‘শুভবুদ্ধির উদয় হোক, তাহলেই আমার ছেলের হত্যার বিচার হবে’
‘আমি বলেছি শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তাহলেই আমার ছেলের হত্যার বিচার হবে। পুলিশ, কারাগার, ফাঁসিকাষ্ঠ দিয়ে যে বিচার এ বিচার দিয়ে তো কোনো প্রতিকার নেই।’urgentPhoto
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাঁটাবনে কনকর্ড অ্যাম্পোরিয়াম ভবনের সামনে প্রকাশকদের আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে এ কথা বলেন জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার নিহত ফয়সল আরেফিন দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
সমাবেশে দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘কোথায় গণতন্ত্র বাংলাদেশে? গণতন্ত্র থাকলে কি এ রকম হত্যাকাণ্ড চলতে পারত?’
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বিচার আছে। বিচার চলুক। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে দেশে মানুষের মধ্যে ধনী, গরিব, শক্তিশালী, দুর্বল, রাজনীতিবিদ এবং অন্যান্য স্তরের মানুষে শুভবুদ্ধির দারুণ অভাব রয়ে গেছে। একদিকে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে কিছু কাজ করছে, তারা যে ভালো কাজ করছে এটা কি বলা যাবে? গণতন্ত্রের নামে, সমাজতন্ত্রের নামে, জাতীয়তাবাদের নামে তারা যে অপকর্ম করছে এ অপকর্ম তো সীমাহীন। মানুষ খুন করছে, মিথ্যা প্রচার করছে, জোর-জবরদস্তি করে তারা ক্ষমতায় থাকছে। আর এর পাল্টা হলো আরেকটা শক্তি, যারা রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কথা বলছে। তারা ইসলাম সম্পর্কে যেসব কথা বলছে, ব্লগে যেগুলো প্রচার করছে, এগুলোর মধ্যে তো আর যাই থাক ইসলাম নাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘দীপন আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কোনো দল সমর্থন করত না। এসব দলের চরিত্র সম্পর্কে তাঁর ধারণা ছিল।’
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘বদরুদ্দীন ওমর অনেক কিছুর সমালোচনা করে লিখেন। কিন্তু তিনি একটা শব্দ, একটা বাক্যও আইনের সীমার বাইরে গিয়ে লিখেন না। আইনের পরিধির মধ্যে থেকেই লিখেন। কোনো কোনোটাতে এইদল, ওইদল অসন্তুষ্ট হতে পারে। কিন্তু অসন্তুষ্ট হওয়া আর শত্রু গণ্য করা তো একরকম না। ওমর সাহেব সমালোচনার মধ্য দিয়ে সংশোধন চান। এ রকম আরো লেখক আছেন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বা যতীন সরকার, হাসান আজিজুল হক। আমরা একসঙ্গে লিখি, একসঙ্গে চিন্তা করি। সবসময় পারি না, বিচ্ছিন্নতা আছে। কিন্তু আমাদের লেখা প্রকাশ করার মতো উপযুক্ত জায়গা তো নাই। আজকে যদি মানিক মিয়ার মতো একজন সম্পাদক থাকতেন, ইত্তেফাকের মতো একটা পত্রিকা থাকত, অবশ্যই দেশের অবস্থা অনেক ভালো হতো।’ তিনি আরো বলেন, ‘সমকাল পত্রিকা প্রকাশ করতেন সিকান্দর আবু জাফর। তাঁর মতো একজন সম্পাদক থাকতেন তাহলেও কিছু লেখক থাকতেন।’
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘লুটপাট, চাঁদাবাজ, গুম এসব এত প্রাধান্য বিস্তার করেছে এবং রাজনীতি এত নিকৃষ্ট হয়ে গেছে যে, এ থেকে উদ্ধার করার জন্য লেখকদের একটা ভূমিকা আমরা চাই। সেই ভূমিকা পালন করার জন্য যে মেরুদণ্ড দরকার, যে চরিত্রবল দরকার, সে চরিত্রবল সম্পন্ন লেখক কোথায়? জ্ঞানী লোকের অভাব নেই দেশে। কিন্তু জ্ঞানের সঙ্গে চরিত্রবল দরকার।’