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক। এর মানে সুস্থ ত্বক হলো, ভারসাম্যপূর্ণ ত্বক।
আসলে ফর্সা ত্বক যদি প্রাণহীন থাকে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু আসল সৌন্দর্য থাকছে না।
প্রশ্ন : ত্বকের উজ্জ্বলতা হারানোর কারণ কী?
উত্তর : উজ্জ্বলতা হারানোর কারণের ক্ষেত্রে প্রথমেই আসছে বয়স। বয়স বাড়তে থাকলে ইলাস্টিন ও কোলাজেন কিন্তু কমতে থাকে। এতে ত্বক দৃঢ়তা ও স্থিতিস্থাপকতা হারায়। এরপর কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তখন বেশি মেলানিন তৈরি করে। এতগুলো বিষয় কিন্তু বয়সের সঙ্গে হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক। এর সঙ্গে অনিদ্রা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অপুষ্টিকর খাবার, এগুলো যদি যোগ করি, তাহলে বয়স বাড়ার গতিটাও বাড়বে, সঙ্গে ত্বক কিন্তু হয়ে উঠবে আরো অনুজ্জ্বল।
প্রশ্ন : রোগীরা সাধারণত কোন ধরনের সমস্যা নিয়ে আপনাদের কাছে আসে?
উত্তর : ইদানীং আমি যে সমস্যাগুলো দেখছি, মেয়েদের মাঝে, ২০ থেকে ৪০-এ বয়সের মধ্যে, থুতনির অংশটা একটু কালো। আমি একে বলব, মিস ম্যাচ স্কিন বা আনইভেন স্কিন টোন।
আনইভেন স্কিন টোন কেন হচ্ছে? ত্বকের রঞ্জক পদার্থ মেলানিন, যেটি আমাদের বর্ণ নির্ণয় করে, সেই মেলানিন কিন্তু একটু বেশি তৈরি হয়। এ কারণেই দেখা যাচ্ছে একেক জায়গায় একেক ধরনের ত্বক। কারো হয়তো দেখা যাচ্ছে, সম্পূর্ণ শরীরের রং স্বাভাবিক, তবে মুখটি একটু বেশি কালো। মুখের ওপরই কিন্তু অত্যাচারটা বেশি হয়।
একটি ডাটায় দেখা গেছে, একজন ছেলে প্রতিদিন অন্তত ছয়টি প্রসাধনী ব্যবহার করে এবং একজন মেয়ে ১২টি প্রসাধনী ব্যবহার করে। এদের মধ্যে ৮০ ভাগ প্রসাধনী চলে আসে মুখে। এ কারণেই কিন্তু ত্বকে এত সমস্যা দেখা দেয়।
এখন যেটি বলছি যে থুতনিতে একটু কালো রং, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় অপুষ্টির অভাব। এরা হয়তো আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তস্বল্পতায় ভুগছে বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা হয়তো বেশি বা কম হচ্ছে। কারণ, এগুলোর কারণে কিন্তু ত্বকের টেক্সচার নষ্ট হয়ে যায়।
এরপর ইদানীং আরেকটি বিষয় দেখছি যে অবাঞ্ছিত লোম। এ ক্ষেত্রে মেয়েদের টেসটেসটোরেন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। অনেক সময় প্রসাধনী বেশি ব্যবহারের কারণেও অবাঞ্ছিত লোম হয়। সে ক্ষেত্রে তারা হয়তো বেশি বেশি ওয়াক্সিং, থ্রেটিং, এপিলেটর ব্যবহার করছে।
এরপর আমাদের ত্বকের যে উপরিভাগের লেয়ার, এটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক সময় কিছু কিছু অবাঞ্ছিত লোম একত্র হয়ে কালো কালো গোল গোল দাগ তৈরি করছে।
প্রশ্ন : এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সাধারণ কী কী পদ্ধতি রয়েছে?
উত্তর : সে ক্ষেত্রে রোগীর ইতিহাস, এর সঙ্গে কাউন্সেলিং করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে, এ অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ আমার হঠাৎ করে এসেছে। এটি খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবে না। পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আয়রনের ঘাটতি জনিত রক্তস্বল্পতায় আমরা সাপ্লিমেন্ট দিই। এরপর অবাঞ্ছিত লোম থাকলে আমরা টেসটোসটেরন হরমোনকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসি। কিছু ট্রপিক্যাল ক্রিম ব্যবহার করতে বলি। অবাঞ্ছিত চুলে সঙ্গে একটি চিকিৎসা চলেই আসে, সেটি হলো হেয়ার লেজার।
প্রশ্ন : অনেকে অধৈর্য হয়ে পড়ে চিকিৎসা নিতে, সে ক্ষেত্রে কী করেন?
উত্তর : এ ধরনের ক্ষেত্রে আমরা কাউন্সেলিং করে থাকি। আমরা রোগীকে বোঝাতে থাকি এগুলো এত দিন ধরে হয়েছে, হঠাৎ করে যাবে না। আবার হঠাৎ করে হলেও যেতে সময় লাগবে। এই যেমন বলছি যে অবাঞ্ছিত লোমের জন্য হেয়ার রিমুভাল লেজার, এতে আপনার ২০ ভাগ করে চুল পড়ে। পাঁচটি সেশনে ১০০ ভাগ। সে ক্ষেত্রে আমরা একটি হিসাব করে থাকি।
এরপর থুতনিতে দাগের আরেকটি কারণ মেছতা। এটি কেবল থুতনিতে হয় না, গালের চিকবোন, চিবুক, হাতে, ঘাড়ে হয়। মেছতাকে আমরা খুবই প্রচলিত রোগ বলি। আমরা ডার্মাটোলোজিস্টরা এটি নিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই।
মেছতা মেয়েদের বেশি হয়। ১০ জনের মধ্যে একজন মেয়ের হয়। এর কারণ হলো, অতিবেগুনি রশ্মি। অতিবেগুনি সংস্পর্শে কিন্তু ছেলেমেয়ে সবাই আসে। যারা বাইরে কাজ করছে, তাদের হচ্ছে।
অনেকে ভাবে যে আমি তো সারা দিন ঘরেই বসে রয়েছি, আমি তো অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে আসছি না। সে ক্ষেত্রে যাঁরা রান্না করছেন, আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করছি। সেই ডিভাইস থেকে আলট্রাভায়োলেট রশ্মি আসে। এগুলো কিন্তু আমাদের ত্বকের মেলানিন তৈরিকে বাড়ায়।