হোসেনি দালানে বোমা হামলা : উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষা
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে হোসেনি দালানে বোমা হামলার ঘটনায় বিচারিক আদালতে দণ্ড পাওয়া দুই আসামি উচ্চ আদালতে জেল আপিল করেছেন। অথচ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এখনো করা হয়নি আবেদন। ফলে কবে এ মামলার রায় কার্যকর হবে—তা নিয়ে চলছে আলোচনা। আজ আশুরার দিনে সেই আলোচনা আরও মুখর হয়ে ওঠে।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে হোসেনি দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর রাতে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই বোমা হামলার ঘটনার প্রায় সাত বছর পর বিচারিক আদালতের রায় ঘোষণা করা হয়। এতে দুই আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি ছয়জনকে খালাস দেন আদালত।
এরপর নিয়ম অনুযায়ী দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আপিল করেছেন। আপিল শুনানির জন্য মামলার রেকর্ড উচ্চ আদালতে এসেছে। তবে, খালাস পাওয়া ছয়জন বিষয়ে এবং দণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ড বাড়াতে আপিল করেনি রাষ্ট্রপক্ষ।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘বোমা হামলার ঘটনায় মামলাটিতে আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে পারায় দুই আসামির সাজা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ছয়জন খালাস পেয়েছেন।’
অন্যদিকে, আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামির মধ্যে কবির হোসেনকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও আরমানকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুজনকে আলাদা আলাদা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে আসামিদের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করে কোনো প্রকার আপিল আবেদন করা হয়নি। তবে আসামিদের জেল আপিল করা হয়েছে।’
এর আগে চলতি বছরের ১৫ মার্চ পুরান ঢাকার হোসেনি দালানে বোমা হামলার ঘটনায় করা মামলার রায় দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান।
কারাদণ্ড পাওয়া দুই আসামির একজন হলেন আরমান ওরফে মনির। তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর কবির হোসাইন ওরফে রাশেদ ওরফে আশিফকে দেওয়া হয় সাত বছরের কারাদণ্ড।
খালাস পাওয়া আসামিরা হলেন- ওমর ফারুক মানিক, হাফেজ আহসান উল্লাহ মাহমুদ, শাহজালাল মিয়া, চান মিয়া, আবু সাঈদ রাসেল ওরফে সোলায়মান ওরফে সালমান ওরফে সায়মন এবং রুবেল ইসলাম ওরফে সজীব ওরফে সুমন।
২০১৫ সালের ওই বোমা হামলার ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় এসআই জালাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করে চকবাজার থানা পুলিশ। পরে এর তদন্তভার ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়।
তদন্ত শেষে ডিবি দক্ষিণের পুলিশ পরিদর্শক মো. শফিউদ্দিন শেখ ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে ১০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর মামলাটি ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়।
২০১৭ সালের ৩১ মে ১০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর পর ওই আদালতে মামলার বাদী মো. জালাল উদ্দিন সাক্ষ্য দেন। এরপর ২০১৮ সালের ১৪ মে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বদলি হয়। বদলি হওয়ার পর থেকে পায় বিচারে গতি। ট্রাইব্যুনালে আসার পর ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।