আ.লীগের ২০২৩ ছিল যেমন
দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। দেশের ইতিহাসে একটানা এতো সময় ধরে কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকেনি। যদিও একাদশ জাতীয় সংসদের শেষ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রস্তুতির ২০২৩ সাল ক্ষমতাসীন দলের জন্য ছিল নানা চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ। দেশীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মহলের চাপ ছিল প্রধান আলোচনায়। যদিও সেগুলো কাটিয়ে রাজনীতির ময়দানে সোচ্চার দেখা গেছে তাদের। বছরের শেষাংশে নিজেদের প্রার্থী মনোনয়ন, জোট মনোনয়ন নিয়ে ব্যস্ত সময় কেটেছে, আর এখন কাটছে নির্বাচনি প্রচারে। অন্যদিকে, সরকারে থেকে বছরজুড়ে নানা উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন, উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে সভা-সমাবেশ-আনন্দ মিছিলে সরব ছিলেন দলের নেতাকর্মীরা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বছরের শুরু থেকেই নানা পরিকল্পনা নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত প্রার্থী বাছাই করার প্রক্রিয়া শুরু করে, যা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করে তারা, যা চলে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাচাই-বাছাই ১৮ ডিসেম্বর নিজেদের প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করে দলটি।
সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮টিতে প্রার্থী মনোনীত করেছে। কেবল কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন দুটিতেই তাদের কোনো প্রার্থী নেই। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাও দেখা গেছে। কয়েকজন উচ্চ-পদস্থ দলীয় সদস্যের মনোনয়ন মেলেনি। দলের কিছু সদস্য নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কথিত পক্ষপাতিত্ব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেছেন, স্বার্থের খাতিরেই নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের অন্যদের তুলনায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ এবার ২২ নারী প্রার্থীকে মনোনীত করেছে। আগের নির্বাচনের তুলনায় নারী প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে। এমনকি, দলে দেখা গেছে কিছু নতুন মুখও। সংসদে নতুন শক্তি যোগাতেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে তরুণ প্রার্থীদের। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ তাদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় বিজয়ী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনাসহ অভিজ্ঞ প্রার্থীদের মনোনয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
দেশব্যাপী কর্মসূচি
সারা বছর ধরে আওয়ামী লীগ সারাদেশে বিভিন্ন র্যালি, আলোচনা সভা, সভা-সমাবেশ করেছে। দলীয় কর্মীদের একত্রিত করা, শেখ হাসিনা সরকারের অর্জনের প্রচার ও বিরোধীদের সমালোচনার মোকাবিলার জন্যই এসবের আয়োজন করা হয়। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করেছে। ১৮ জুলাই বিএনপি এবং তার সহযোগীদের দেশব্যাপী শান্তি ও উন্নয়ন মিছিল করেছে।
এমনকি, ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপির ১৫ দিনের কর্মসূচির ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ সারাদেশে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেয়। দলটি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন সমাবেশ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে গেছে। এমনকি, আলোচিত ২৮ অক্টোবরও বিএনপির পর আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সভার আয়োজন করে।
বিএনপির কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া
২০২৩ সালে বিএনপির তৎপরতার পাল্টা জবাব দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগকেও। বিশেষ করে সবশেষ কয়েক মাসে দুদলের মধ্যে সংঘর্ষ ও উত্তেজনার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির আইন বিঘ্নিত কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। সভা-সমাবেশে নিজেদের বক্তৃতা বিএনপির নীতি ও নেতৃত্বের সমালোচনাও করেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
উন্নয়ন প্রকল্প
আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং সামাজিক নিরাপত্তার মতো বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে মনোযোগ দিয়েছে। চলতি বছরে পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেট এক্সপ্রেসেরমতো অনেক প্রকল্প শেষ হয়েছে। সেগুলো উদ্বোধনও হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার ভারত, চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। তবে, নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ও মার্কিন দূতাবাসের ভিন্নমতকে ঘিরে কিছুটা টানাপোড়েনও দেখা গেছে। তবে, দেশের সংবিধান থেকে এক চুলও নড়েনি ক্ষমতাসীন দলটি।