সোহেল চৌধুরীকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে হত্যা : র্যাব
বনানীর আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় অবস্থিত ট্রাম্পস ক্লাবের ঠিক পাশেই ছিল সে সময়ে বনানীর সবচেয়ে বড় মসজিদ বনানী জামে মসজিদ। ট্রাম্পস ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারা রাত বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। নিহত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বনানী মসজিদের কমিটি নিয়ে বারবার ট্রাম্পস ক্লাবের এ ধরনের অশ্লীলতা বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। তাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই, আশীষ চৌধুরী ও বান্টি ইসলাম। এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনকে। ইমন ও তার লোকজন মিলে চিত্রনায়ক সোহেলকে গুলি করে হত্যা করে। ২৪ বছর পর গতকাল মঙ্গলবার মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আশীষ রায় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তার বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আজ বুধবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘বনানীর আবেদীন টাওয়ারের অষ্টম তলায় অবস্থিত ট্রাম্পস ক্লাবের পাশে ছিল সে সময়ের বনানীর সবচেয়ে বড় মসজিদ বনানী জামে মসজিদ। ট্রাম্পস ক্লাবে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে সারা রাত বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। নিহত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী বনানী মসজিদের কমিটি নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবের এ ধরনের অশ্লীলতা বন্ধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। এ নিয়ে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এরপর তিনজন মিলে সোহেলকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। সেটার দায়িত্ব দেওয়া হয় ইমনকে।’
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর ভোর ৩টার দিকে বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বড় ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৫৯। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই ৯ জনের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশ আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আশীষ রায় চৌধুরী গুলশানের যেই ফ্ল্যাটে আত্মগোপনে ছিলেন সেটি তাকে ভাড়া করে দেন স্বনামধন্য একটি হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। গুলশানের ‘আ’ অদ্যাক্ষরের পাঁচ তারকা ওই হোটেলের এমডির সঙ্গে আশীষের সুসম্পর্ক ছিল। সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর কানাডায় পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন আশীষ। এ জন্য ৭ এপ্রিলের একটি ফ্লাইটের টিকিটও কেটেছিলেন তিনি।
গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আশীষের কাছ থেকে ২২ বোতল বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, ১৪ ক্যান বিয়ার ও সিসা সরঞ্জাম, একটি আইপ্যাড, ১৬টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, দুটি আইফোন ও দুই লাখ টাকা ও নেশা সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। এ ছাড়া আটক হন উঠতি এক মডেলসহ দুই নারী। রাতেই এই তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হয় র্যাব সদরদপ্তরে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সোহেল হত্যার ২৪ বছর পর আশীষের বিরুদ্ধে আদালত গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অভিযোগপত্রে তিনি প্রথম আসামি। পরোয়ানার আরও এক মাস পর গত ২৮ মার্চ সেটি হাতে পায় র্যাব। এরপর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গুলশানের একটি ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’