সরকারের কাজের গতি, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে অসন্তোষ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছেন৷ তার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মুখে দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সরকারের যাবতীয় কাজে মন্থর গতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে৷
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তী সরকার গত দুই মাসে তাদের কাছে দেশের মানুষের যে প্রত্যাশা, তা পুরণ করতে পারেনি৷ তাদের কাজের গতিতে আমরা মোটেই সন্তুষ্ট নই৷ আমরা আজ (শুক্রবার) দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সমাবেশে যখন বক্তৃতা করছিলাম, তখন আমাদের কথা শুনে সাধারণ মানুষ হাততালি দেন৷ এখান থেকেই বোঝা যায়, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা তারা দুই মাসে পূরণ করতে পারেনি৷’
রুহিন হোসেন প্রিন্স কথা, ‘‘আমাদের শনিবারের সংলাপে মাত্র ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে৷ আসলে এই সময়ে সংলাপ হয় না৷ এর আগে যেটা হয়েছে, সেটাও দেখা-সাক্ষাৎ মাত্র৷ যে উপদেষ্টা আমাকে ফোন করেছিলেন, তার কথায় মনে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা এবং পূজার সম্প্রীতি নিয়ে কিছু কথা তারা বলতে চান৷ কিন্তু আমরা চাই পূর্ণাঙ্গ সংলাপ, যাতে নির্বাচন ও সংস্কারের রোডম্যাপ চূড়ান্ত হয়৷”
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আজাদ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘শনিবার বেলা আড়াইটায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শুরু হবে৷ সংস্কার কমিটিগুলো এবং সংস্কার নিয়েই মূলত এই সংলাপ৷ এই সংলাপ যে শনিবারেই শেষ হবে, তা না-ও হতে পরে৷ এটা ধারাবাহিকভাবে হতে পারে৷ কারণ, সব দলের সঙ্গে তো আর শনিবার সংলাপ করা যাবে না৷ এর আগেও দুইবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়েছে৷”
জানা গেছে, শনিবার ৯টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে সংলাপে ডাকা হয়েছে৷ তাদের মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, বাম রাজনৈতিক দল ছাড়াও হেফাজতে ইসলামও রয়েছে৷ যারা আমন্ত্রণ পেয়েছেন, তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি দলকে ৩০ মিনিট করে সময় দেওয়া হয়েছে৷
জাময়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘‘সরকারের প্রায় দুই মাস হলো৷ কিন্তু সরকার এখনো কোনো সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারেনি৷ ছয়টি কমিশন গঠন করেছে মাত্র৷ সরকারের আরো দ্রুত এগোনো দরকার এবং সংস্কারের ধাপ অতিক্রম করেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা দরকার৷”
মতিউর রহমান আকন্দ আরও বলেন, ‘‘আমরা যৌক্তিক সময় সরকারকে দিতে চাই৷ তবে আলোচনার মাধ্যমে সেটা আমরা নির্ধারণ করতে প্রস্তাব দেবো৷ আমরা মনে করি, এই সরকারের কাজে আরেকটু গতি দরকার৷”
এই সরকার কতদিনের মধ্যে নির্বাচন ও সংস্কার করবে সেটাই এখন আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ সেনাপ্রধান ১৮ মাসের একটা কথা বলেছেন৷ সম্পাদকরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দুই বছরের কথা বলেছেন৷ আবার জনমত জরিপে দেখা গেছে দুই থেকে আড়াই বছর৷ কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়নি৷
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘‘আসলে রোডম্যাপটি জরুরি৷ আমার ব্যক্তিগত মত হলো: আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের জন্য তিন মাস সময় পেতো৷ কিন্তু এবার তো একটি নতুন পরিস্থিতি৷ তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সবকিছু স্থিতিশীল করতে ছয় মাস, সংস্কারের জন্য ছয় মাস আর নির্বাচনের জন্য তিন মাস- এই ১৫ মাস৷ আরো তিন মাস যদি ‘গ্রেস পিরিয়ড' দেওয়া হয়, তাহলে ১৮ মাসের একটা হিসাব তো আমরা পাই৷”
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘‘আসলে এই সরকারের উচিত ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক দলসহ সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে কাজ এগিয়ে নেওয়া, একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা৷ আমরা সংলাপে সেটাই বলবো৷ আর সরকারের কাছে মানুষের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ আরো যে প্রত্যাশা ছিল, সেগুলো তারা এখনো সঠিকভাবে গুছিয়ে উঠতে পারেননি৷ সর্বোচ্চ তিনটি মন্ত্রণালয় গুছিয়ে উঠেছে৷ নিয়োগ নিয়ে এরই মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অবস্থা খুবই খারাপ৷ সরকার এখনো সন্তোষজনকভাবে এগোতে পারছে না৷”
জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি মনে করেন, ‘‘সরকারকে আগে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷ এটা করতে না পারলে সারা দেশে ছোট ছোট সরকার তৈরি হবে৷ সরকার সংস্কারে দেরি করছে, এতে আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে৷ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ছে৷ আমরা সংলাপে তাই রোডম্যাপ চাইবো৷”
সংস্কার ও যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের যে দাবি আছে, সেগুলো সরকারকে পূরণ করতে হবে৷ তবে তার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘সরকার অবশ্যই নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ করবে৷ এটা না করলে তারা কী করতে যাচ্ছে তা পরিষ্কার হবে না৷ আর সংস্কার প্রক্রিয়া তারা শুরু করে যাবে৷ নির্বাচিত সরকার এসে সেই সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করবে৷”
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স আরও বলেন, ‘‘সরকার, রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনী, স্টেক হোল্ডার সবার সহযোগিতা ও আলোচনার মধ্য দিয়ে ১৮ মাস নয়, তার আগেই সংস্কার ও নির্বাচন করা সম্ভব৷ সরকারের কাজে গতি বাড়াতে হবে৷ এটা সবার সরকার৷ এই সরকারকে আমরা সমর্থন করি৷ কিন্তু তাদের জনমনে স্বস্তিও দিতে হবে৷”