মেছতার চিকিৎসায় কী করবেন?
মেছতা একটি প্রচলিত সমস্যা। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা, জন্মরোধক পিল ব্যবহার, গর্ভাবস্থা ইত্যাদি কারণে মেছতা হয়। বর্তমানে মেছতার অনেক আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে।
মেছতার চিকিৎসায় করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৩৮৭তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফারিয়াল হক। বর্তমানে তিনি প্রেসক্রিপশন পয়েন্টে চর্ম ও যৌন বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : মেছতা হলে করণীয় কী?
উত্তর : মেছতা নিয়ে একজন রোগী যখন আমাদের কাছে আসে, আমরা প্রথমে জিজ্ঞেস করি, এর কারণটা কী। কারণটা বের করার চেষ্টা করি। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা, হরমোনের বিভিন্ন বিষয় (যেমন : ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল, থাইরয়েড, গর্ভাবস্থা) আমরা দেখছি। সঙ্গে আরেকটি রয়েছে। পোস্ট ইনফ্লেমেটোরি হাইপার পিগমেন্টেশন (পিআইএইচ)। এখনকার দিনে এটা বেশি বেড়ে গেছে। এর জন্য মেছতাটা বেশি বাড়ছে।
এখন তো অনেক ধরনের কসমেটিক বাজারে এসেছে। এখন মেকআপ করার পরিমাণটা বেড়ে গেছে। সবাই খুব সৌন্দর্য সচেতন; মেকআপ করছে। আমরা না জেনে কিন্তু অনেক পণ্য কিনছি। এমন অনেক পণ্য কিনছি, যেগুলোর মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। হয়তো খুব সুন্দর গন্ধের একটি ক্রিম আমি মাখছি। হয়তো ওই গন্ধের জন্য মুখে সমস্যা হচ্ছে। এর কারণে মেছতা হচ্ছে।
এর পর আমরা বিউটি পার্লারে যাচ্ছি। পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করছি। ফেসিয়ালের মধ্যে তারা যেসব উপাদান ব্যবহার করছে, সেগুলোর মধ্যে অনেক কিছু রয়েছে, যেগুলো আমরা জানি না। এমনকি তারাও জানছে না, তারা কী ব্যবহার করছে। এগুলো আমাদের ত্বকের সমস্যা করছে। এর কারণে আমাদের পিআইএইচ তৈরি হচ্ছে। এর কারণে মেছতা হচ্ছে।
এ ধরনের কারণগুলোর কারণে আসলে মেছতা হয়। রোগী প্রথমে এলে আমরা কারণ জানার জন্য ইতিহাস নিই। এর পরে আমরা কারণগুলো ঠিক করার চেষ্টা করি। যেমন, কারো থাইরয়েডের রোগ থাকলে এর চিকিৎসা হবে। কেউ গর্ভবতী থাকলে সেখানে কিছু করার নেই। তবে ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল বা জন্মরোধক বড়ি খেলে সেটি বন্ধ করতে হবে। এ রকম কারণ অনুযায়ী আমরা এগুলো বন্ধ করব।
এরপর আমরা টপিক্যাল চিকিৎসায় চলে যাই। মুখে লাগানোর ক্রিম ব্যবহার করা হয় এ ক্ষেত্রে। সাধারণত মেছতার জন্য আমরা হাইড্রোকুইনন দিই। তবে হাইড্রোকুইনন একা কাজ করলে কিন্তু ইরিটেশন বা জ্বালাপোড়া হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা একটি সমন্বয় করে ক্রিম ব্যবহার করে থাকি। এতে হাইড্রোকুইনন থাকবে চার শতাংশ, সঙ্গে ট্রিটিনোইন থাকবে, আরেকটা লো পোটেন স্টেরয়েড থাকবে। হাইড্রোকুইননের কাজ হলো মেলানিন কম তৈরি করা। ট্রিটিনোইনটা কী করবে? হাইড্রোকুইনন যেন ভালোভাবে ত্বকে ঢুকতে পারে সে ক্ষেত্রে কাজ করবে। সঙ্গে যে পোটেন স্টেরয়েড থাকবে এর কাজ হলো ইরিটেশনটা কমিয়ে রাখা। এই সমন্বয়টা এখন মেছতার চিকিৎসায় খুব প্রচলিত।
এই সমন্বয়টা ব্যবহার করলে দেখা যায়, ৫০ ভাগ রোগী খুব সুন্দরভাবে বাসায় ফিরছে। তবে এরপরও যদি আমরা দেখি কেবল মুখে লাগানোর ওষুধ দিয়ে আমরা রোগীর সন্তুষ্টি আনতে পারছি না বা ওষুধ কাজ করছে না, তখন আমরা এর সঙ্গে কেমিক্যাল পিল যোগ করি। কেমিক্যাল পিল বর্তমানে খুব প্রচলিত। যেকোনো ধরনের কালো দাগ দূর করার ক্ষেত্রে এটি সারা বিশ্বে খুব সারা ফেলেছে। সাধারণত কেমিক্যাল পিলের ক্ষেত্রে এখানে গ্লাইকোলিক এসিড পিল ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া যদি কারো খুব গাঢ় মেছতা হয়, সে ক্ষেত্রে আমরা টিসিএ পিলটা করি। এটি ১০ মিনিটের একটি পদ্ধতি। প্রতি মাসে আমরা পার্লারে গিয়ে অজানা একটি পণ্য দিয়ে ফেসিয়াল না করে যদি চর্মবিশেষজ্ঞদের কাছে এসে একটি কেমিক্যাল পিল করি, সে ক্ষেত্রে মেছতা বা কোনো ধরনের দাগ হালকা থাকে।