কখনও ‘ডিসি’, কখনও ‘এসপি’ তিনি!
নিজেকে কখনও জেলা প্রশাসক (ডিসি), কখনও পুলিশ সুপার (এসপি), আবার কখনও বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিতেন। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন জনের কাছে থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বিভিন্ন আকর্ষণীয় পেশার পরিচয় দিয়ে মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া ও ফেসবুকে আলাদা আইডি ব্যবহার করে নারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে নওগাঁয় এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার বিকেলে পুলিশের একটি দল শহরের একটি অভিজাত হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।
নওগাঁ সদর থানায় প্রতারণার মামলা হওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারি বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়া, পদোন্নতিসহ নানা সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। এ ছাড়া ফেসবুকে একেক সময় একেক আইডি ব্যবহার করে এবং নিজেকে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পেশার পরিচয় দিয়ে ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন তিনি। বিদেশি পাঠানোর কথা বলে এসব মেয়েদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁর পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘নওগাঁ জেলার এক উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের ছেলে মারা যাওয়ার পর তিনি মানসিক বিষন্নতায় ভুগছিলেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোবাইলে প্রতারক কামরুল হাসান ওই ভাইস চেয়ারম্যানকে মা সম্পর্ক বানায় এবং তাঁর বাড়িতে যাতায়াত করতে শুরু করেন। ওই ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে নিজেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পরিচয় দেন এবং বিশ্বাস করান যে তাঁর সঙ্গে সরকারের উচ্চ মহলের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। কামরুল হাসান তাঁকে আগামী নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যানের টিকিট পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে গত বছরের নভেম্বরে ওই ভাইস চেয়ারম্যানের কাছ তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। টাকা নেওয়ার পর তিনি ওই ভাইস চেয়ারম্যানকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। গতকাল সোমবার ওই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জানতে পারেন, প্রতারক কামরুল হাসান নওগাঁ শহরের একটি অভিজাত আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন। তিনি তৎক্ষণাৎ বিষয়টি নওগাঁ জেলা পুলিশকে জানান। নওগাঁ সদর থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রতারক কামরুল হাসানকে স্ত্রীসহ গ্রেপ্তার করে।’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর কামরুল হাসান প্রথমে পুলিশের কাছে নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। পরে জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল হাসানের কাছ থেকে নানান চাঞ্চল্যকর সব তথ্য বেরিয়ে আসে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কামরুল হাসান যশোরের ঝিকরগাছার একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তিনি অনলাইন ম্যারেজ মিডিয়াগুলোতে নিজেকে কখনো আমেরিকান সিটিজেন, কখনও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী, কখনও ডিসি, কখনও এসপি, কখনও ডাক্তার, কখনো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পাত্রী খোঁজার বিজ্ঞপ্তি দেন। এরপর বিয়ে করতে ইচ্ছুক ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাঁদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে তাঁদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এ ছাড়া নিজেকে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘নওগাঁর আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার হওয়া কামরুল হাসানের স্ত্রী পরিচয়দানকারী ওই নারীও কামরুল হাসানের প্রতারণার শিকার হন। পুলিশের কাছে ওই নারী স্বীকার করেছেন, এক বছর আগে নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে মোবাইলে ওই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে। পরে মেয়েটির কাছ থেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে দেড় লাখ টাকা এবং স্বাক্ষরিত দুটি ফাঁকা চেক আদায় করেন কামরুল হাসান। ফাঁকা ব্যাংক চেক ও শারীরিক সম্পর্কের ভিডিওর ভয় দেখিয়ে গত রোববার মেয়েটিকে বিয়ে করতে বাধ্য করেন কামরুল।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘প্রতারক কামরুল হাসান বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে নওগাঁ সদর থানায় একটি প্রতারণা করেছে। এ ছাড়া কামরুল হাসানের প্রতারণার স্বীকার হওয়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ চার-পাঁচজন ভুক্তভোগী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করবেন। এসব মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে এম এ মামুন খান চিশতী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন, নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম প্রমুখ।