ইফতার-সেহরির পর চুরির চাকরি!
ইফতার ও সেহরির পর নামাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। আর সেই সময় বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে চোর। মাথায় থাকে টুপি, গায়ে পাঞ্জাবি। সুযোগ বুঝে মূল্যবান জিনিস নিয়ে সটকে পড়ে।
এমন নয়জন চোরকে আটক করেছে রাজধানীর মতিঝিল থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ওই চোরদের ছয় থেকে সাত হাজার টাকা বেতনে রমজান মাসে চুরির জন্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন শিশু-কিশোর রয়েছে।
এই নিয়ে আজ মঙ্গলবার রাত ৮টায় মতিঝিল থানায় সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমান।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন মো. সোহেল (৩৫), মো. হেলাল (১৯), মো. হেলাল (১৮), মো. মানিক রহমান (১৮) ও মো. আরাফাত (১৮)। অন্য চারজনের বয়স ১১ থেকে ১৫ বছর। এর মধ্যে সোহেল এই চক্রের দ্বিতীয় প্রধান বা সর্দারের ডান হাত বলে পুলিশ জানিয়েছে।
অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমান জানান, আটক ব্যক্তিরা পাঞ্জাবি ও টুপি পরে অভিনব কৌশলে রাজধানীর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে সুযোগ বুঝে ঢুকে ল্যাপটপ, মোবাইল সেট, মানি ব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করত। এ জন্য তারা ইফতারের পর মাগরিবের নামাজের সময় এবং সেহরির পরের সময়টা বেছে নেয়। কারণ রমজান মাসে সবাই ইফতার ও সেহরির পর নামাজের জন্য বেশি ব্যস্ত থাকে, তখন সুযোগ বুঝে তারা চুরি করে পালিয়ে যায়।
চুরির জন্য পাঞ্জাবি ও টুপি কেন—এনটিভি অনলাইনের এমন প্রশ্নের জবাবে শিবলী নোমান বলেন, ‘রমজান মাস চলছে। এ সময় পাঞ্জাবি, পায়জামা ও টুপি পরা মানুষের প্রতি অন্যদের একটা দুর্বলতা কাজ করে। এ ধরনের পোশাক পরে ঘোরাফেরা করলে সাধারণ মানুষজন তাদের সহজে সন্দেহও করবে না। এই কৌশলটা কাজে লাগিয়ে তারা চুরি করে বেড়াত।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা পুলিশকে জানিয়েছে, তাদের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের একজন সর্দার রয়েছে। চুরির জন্য তাদের ছয় থেকে সাত হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে সর্দার জানিয়েছে। ঈদের খরচ ওঠানোর জন্য তারা এই চুরির চাকরি বেছে নেয়। তাদের নিয়ে আসার পর ঢাকায় ঘর ভাড়া করে রাখা হয়। পাঞ্জাবি, প্যান্ট বা পায়জামা ও টুপি পরিয়ে বাসাবাড়িসহ অভিজাত মার্কেটগুলোতে চুরি করানো হয়। মূলত ঈদকে সামনে রেখে তারা এই কাজ করে।
নয়জনকে আটকের সময় তাদের হেফাজত থেকে তিনটি ল্যাপটপ, ১৯টি মোবাইল ফোন ও কিছু ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান এস এম শিবলী নোমান।
এর আগে আজ সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর ফারুক এনটিভি অনলাইনকে জানান, বিভিন্ন বাসা থেকে মোবাইল, ল্যাপটপসহ দামি জিনিসপত্র চুরি করে একটি চক্র। তাদের বেশ কিছু সদস্য একসঙ্গে মিলে এই কাজ করে। এই চক্রের সাত থেকে আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।
ওসি জানিয়েছিলেন, এই চক্রের সদস্যরা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে, টুপি মাথায় দিয়ে সন্ধ্যার পর বিশেষ করে রমজান মাসে ইফতারের পর যখন মানুষ মাগরিবের নামাজ পড়তে ব্যস্ত থাকে, তখন তারা বাসায় ঢুকে অথবা বাসার তালা ভেঙে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যায়। এদের বেশির ভাগ কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তারা একসঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে পরিকল্পনা করে এই সব কাজ করছে। ঢাকার তিন স্থানে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।