অতিমাত্রায় ওষুধ ব্যবহারে কী ক্ষতি হয়?
ওষুধের ভুল ব্যবহার বা অতিমাত্রায় ব্যবহার হরহামেশাই করতে দেখা যায়। তবে এ থেকে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি, এমনকি কখনো কখনো মৃত্যুর ঝুঁকি পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতির বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শারদ।
বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের জেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৮৫তম পর্বে সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : ওষুধের অতিমাত্রায় ব্যবহার বলতে কী বোঝানো হয়?
উত্তর : অনেক সময় দেখা যায়, রোগী চিকিৎসককে না দেখিয়ে নিজে নিজে ওষুধ খায়। ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ খায়। রোগী কী করে? নিজে থেকে মেডিসিন খেতে থাকে। অন্যান্য দেশে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ পাওয়া যায় না। এখানে নিজে গেলেই ওষুধ পাওয়া যায়।
প্রশ্ন : আমরা দেখি একটু পেটে ব্যথা হলেই গ্যাসের ওষুধ খেয়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
উত্তর : কোল্ডড্রিংকস, জাংকফুড, পিৎজা, বার্গার ইত্যাদি খেলে গ্যাস হয় বেশি।রোগী নিজেই তখন গ্যাসের মেডিসিন খেতে যায়। তবে এই ধরনের ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি হবে ভবিষ্যতে। তাই নিজে নিজে গ্যাসের ওষুধ খাবেন না।
অনেক সময় রোগী কোমরব্যথা, ঘাড়ে ব্যথার জন্য ওষুধ খায়। ভালো লাগলে রোগী প্রতিদিন খেতে থাকে। এতে কিডনির ক্ষতি হবে। গ্যাসট্রিক ব্লিডিং হতে পারে।
অনেক সময় দেখা যায়, রোগী বিয়ের আগে মোটা হতে চায়। এতে স্টেরয়েড খায়। স্টেরয়েডের অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এতে উচ্চ রক্তচাপ হয়, ডায়াবেটিস, গ্যাসট্রিক আলসার, চুল পড়া, মোটা হওয়া, সাইকোসিস, অস্টিওপরোসিস হতে পারে। অনেকদিন ধরে খাওয়ার পর বন্ধ করে দিলে, এতে আবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।
অনেক সময় দেখা যায়, ঘুম হয় না বলে অনেকে ঘুমের ওষুধ খায়। অনেক সময় হয়তো ছয়টি একসঙ্গে খায়। এটি ভালো নয়।
প্রশ্ন : অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রেও কিন্তু এমন হয়। এ বিষয়ে কী বলবেন?
উত্তর : হ্যাঁ, এটা দেখা যায়। আবার খাওয়ার পর দুই দিন ভালো লেগেছে, হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়। অন্তত সাত দিন বা ১১ দিন না খেলে কিন্তু কোনো উপকার হয় না। আবার আক্রান্ত হলে কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকটা কাজ করবে না। দর্শকদের জন্য একটি বিষয় বলে দেই, প্রবীণ বয়সে আপনার জন্য কিছু অ্যান্টিবায়োটিক থাকতে হবে।
প্রশ্ন : আর কোনো কোনো ওসুধগুলো ভুলভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে?
উত্তর : বেশির ভাগ মানুষ ব্যবহার করে ব্যথানাশক ওষুধ। এরপর গ্যাসট্রিকের ওষুধ। অনেকে নিজে নিজে মাল্টিভিটামিন খায়। অনেকে আবার ক্যালসিয়াম খায়।
মাল্টিভিটামিন খেলে হাইপার ভিটামিন টক্সিসিটি হয়, নিউরোপ্যাথি হয়। নিজের থাকলে তো আর বাড়তি করে খাওয়ার দরকার নেই। ভালো করে খাবার খেলে, ফল খেলে, সবজি খেলে তো ভিটামিন পাওয়া যায়। তবে ভিটামিন ডি পাচ্ছেন না, তাহলে এটি খেলে ঠিক আছে। কোনো সমস্যা হলে প্রথমে ডাক্তারকে দেখিয়ে ওষুধ খেতে হবে।
প্রশ্ন : অনেকে চিকন হতে গিয়ে ক্র্যাশ ডায়েট করছে আর অ্যান্টি ডায়াবেটিক ওষুধ খাচ্ছে। এটি সম্পর্কে আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
উত্তর : এখন দেখি, রোগী নিজেই ওজন কমাতে চায় ক্র্যাশ ডায়েট করে। খাবার খায় না, অ্যান্টি ডায়াবেটিস মেডিসিন খায়। হঠাৎ করে সুগার কমে যায়। অ্যান্টি ডায়াবেটিক ওষুধ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া ভালো কিছু নয়। শরীরের ধীরে ধীরে ওজন কমানো দরকার। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস করতে হবে।
৩০ ভাগ মানুষ অফিসে বসে কাজ করছে। ব্যায়াম করা দরকার, দৌঁড়ানো দরকার। না হলে বাসায় দড়ি লাফ খেলতে পারেন। চিনি এড়িয়ে যাবেন।
প্রশ্ন : অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে ভেবে নিজে নিজে ওষুধ শুরু করে, আবার অনেকের উচ্চ রক্তচাপ হয়েছে বলে ওষুধ খেতে দিয়েছে, সেটি খাচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?
উত্তর : ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড ইত্যাদি ওষুধের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ খেতে হবে। গাড়ি রয়েছে। গাড়িতে পেট্রল না দিলে এটি কি চলবে? রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মতো মেডিসিন নিয়মিত খেতেই হবে। আর উচ্চ রক্তচাপ প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে ডায়েটের মাধ্যমে আপনার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
প্রশ্ন : শিশুদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, একটু জ্বর এলে হয়তো আমরা দ্রুত ব্যথানাশক ওষুধ দিই। তাদের ক্ষেত্রেও তো সমস্যাগুলো একই?
উত্তর : ছোট বাচ্চা তো নিজে বলতে পারে না, ব্যথা হয় কি না। সাত-আট দিন পরে আগের ওষুধ পুনরায় ব্যবহার করবেন না। ফেলে দেন। গুগলে দেখে নিজেই চিকিৎসক হয়ে যাবেন না। অর্ধেক জ্ঞান সবসময়ই বিপজ্জনক।
প্রশ্ন : জ্বর হলে অনেক সময় দেখা যায়, মা-বাবা নিজেই চিকিৎসককে বলেন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবার কাছে আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
উত্তর : জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ভাইরাল হলে অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার নেই। এটি প্যারাসিটামল খেয়ে ভালো করা যায়। এ ছাড়া প্রচুর তরল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ভাইরাস জ্বরে অ্যান্টি বায়োটিক কাজে আসে না। একটু বৃষ্টি হলে ছোট বাচ্চার হয়তো জ্বর আসে, কাশি- সর্দি হতে পারে। আপনি জানেন না কেন হয়েছে। এ জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একটি সিআরপি, ব্লাড কাউন্ট করলে ভালো। তিন দিন পর জ্বর থাকলে ব্লাড কালচার করা দরকার।
কী কারণে জ্বর হয়েছে, সেটি বের করে প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।
প্রশ্ন : সার্বিকভাবে কী পরামর্শ থাকবে?
উত্তর : আমি দর্শকদের শেষ একটি অনুরোধ করি, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ ফার্মাসি থেকে কিনবেন না। কিছু হলে প্রথমে আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এটি মূলমন্ত্র। বাসায় নিজে নিজে কোনো ওষুধ খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে তো কিছু করার থাকবে না। সচেতনতাটা জরুরি। প্রতিটি ওষুধের কিন্তু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করা খুব জরুরি। মেডিসিনের চিকিৎসক খুব জরুরি। প্রথমে আপনি ফিজিশিয়ানের কাছে যান।