নিরাপত্তায় ঘেরা রমনা পার্ক ছিল উৎসবমুখর
রাজধানীর মিন্টো রোডের কোণে রয়েছে রমনা পার্কের একটি প্রবেশপথ। সে পথ দিয়ে পার্কে ঢোকার আগে পুলিশের এক সদস্য প্রবেশপথটি দেখিয়ে বললেন, ‘এ পাশ দিয়ে ঢুকুন।’
ওই পথে ঢুকতে গেলে পাশেই একটি ছাউনি (বিশ্রামাগার) রয়েছে। সেখানে চোখ পড়তেই দেখা গেল—অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য বসে আছেন। এ বসে থাকা তাঁদের দায়িত্ব পালনেরই অংশ। অথচ, পথের আশপাশে ৫০ জন সাধারণ মানুষও নেই।
এ দৃশ্য দেখে এক পুলিশ সদস্যের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘পার্কের ভেতরের অন্তত অর্ধেক লোক আপনারা না কি?’ এমন প্রশ্নে তিনি হাসতে হাসতে বলে উঠলেন, ‘সাদা পোশাকের হিসাব তো আপনি রাখেনই না!’
দায়িত্বরত ওই পুলিশ সদেস্যের কথায় ইঙ্গিত পাওয়া গেল, নিরাপত্তার চাদরে কীভাবে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো রমনা পার্ক। সেজন্যই গত মঙ্গল ও বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) জানিয়েছিল, রমনা পার্ক সংলগ্ন ও ঢাবি এলাকার ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে, টহলে থাকবে, নজরদারি করবে। হয়েছেও তাই।
এত সবকিছুর মূল লক্ষ্য হচ্ছে—নির্বিঘ্নে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করা। রমনা পার্ক এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তায় এবারের বর্ষবরণ করতে হয়েছে মানুষকে। ছায়ানটের অনুষ্ঠান কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া মানুষকে তল্লাশির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। কারও চলাফেরা সন্দেহজনক মনে হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
পার্কের একটু ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, অনেক মানুষ। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত, নানা বয়সি মানুষ এখানে ভিড় করেছে। শিশুরা খেলাধুলায় ব্যস্ত। বড়রা ছোটদের আনন্দ দিতে সময় পার করছেন। অন্যদিকে, বন্ধুরা মিলে সানন্দে লাল-সাদা শাড়ি-পাঞ্জাবি পরিধান করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সবাই মিলে বরণ করছেন নববর্ষ।
রমনা পার্কের মধ্যে কিংবা আশপাশের এলাকায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। এ ছাড়া র্যাব সদস্যেরাও কাজ করছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দিয়ে ঘেরা পুরো এলাকা। রমনা পার্কের সব স্থানেই পুলিশ দেখা গেছে। তবে, দুপুর দেড়টার পর থেকে সদস্যেরা একটু ঢিলেঢালা মনোভাবের হয়ে যান। কারণ, দুপুর ২টা পর্যন্তই নির্ধারিত ছিল সেখানকার সময়সীমা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! কোনো অসুবিধা ছাড়াই আমরা আমাদের প্রাণের উৎসব শেষ করতে পেরেছি। যেকেনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের পুলিশ সদস্যেরা সব সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বলেই কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি আমাদের।’