অপহৃতকে উদ্ধারে গিয়ে মিলল হলমার্ক কেলেঙ্কারির আসামি
একটি চাঁদাবাজ চক্র রাজধানীর উত্তরখান থেকে মো. আবদুল মালেককে অপহরণ করে। ঘটনা গতকাল মঙ্গলবারের। এ ঘটনার পর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যাব-১) অভিযোগ করে ভুক্তভোগীর পরিবার।
অভিযোগের পর র্যাব উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে অপহৃত আবদুল মালেককে উদ্ধার করে। সে সময় ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ইকবাল হোসেন (৩১) ও আমিরুল ইসলামকে (৩৫) গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈনের দাবি, ‘অপহরণকারীরা আগে থেকেই আবদুল মালেক সম্পর্কে জানতেন। অপহরণকারীরা মূলত সাংবাদিকতার আড়ালে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে চাঁদাবাজি ও অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। এরই ধারাবাহিকতায় অপহরণকারীরা আবদুল মালেকের উত্তরখানের আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার তথ্য পাওয়ার পর থেকে সেখানে অপেক্ষায় ছিল।’
র্যাবের এ পরিচালক বলেন, ‘গতকাল দুপুরে আবদুল মালেক তার আত্মীয় জমির হোসেনের বাড়িতে যান। এরপরই ইকবাল হোসেন ও আমিরুল ইসলামসহ তাদের আট-দশজন সহযোগী আত্মীয়ের বাড়িতে উপস্থিত হন। সেখানে উপস্থিত হয়ে গ্রেপ্তারকৃতরা আবদুল মালেকের কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে আবদুল মালেক সম্পর্কে গণমাধ্যমে হলমার্ক কেলেঙ্কারির তথ্য দিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তখন তাদের কাছে ক্যামেরা ও টেলিভিশনের বুম ছিল। পরে সেখান থেকে সাংবাদিক পরিচয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আবদুল মালেককে উত্তরার একটি আবাসিক হোটেলে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।’
সংবাদ সম্মেলনের পর খন্দকার আল মঈন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হোটেলে নিয়ে মালেকের মুঠোফোন থেকে তার আত্মীয়দের ফোন করে চাঁদার টাকা, চেক ও সরকারি স্ট্যাম্প নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু এক কোটি টাকা ভুক্তভোগীর আত্মীয়ের কাছে না থাকায় পাঁচ লাখ টাকা ও ৯৫ লাখ টাকার দুটি চেক নিয়ে ওই হোটেলে হাজির হন। এরইমধ্যে ভুক্তভোগীর পরিবার র্যাবে অভিযোগ জানায়। পরে হোটেলে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার ও মালেককে আবাসিক হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা হয় দুটি চেক ও অন্যান্য নথিপত্র। সে সময় ভুক্তভোগীর পরিবারের লোকজনও ছিল সেখানে’, যোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এ কর্মকর্তা গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বলেন, ‘আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ অপহরণ ও চাঁদা চাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারা সাংবাদিকতার আড়ালে একটি চাঁদাবাজ দলের সক্রিয় সদস্য। এ দলের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ জন। গ্রেপ্তারকৃতরা ও তাদের চক্রের সদস্যরা এলাকায় প্রাণের বাংলাদেশ, স্বাধীন সংবাদ, বিডব্লিউ নিউজ, প্রথম বেলা, ডেইলি নিউজসহ এ জাতীয় আরও কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের পরিচয় দিতেন।’
‘জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তিমূলক দিয়ে জানান, তারা দীর্ঘদিন যাবত উত্তরা ও উত্তরখান এলাকায় এসব পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করে চাঁদাবাজি করে আসছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মামলা রয়েছে।
আবদুল মালেক সম্পর্কে বলতে গিয়ে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, ‘আবদুল মালেক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি ব্যাংকের ঋণখেলাপি। প্রথমে আমরা গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে তথ্য পাই, অপহৃত আবদুল মালেক হলমার্ক কেলেঙ্কারি ঘটনার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। তারপর আমরা এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি। ওই কেলেঙ্কারির সময়ে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলা হয়েছিল তার মধ্যে আবদুল মালেকের কোম্পানিও ছিল। তিনি হলমার্ক মামলার একজন গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। ফলে আমরা তাকে থানায় সোপর্দ করব। গ্রেপ্তারকৃত ও উদ্ধারকৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’