বিশ্ব লুপাস দিবস
চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত যেতে হবে
আজ ১০ মে। বিশ্ব এসএলই বা লুপাস দিবস। দিবসটি নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২৩৮৩তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মিনহাজ রহীম চৌধুরী। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : এসএলই দিবসটি আমাদের দেশে কীভাবে পালিত হচ্ছে?
উত্তর : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ে রিউমাটোলজি বিভাগ রয়েছে একটি। এটি আমাদের স্বতন্ত্র একটি বিভাগ। এর পক্ষ থেকে আমরা লুপাস দিবসটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করছি। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন, বাংলাদেশে লুপাস রোগীদের নিয়ে একটি ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে। এই ফাউন্ডেশন আমাদের প্রতিবছর এই বিষয়ে সহযোগিতা করে। এই দিন বাংলাদেশে যত লুপাস রোগী আছেন, তাদের আমন্ত্রণ জানাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং এই রোগ নিয়ে তারা যেন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন, সেই বিষয়ে কাজ করি। আমরা তাদের প্রবন্ধ শুনাই, প্রশ্নের বিভিন্ন রকম উত্তর দিই। এভাবে আমরা এই দিবসটিকে পালন করার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন : এসএলই বা লুপাস রোগটি বলতে আসলে কী বুঝি?
উত্তর : বাতব্যথা-জাতীয় রোগগুলোকে নিয়ে মেডিসিনের যে বিভাগ কাজ করে, এটি হলো রিউমাটোলজি। রিউমাটোলজি বিভাগের অন্তর্ভুক্ত প্রায় ১২০টি রোগ রয়েছে। যদি ছোট রোগগুলোকে আমরা ধরি তাহলে ছয়শোর ওপরে রোগ আছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে এসএলই বা লুপাস এরিথোমেটোসাস। আমরা অনেক সময় লুপাস নামেও ডেকে থাকি।
রোগটিকে এক কথায় বলা যায় একটি শক্তিশালী রোগ। এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। আমি যদি অতীতে ফিরে যাই, আজ থেকে ২০-৩০ বছর আগে। এই রোগগুলোর তেমন কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা সারা পৃথিবীতেই ছিল না। এখন কিন্তু আর সেই অবস্থাটা নেই। এখন প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি শুরু হচ্ছে।urgentPhoto
প্রশ্ন : কী দেখে বোঝা যাবে রোগীর এসএলই হয়েছে?
উত্তর : এটি ছেলে ও মেয়ে দুজনেরই হতে পারে। তবে, মেয়েদের রোগটি অনেক বেশি হয়। সাধারণত এটা ১১ থেকে ৩০ বছর বয়সের মেয়েদের শুরু হয়। তবে যেকোনো বয়সেই এটি হতে পারে।
লক্ষণগুলোর ক্ষেত্রে মুখের চামড়ায় একধরনের লালচে দাগ হয়। সঙ্গে সঙ্গে অনেক সময় মুখের ভেতরে কিছু ঘা হয়। দেখা যায়, রোগীদের চুল অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছে। শরীরের গিঁটগুলোতে অনেক সময় ব্যথা হয়। মাংসপেশিতে ব্যথা হয়। একধরনের দুর্বলতা শরীরে চলে আসে। এগুলো হলো খুব সাধারণ কিছু লক্ষণ।
আর এর বাইরেও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করতে পারে। ভেতরের পদ্ধতিকে যখন আক্রমণ করে তখন অবশ্যই, রোগটি অনেক জটিল হয়ে যায়। কিডনিকে আক্রমণ করতে চায়, মস্তিষ্ককে আক্রমণ করতে চায়। হার্টকে আক্রমণ করতে চায়। ফুসফুসকে আক্রমণ করতে চায়। এই জায়গাগুলোকে যখন আক্রমণ করে, তখন রোগীদের জন্য বেশ সমস্যা তৈরি হয়। সেই বিপদ আমরা যদি শক্ত হাতে সমাধান করতে পারি, এই রোগীরই হয়তো দীর্ঘদিন আর কোনো সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে না। সেই জন্য আমরা বলি, এই রোগটির ক্ষেত্রে সচেতনতা অত্যন্ত দরকার। রোগীদেরই সচেতন করতে হবে রোগটি বিষয়ে।
প্রশ্ন : কী কারণে আসলে রোগটি হচ্ছে সেটি কি জানা গেছে?
উত্তর : প্রথম কথা হলো আমাদের শরীরে একটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আছে। রোগ প্রতিরোধশক্তির একটি দায়িত্ব হচ্ছে আমাদের শরীরকে পাহারা দেওয়া বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে।
এই রোগ প্রতিরোধ পদ্ধতি এসব রোগীর বেলায় হঠাৎ করে পাগলামো শুরু করে। পাগলামো করে ঠিক রোগকে প্রতিরোধ করবে তো দূরের কথা, দেখা যায় সে তার নিজের শরীরকে আক্রমণ করে। কেন এই পাগলামো করে এটা এখনো নিখুঁতভাবে জানা যায়নি। কিছু কিছু বিষয়ে ধারণা করা হয় যে এসব কারণে হতে পারে। এই পাগলামো আচরণটাই রোগীদের বিপদে ফেলে দেয়।
প্রশ্ন : কোন অবস্থায় একজন বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত মনে করেন আপনি?
উত্তর : আসলে এসএলই রোগীদের সব সময়ই চিকিৎসকের কাছে থাকা ভালো। কেননা এই রোগে রোগী হয়তো আজ খুব ভালো আছেন, তবে আগামীকাল যে এই সমস্যা আসবে না সেটি বলা যায় না। লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
অনেক রোগীই হয়তো প্রথমে একটু জ্বর নিয়েই আসেন। শরীরে একটু একটু ব্যথা, গিঁটগুলোতে ব্যথা করছে। এরপর হয়তো অন্যান্য উপসর্গ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেল। এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার। চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত করবেন।
প্রশ্ন : কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়?
উত্তর : সাধারণত রক্তের খুব সাধারণ কিছু পরীক্ষা রয়েছে। যেমন : আমরা বলি, সিভিসি ইএসআর। আর এই লক্ষণগুলো রোগীদের ক্ষেত্রে থাকলে আমরা এনএ, ডিএসডিএনএ পরীক্ষা করি।
আমাদের শরীরে যে কোষ আছে, এর মধ্যে একটি অংশ রয়েছে নিউক্লিয়াস, তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু অ্যান্টিবডি এসব রোগীদের শরীরে অদ্ভুতভাবে প্রকাশ পায়। আমরা রোগীর প্রস্রাব পরীক্ষা করি। কিডনিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটি বোঝার জন্য আমরা অনেক সময় এক্সরে করি। আরো কিছু বিশেষ এক্সরে করা হয় অবস্থা বুঝে।
প্রশ্ন : পরীক্ষা করার পর আপনাদের চিকিৎসা পদ্ধতিটা কিসের ওপর নির্ভর করে?
উত্তর : একটি ওষুধ রয়েছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকিন। আসলে এই রোগকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা হয়। মৃদু আক্রমণ, মাঝারি আক্রমণ, এমনকি মৃদু থেকে তীব্র আক্রমণ- সব ধরনের রোগীদেরই কিন্তু আমরা এই ওষুটাকে খেতে বলি সব সময়। তারা একে চালিয়ে যাবে। কখনো বন্ধ করবে না। বিভিন্ন পরীক্ষাগুলোতে দেখা গেছে এই ওষুধটি ভীষণ কার্যকরী।
প্রশ্ন : ওষুধটি কতদিন পর্যন্ত চালাতে হয়?
উত্তর : প্রায় সারা জীব্নই চালাতে হয়। আমরা সব সময়ই বলি কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধটি বন্ধ করার দরকার নেই।
এসএলই রোগীদের একটি সুবিধা জায়গা আছে। সেটা হলো, এই রোগটি বছরের পর বছর ধরে কোনো রকম উপসর্গ ছাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যখন তীব্র আক্রমণ হয়, তখন খুব দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আমরা বলি, ফলোআপে আসতে হবে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ক্লিনিক আছে, এসএলই ক্লিনিক। সেখানে আমরা রোগীদের চিকিৎসা দিই। পাশাপাশি অন্য হাসপাতালগুলোতেও এ ধরনের মেডিকেল সেন্টার আছে। রোগীদের অবশ্যই সচেতন হয়ে এসব চিকিৎসা নিতে হবে।