সিরাজগঞ্জে যৌতুকের জন্য স্ত্রীর চুল ও ভ্রু কর্তন
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যৌতুকের টাকা না পেয়ে গুলনাহার পারভীন মিনু (৩৫) নামে এক গৃহবধূকে শারীরিক নির্যাতনের পর তার মাথার চুল ও ভ্রু কেটে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের সময় হাত-পা ধরে অনুনয়-বিনয় ও কান্নাকাটি করার পরও অমানুষিক নির্যাতন থেকে রক্ষা পাননি ওই গৃহবধূ। খবর পেয়ে ভুক্তভোগী মিনুর পরিবার মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আজ রোববার সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করে।
মিনুর পরিবার জানায়, প্রায় ১৩ বছর আগে শাহজাদপুর উপজেলার খাস সাতবাড়িয়া গ্রামের মেহেদি হাসান সুজনের (৪৩) সঙ্গে তাড়াশ উপজেলা সদরের মেয়ে গুলনাহার পারভীন মিনুর বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের সংসারে দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই স্বামী সুজন যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী মিনুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। এ ছাড়া মিনু সুন্দরী হওয়ায় তাকে বিভিন্ন সময় সন্দেহও করেন সুজন।
মিনুর দরিদ্র পরিবারের পক্ষে যৌতুকের টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হলে নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার গ্রাম্য শালিস হয়েছে। তবুও থামেনি নির্যাতন। পরে নির্যাতন সইতে না পেরে ২০১৮ সালে বাবার বাড়ি চলে যান মিনু। পরে ছোট ছোট বাচ্চাদের কথা বিবেচনা করে আবার তাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নির্যাতিত মিনুর মা আনোয়ারা খাতুন জানান, বিয়ের সময় সুজনকে যৌতুক হিসেবে নগদ এক লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার, খাট, আলমারিসহ প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার মালামাল দেওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ গুলনাহার পারভীন মিনু জানান, বিয়ের পর থেকেই বাবার বাড়ি থেকে কখনও নগদ টাকা, কখনো মোটরসাইকেল, কখনো মোবাইল ফোন এনে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। এ ছাড়া অন্য কারও সাথে কথা বললেই সন্দেহের চোখে দেখে বিভিন্ন সময় তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালাত স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।
অভিযুক্ত মেহেদি হাসান সুজন বলেন, আমার স্ত্রী এক প্রবাসীর সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত। প্রায় সময় ভিডিও কলে কথা বলে। তাই আমি রাগে এ ঘটনা ঘটিয়েছি।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদ মাহমুদ খান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রোকন উদ্দিন বলেন, গুলনাহার পারভীন মিনুর সারা শরীরে নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। চিকিৎসা চলছে। তবে নির্যাতনের ফলে মেয়েটি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত।