যেভাবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারে বাংলাদেশ

আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ভালো খেললেও প্রস্তুতি ম্যাচ দুটি আক্ষেপ বাড়াচ্ছে বাংলাদেশের। পাকিস্তানের বিপক্ষে নিশ্চিত জেতা ম্যাচ হাতছাড়া করেছে টাইগাররা। আর ভারতের বিপক্ষে ব্যাট হাতে তো ১০০ রানও করতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা। প্রস্তুতি ম্যাচের এই খচখচানি নিয়ে বৃহস্পতিবার মূল পর্ব শুরু করছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে টাইগারদের প্রতিপক্ষ চেনা ইংল্যান্ড।
এই দলটিকে গত পাঁচটি মুখোমুখি লড়াইয়ে তিনবার হারিয়েছে মাশরাফির দল। ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জেতাটা মোটেও সহজ হবে না। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগে দলটি যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়েছে তাতে করে বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে। বেশ কয়েকটি কাজ ঠিকঠাকভাবে করলে ইংল্যান্ড বাধাটা অবশ্য সহজেই পার করতে পারবে বাংলাদেশ। আসুন দেখে নিই কীভাবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিততে পারে বাংলাদেশ।
নতুন বলে ব্যাটসম্যানদের আরো বেশি সাবধানি হওয়া
ইংল্যান্ডের পিচগুলো আমাদের উপমহাদেশের পিচের মতো নয়। সেখানকার উইকেটগুলোতে অনেক বেশি ঘাস থাকে। আর কোকাবুরো বল যেহেতু একটু বেশি শক্ত আর বলের উজ্জ্বলতাও সহজে নষ্ট হয় না, তাই প্রথম কয়েকটা ওভার দেখেশুনে খেলতে হবে ব্যাটসম্যানদের। এবারের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোর দিকে তাকালেই বিষয়টা পরিষ্কার হবে। অস্ট্রেলিয়া শ্রীলঙ্কা দলের দেওয়া ৩১৯ রান সহজে তাড়া করলেও প্রথম পাঁচ ওভারে ওয়ার্নার ও ফিঞ্চ মিলে নেন মাত্র ২০ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ওয়ানডে করে ৩৩০ রান অথচ দলটি প্রথম সাত ওভারে তোলে মাত্র ২৪ রান। প্রথম কয়েকটি ওভারে উইকেট না হারালে ইংল্যান্ডের পিচে ৩২০-৩৩০ রান অনায়াসেই করা সম্ভব। প্রথম সাত ওভারে ভারত দুটি উইকেট হারালেও বাংলাদেশ হারিয়ে বসে পাঁচটি উইকেট আর এখানেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে টাইগাররা।
শুরুতেই উচ্চাভিলাসী না হওয়া
যে কোনো ব্যাটিং ইনিংসের প্রাণভোমরা বলা হয় তার টপ অর্ডারকে। শুরুর দিকে সাবধানে ব্যাটিং শুরু করতে হবে। ইনিংসে মাঝামাঝি অবস্থান রানের চাকা বাড়ানোয় মনোযোগী হলে বড় ইংল্যান্ডে বড় স্কোর গড়া সম্ভব। ইংল্যান্ডের অন্যতম বড় শক্তি তাদের পেসাররা। নিজেদের কন্ডিশনে ডেভিড উইলি, ক্রিস ওকস, বেন স্টোকসদের খেলাটা দারুণ কঠিন হবে। তাই উইকেটে সেট হওয়ার পরই বড় শট খেলা উচিত ব্যাটসম্যানদের।
স্পিনার ও খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করা
বাংলাদেশের বিপক্ষে মঈন আলী ও আদিল রশীদ দুজনকে নিয়েই মাঠে নামতে পারে ইংল্যান্ড। সেক্ষেত্রে রান বাড়াতে এই বোলারদের টার্গেট করা উচিত টাইগার ব্যাটসম্যানদের। এ ছাড়া জো রুটও হাত ঘোরাতে পারেন। শট সিলেকশনে সাবধানি হয়ে খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করা উচিত। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেহেতু স্পিনারদের বিপক্ষে সাবলীলভাবে খেলতে পারে তাই এই ১৫-১৮ ওভারে রানের চাকাটা বেশি ঘোরানোর চেষ্টা করতে হবে।
স্টাইক রোটেট করা
প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতকে বিপদ থেকে টেনে বের করে আনেন দীনেশ কার্তিক। ম্যাচে ৭৭ বলে ৯৪ করেন এই ব্যাটসম্যান। যার মাত্র ৩৮ রান এসেছে চার-ছয় থেকে। এক-দুই রান নিয়েই নিজের রোটেট করেছেন তিনি। আর সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাতও খুলেছেন এই ব্যাটসম্যান। ইংল্যান্ডে মাঠগুলো মিরপুর-চট্টগ্রামের চেয়ে কিছুটা বড়। এখানে রান নেওয়ার জন্য প্রচুর ফাঁকা জায়গা পাওয়া যায়। খু্ব বেশি বড় শট না খেলে সিঙ্গেলস-ডাবলসে স্কোরবোর্ডটাকে সচল রাখলে সেটা দলের জন্য ভালোই হবে।
স্লগ ওভারের জন্য উইকেট বাঁচিয়ে রাখা
এবারের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে দেখা গেছে ইংল্যান্ডের এই উইকেটগুলোতে ইনিংসের শেষ কিছু ওভারে অনেক রান এসেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও এই কাজটি করা উচিত বাংলাদেশের। ইনিংসের শেষ ১০-১২ ওভারে ১২০-১৩০ রানের লক্ষ্যমাত্রা রাখা উচিত। পাকিস্তানের বিপক্ষে তো এই স্লগ ওভারেই ম্যাচ হেরে বসে বাংলাদেশ।
বোলারদের লড়াই করার মতো রান সংগ্রহ করা
ইংলিশ কন্ডিশনে ঠিক কত রান পর্যাপ্ত সেটা বলা মুশকিল। তবে আগে ব্যাটিং করলে বোলারদের জন্য পর্যাপ্ত রান বোর্ডে রাখতে হবে। মাশরাফি-মুস্তাফিজ-রুবেলরা লড়াই করার মতো পুঁজি পেলে ইংল্যান্ডকে হারানো কঠিন হবে না।
মিরাজ-সৈকতের মধ্যে কোনো একজন
ইংলিশ কন্ডিশনে স্পিনাররা খুব একটা সফল নন। তাই মেহেদী হাসান মিরাজ বা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মধ্যে একজনকে খেলানো উচিত হবে। এ ক্ষেত্রে দলে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান রাখার সুবিধাও পাওয়া যাবে। সম্ভব হলে চার পেসার নিয়েও খেলা যেতে পারে।