অভিশংসন নিয়ে ট্রাম্প, ‘এটি আমেরিকার ওপর আঘাত’
সামনেই বড়দিন। ছুটির আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কপালে ভাঁজ। তাঁর অভিশংসন নিয়ে কংগ্রেসে শুরু হয়েছে বিতর্ক, হবে ভোটাভুটিও। আর এরই মধ্যে টুইট করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘এটি আমেরিকার ওপর আঘাত।’
সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা বিতর্ক শুরু করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্প জানিয়েছিলেন তিনি ওই বিতর্ক দেখবেন না। তবে বুধবার বিতর্ক শুরু হওয়ার আগেই টুইট করেছেন ট্রাম্প।
অভিশংসন নিয়ে টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটি আমেরিকার ওপর আঘাত। এটি রিপাবলিকান পার্টির ওপর আঘাত।’ তাঁর অভিযোগ, ‘এটি কট্টর বামপন্থীদের মিথ্যাচার।’
এদিকে ট্রাম্পের রিপাবলিকান সদস্যরাও কংগ্রেসে ট্রাম্পের পক্ষেই যুক্তি দিচ্ছেন। রিপাবলিকান পল মিশেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ও তদন্তগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি। এটা পরিষ্কার ট্রাম্প বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, ঘুষ নেননি বা কোনো অপরাধ করেননি।’
ডেমোক্র্যাট সদস্য স্টিভ কোহেন বলেন, ‘২০১৯ সালে ইউক্রেন প্রসঙ্গে তিনি বিদেশি সহযোগিতা চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।’ কোহেনের অভিযোগ, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আঘাত করেছেন।’
এদিকে রিপাবলিকান ক্যারল মিলারের দাবি, এই অভিশংসনের কারণে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো বাদ পড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আজ একটি হতাশাজনক দিন। আমার সহকর্মীরা (কংগ্রেসের সদস্য) নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও আমাদের সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজ শেষ করতে পারিনি।’
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ
দীর্ঘ শুনানির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের দুটি অভিযোগ সত্য বলে ঘোষণা দেয় প্রতিনিধি পরিষদের তদন্ত কমিটি। এর পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে ট্রাম্পকে অপসারণের প্রস্তাবের ওপর আজ বুধবার রাতে ভোট দেবেন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্যরা। তবে নিজের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ আগে থেকেই অস্বীকার করে আসছেন ট্রাম্প।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের হাউস জুডিশিয়ারি কমিটিতে অভিশংসন অভিযোগের ওপরও ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ২৩টি ভোট পড়ে। আর বিপক্ষে ভোট দেন ১৭ জন। তদন্ত কমিটির রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সদস্যরা তাঁদের ভোট দেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানায়।
এর আগে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় সেখানে ভোটাভুটিতে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষেই রায় আসবে। তবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকানরা, তাই সেখানে ট্রাম্পই টিকে যাবেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনে গত নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ ইস্যুর পর আলোচনায় এসেছে ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ থাকা মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিতের বিষয়। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি দফায় দফায় শুনানি শেষে প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে।
আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির ওপর চাপ প্রয়োগ করে অভিশংসন তদন্তের মুখে পড়েন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টির সত্যতা ও গভীরতা যাচাইয়ে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। পাশাপাশি হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে চলে সপ্তাহব্যাপী শুনানি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি জো বাইডেন ও তাঁর ছেলে হান্টারের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ আরোপ করার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেন্সকির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। জানা গেছে, ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকিকে বলেন, তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত বাইডেন ও তাঁর ছেলের আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তা স্থগিত রাখা হবে। ইউক্রেনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ অনেক রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিক বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে বর্তমানে ট্রাম্পের বিরোধীরা সংখ্যাগুরু। ফলে প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে রায় এলে, অর্থাৎ ট্রাম্প অভিশংসিত হলে বিষয়টি যাবে কংগ্রেসের ১০০ সদস্যের উচ্চকক্ষ সিনেটে। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হলে সিনেটের দু-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোট প্রয়োজন হয়।
বর্তমান সিনেটে ৫৩ জন রিপাবলিকান, ৪৫ ডেমোক্র্যাটস ও দুজন স্বতন্ত্র সিনেটর রয়েছেন। স্বতন্ত্র দুই সিনেটর ডেমোক্র্যাট-ঘেঁষা। ট্রাম্পকে গদিছাড়া করতে সব ডেমোক্র্যাট সিনেটর ও দুই স্বতন্ত্র সিনেটরসহ অন্তত ২০ জন রিপাবলিকান সিনেটরের ভোট প্রয়োজন পড়বে।