খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে গণতন্ত্র হরণ করা যাবে না : মোশাররফ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলেই তাঁকে মিথ্যা মমালায় সাজা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে সরকার গণতন্ত্র হরণ করতে পারবে না।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের দ্বিতীয়তলায় প্রতিবাদী নাগরিক সভায় বিএনপি নেতা এসব কথা বলেন।
মোশাররফ বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে, সে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে খালেদা জিয়া আন্দোলন করছেন। আর এ জন্য রাজনৈতিক প্রতিহংসাপরায়ণ হয়ে তাঁকে সাজা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনে আর সাজা দেওয়া হলো দণ্ডবিধির ৪১৯ ধারায়। এতেই বোঝা যায়, খালেদা জিয়া কতটা প্রতিহিংসার শিকার।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্য সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ জন্য দেশের কোথাও তাদের কোনো চেইন অব কমান্ড নাই। যার ফলে দেশের টাকা, সোনা, কয়লা সব লোপাট হয়ে যায়। অথচ এদের বিরুদ্ধে সরকার কিছুই করতে পারছে না। কারণ, এরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।’
সিটি নির্বাচন নিয়ে মোশাররফ বলেন, ‘আগামীকাল হতে যাওয়া তিন সিটি নির্বাচনে খুলনা ও গাজীপুর মার্কা নির্বাচনের মডেল উপস্থাপন তৈরি করতেই বিএনপি প্রার্থীর সমর্থক ও এজেন্টদের হয়রানি-নির্যাতন করছে। সিলেটে বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানকে আটক করেছে পুলিশ। তিন সিটির ফল নিজেদের পক্ষে নিতে দমনপীড়নের আশ্রয় নিয়েছে সরকার।’ তিনি বলেন, ‘আগে খুলনা ও গাজীপুরের সিটি নিবাচনে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। আগামীকাল তিন সিটির নির্বাচন, কিন্তু এ নির্বাচন সরকার করছে না। নির্বাচন করছে সরকারের প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসন। এসব সিটিতে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেনি। বিএনপি নেতাকর্মী ও এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে। এ হলো শেখ হাসিনা মার্কা নির্বাচন। আগামীকাল নির্বাচন নিয়েও তিন সিটিতে নির্বাচন ঘিরে গ্রেপ্তার আতঙ্ক তৈরি করেছে। যাতে কেউ ভোট দিতে না পারে। তারা নিজেরাই ভোট দিয়ে নিজেদের প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারে।’
জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে মোশাররফ বলেন, ‘দেশের মানুষ চায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তারা নিজের হাতে ভোট দিয়ে পছন্দের মানুষকে ক্ষমতায় বসাতে। কারণ এ দেশের মানুষ আগেও প্রমাণ করেছে, তারা নিজের হাতে ভোট দিয়ে পছন্দের দলকে ক্ষমতায় বসাতে পারে। এ দেশের মানুষ যে ভোট দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন করতে পারে, সেটি দেখার জন্য ভারত, আমেরিকার দিকে তাকাতে হবে না। অতীতে বাংলাদেশে হয়েছে।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব সময় একদলীয় ক্ষমতা দখল করতে নির্বাচনের আগে সংকট তৈরি করে। আর সে জন্য কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে বাতিল করেছে। যাতে তারা আবার বাকশাল কায়েম করতে পারে। কারণ সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’ বিএনপির নেতা বলেন, ‘কেয়ারটেকার সরকার বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য পরীক্ষিত একটা প্রক্রিয়া। অথচ এটি ছিল আওয়ামী লীগের দাবি। এই দাবিতে তারা ১৭৩ দিন হরতালও করেছে। এ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ দুবার ক্ষমতায় এসেছে, বিএনপি একবার নির্বাচিত হয়েছে। এর আগে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের সরকারও ছিল অলিখিত কেয়ারটেকার সরকার। অথচ ক্ষমতা দখল করতে আওয়ামী লীগ কেয়ারটেকার পদ্ধতি বাতিল করেছে।’ তিনি বলেন, এ দেশের জনগণ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি কোনো ভোট দেয়নি বলে জনগণ এ সরকারকে তাদের সরকার মনে করে না। তেমনি সরকারও জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে তারাও জনগণের কাছে নিজেদের দায়বদ্ধ মনে করে না। তাই এই অবৈধ সরকারের হাত থেকে মুক্ত হতে হলে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ সরকার সবচেয়ে বেশি জনগণকে ভয় পায়, আর সে জন্য জনগণের সরকার, খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ভয় পায় বলেই বেগম জিয়া আজ কারাগারে। আজ শুধু খালেদা জিয়া নয়, সারা দেশের মানুষ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার সবকিছু বন্দি।’