৫৩ দিন পর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে বন্ধ, ঈদুল আজহা এবং গ্রীষ্মকালীন ছুটিসহ মোট ৫৩ দিন পর আবারও ক্লাস শুরু হয়েছে। আজ রোববার (২৩ জুন) থেকে ক্লাসে ফিরতে পেরে আনন্দিত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী।
গত শুক্রবার (২১ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞাপ্তিতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনেরও ঘোষণাও দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিক্ষকদের দাবি আদায়ের জন্য আগামী ২০ জুলাই পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিয়েছে শিক্ষক সমিতি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমরা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মেনে আজ থেকে সশরীরে ক্লাস নিচ্ছি। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে অনলাইনে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে হলেও তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব। এ ছাড়া আমাদের কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে।’
দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে খুশি শিক্ষার্থীরাও। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় রয়েছে সেশন জটের চাপও।
শিক্ষার্থদের প্রতাশা, দীর্ঘ এ বন্ধের কারণে তাদের পড়ালেখায় যে ক্ষতি হয়েছে শিক্ষকরা আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন। প্রতি শনিবার অনলাইন ক্লাসের যে রুটিন রয়েছে, সেসব ক্লাস নিয়েমিত নিলে শিক্ষার্থীদের উপকার হবে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ভোগান্তিতে না পড়তে হয় সে প্রত্যাশাও করেন শিক্ষার্থীরা।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া সাইমুম বলেন, ‘দীর্ঘ বন্ধের কারণে আমরা পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের প্রত্যাশা শিক্ষকরা আমাদের আর পিছিয়ে রাখবেন না। ছয় মাসের যে সেমিস্টার আশা করি, চার মাসের মধ্যে শেষ করে দেবেন, যাতে আমরা পিছিয়ে না পড়ি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক সেটাই আমার চাওয়া। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য শিক্ষকরা যত্নশীল হবেন বলে আশা করি। এ ছাড়া শিক্ষকদের দাবিগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। খুব শিগগিরই তাদের যৌক্তিক সব দাবি পূরণ করা হবে।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি তাদের সাত দফা দাবি আদায়ে গত ১৩ ও ১৪ মার্চ প্রথম দফায় ক্লাস বর্জন করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ১৯ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে। ঈদুল ফিতরের বন্ধ শেষে তৃতীয় দফায় ২১ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক সমিতি।
সর্বশেষ ২৯ এপ্রিল শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। উদ্ভূত পরিস্থিতি সহনীয় করতে ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ৯৩তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ৫ জুন অনুষ্ঠিত ৯৫তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সেই ঘোষণা অনুযায়ী, ৬ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসশনিক কার্যক্রম চলে। পূর্বনির্ধারিত ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন বন্ধের পর আজ ২৩ জুন থেকে ৫৩ দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়।