জেল সুপারের বিরুদ্ধে কারারক্ষীর মামলা
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এক কারারক্ষীকে মারধরের ঘটনায় জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা হয়েছে। গত ৭ জুলাই দায়ের করা এ মামলার বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রাথমিক শুনানি হয়। বিচারক খালিদ হাসান মামলাটি গ্রহণ করে আগামী ২৮ জুলাই শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন। ওই দিন মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করবেন বিচারক। এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহাদত হোসেন, সুবেদার আব্দুল মালেক ও সংস্থাপন কার্যালয়ের কারারক্ষী আনন্দ।
জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মামলার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে তিনি অভিযোগ করেন, ওই কারারক্ষী ‘অন্যায়’ কাজ করেও নিজের চাকরি বাঁচাতে এই মামলা করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৫ জুন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগরের কারারক্ষী মির্জা হিরা (নম্বর-১৩০৪৪) জরুরি প্রয়োজনে ডেপুটি জেলার হোসেনুজ্জামানের কাছে ছুটি চেয়ে তা না পেয়ে আবেদন জমা দিয়ে বাড়ি চলে যান। ১৯ জুন বাড়ি থেকে ফিরে এসে কারাগারের সংস্থাপন শাখায় হাজির হতে গেলে সুবেদার আব্দুল মালেক তাঁকে সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খানের কাছে নিয়ে যান। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ছুটিতে যাওয়ায় জ্যেষ্ঠ জেল সুপার তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়ে রিজার্ভ কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেন।
ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সুবেদার মালেক রিজার্ভ ব্যারাকের কাছে যান। এ সময় কারারক্ষী মির্জা হিরা মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তখন সুবেদার মালেক উত্তেজিত হয়ে তাঁকে মারতে উদ্যত হন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়।
ধস্তাধস্তির খবর পেয়ে ডেপুটি জেলার হোসেনুজ্জামান, কারা সংস্থাপন কার্যালয়ে কর্মরত কারারক্ষী আনন্দ (নম্বর- ৩১৯৭২) ঘটনাস্থলে যান। তখন তাঁরাসহ সুবেদার আব্দুল মালেক কারারক্ষী মির্জা হিরাকে বেদম মারধর করেন। ঘটনার সময় অন্য কারারক্ষীরা এগিয়ে এলে তাঁরা নিবৃত হন।
ওই দিন রাতে রোলকলে কারারক্ষী মির্জা হিরাকে অন্যায়ভাবে মারার প্রতিবাদ করেন অন্য কারারক্ষীরা। কারা কর্তৃপক্ষ মির্জা হিরাকে অন্যায়ভাবে মারার ব্যাপারে সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে কারারক্ষীরা সন্তুষ্ট হন।
পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদকারী কারারক্ষীদের মধ্যে চারজনকে অন্য জেলায় বদলিসহ দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই কারারক্ষী মির্জা হিরা বাদী হয়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান, জেলার শাহাদত হোসেন, সুবেদার আব্দুল মালেক ও কারারক্ষী আনন্দকে আসামি করে রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর-পি-৪৯/২০১৫।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার শফিকুল ইসলাম খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মামলার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজ এখনো হাতে পাননি।
শফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘কারারক্ষী মির্জা হিরা ছুটির কোনো আবেদন না দিয়েই কর্মস্থল ত্যাগ করেন। কারাগারে কেউ ছুটির আবেদন করলে অবশ্যই তাঁর কাছে একটি ডকেট নম্বর থাকে। কিন্তু তাঁর কাছে কোনো ডকেট নম্বর নেই। ওই ঘটনায় কারারক্ষী মির্জা হিরার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তদন্ত কমিটিও করা হয়। কমিটির সদস্যরা তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।
জ্যেষ্ঠ জেল সুপার আরো বলেন, চাকরি বাঁচাতেই কারারক্ষী মির্জা হিরা মামলা করেছেন। তিনি এর আগে যেখানেই কর্মরত ছিলেন, সেখানেই ছুটি না নিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করতেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করতেন। এসব কর্মকাণ্ডের জন্যই তাঁকে ঢাকা ডিভিশন থেকে রাজশাহীতে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু এখানেও তিনি একই কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।