রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু আগামী সপ্তাহে, প্রথম ধাপে যাবে ৩৫৪০
এক বছরেরও বেশি সময়ের টানাপড়েন শেষে সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ আর নিপীড়নের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে বলে একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্স বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কূটনীতিক সূত্রের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে সম্প্রতি যে ২২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই শেষে আগামী সপ্তাহে প্রথম ধাপে তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গা স্বদেশে ফিরবে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে মাতৃভূমি থেকে উৎখাত হয়ে সাত লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হিসেবে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। সে সময় জাতিসংঘ এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে উল্লেখ করেছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশে আগে থেকেই অবস্থান করছে আরো চার লাখ রোহিঙ্গা।
অনেক দেনদরবার শেষে পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণও ঠিক হয়। কিন্তু রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে অনীহাসহ নানা জটিলতার কারণে আর সে প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হয়নি। এ সময়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বিশ্বের বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার কাছে তুলে ধরে এবং এ ব্যাপারে তাদের সহযোগিতা চায়।
তার মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ফের সামনে এলো। মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মিন্ট থ রয়টার্সকে টেলিফোনে বলেন, ‘তিন হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে ২২ আগস্ট ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা সম্মত হয়েছি।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে ‘ছোট পরিসরের’ উল্লেখ করে বলেন, কাউকেই জোর করে ফেরত পাঠানো হবে না।
‘বাংলাদেশ নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসন ছাড়া আর কিছুই চায় না,’ যোগ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।
তবে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এ বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই অবগত নয় বলে দাবি করেছেন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সংগঠক মোহাম্মদ ইলিয়াস। এই রোহিঙ্গা অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের আগে অবশ্যই মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের মৌলিক দাবিগুলোর ব্যাপারে একমত হতে হবে।’
অন্যদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছে। ইউএনএইচসিআর বলছে, তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের পরিস্থিতি সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য সম্পর্কে অবগত করবে। বিশেষত যেখানে তারা ফিরছে, সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ও গ্রামে বসবাস করছে। সেখানে তাদের কোনো নাগরিকত্বের মর্যাদা নেই, চলাফেরাও সীমাবদ্ধ—বলছে জাতিসংঘ।