জাপানে করোনার চিকিৎসায় অ্যাভিগান ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ঠাণ্ডা-সর্দিজনিত অসুখের (ফ্লু) চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যাভিগান ওষুধের কার্যকারিতা পরখ করে দেখতে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ শুরু করেছে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জাপানের ফুজিফিল্ম। অ্যাভিগান ওষুধটি ব্যবহারে চীনে করোনার চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া গিয়েছিল।
চীনে অ্যাভিগান ওষুধটির পরীক্ষামূলক ব্যবহারে দেখা গেছে, যেসব করোনায় আক্রান্ত রোগীদের ওই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল, তারা সুস্থ হতে কম সময় নিয়েছেন।
ফুজিফিল্মের এক মুখপাত্র আজ বুধবার বলেন, ‘জুনের শেষ নাগাদ ১০০ রোগীর ওপর (ওষুধটির) ট্রায়াল (পরীক্ষামূলক প্রয়োগ) করা হবে।’ বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
‘আমরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করব, তা বিশ্লেষণ করব এবং এরপর অনুমোদনের জন্য আবেদন করব,’ যোগ করেন ওই মুখপাত্র।
ওই মুখপাত্র জানান, মৃদু নিউমোনিয়াসহ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ২০ থেকে ৭৪ বছর বয়সী রোগীদের সর্বাধিক ১৪ দিনের জন্য ওষুধটি দেওয়া হবে।
তবে ওই মুখপাত্র আরো জানান, প্রাণীর শরীরে ওষুধটি পরীক্ষার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ওই ওষুধ দেওয়া হবে না।
এর আগে গত শনিবার (২৮ মার্চ) জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছিলেন, তাঁর সরকার ‘নতুন করোনাভাইরাসের চিকিৎসা হিসেবে (অ্যাভিগান ওষুধের) আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করবে’। শিনজো আবের ওই বক্তব্যের পরই তৃতীয় ধাপে ওষুধটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ঘোষণা এলো।
এরই মধ্যে অ্যাভিগানের প্রধান উপাদান ফ্যাভিপিরাভিরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে বলে গত মাসে চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল।
জাপানে অ্যাভিগানের দুটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগে দেখা গিয়েছিল, ওষুধটি রোগীদের সুস্থ হওয়ার সময় কমিয়ে আনে। তবে ওই দুই কার্যক্রমের সঙ্গে ফুজিফিল্ম যুক্ত ছিল না।
বর্তমানে ফ্লুর চিকিৎসায় ভাইরাসরোধী (অ্যান্টিভাইরাল) ওষুধ হিসেবে অ্যাভিগানের উৎপাদন ও বিক্রয় অনুমোদিত।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কথা ঘোষণা করে ফুজিফিল্ম এক বিবৃতিতে বলেছে, ফ্লু ভাইরাসের ওপর অ্যাভিগান যেভাবে কাজ করেছে, ‘নতুন করোনাভাইসের ওপর ওষুধটি সম্ভাব্য অ্যান্টিভাইরাল প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।’
নতুন করোনাভাইরাসের ওষুধ খুঁজে পেতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও গবেষকরা। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান ওষুধ যেমন, ম্যালেরিয়া ও এইচআইভিজনিত এইডস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছিল।
করোনার সংক্রমণের শুরুর দিকে ফ্রান্স ও চীনে ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইন ব্যবহারে আশার আলো দেখা গিয়েছিল।
কিন্তু বড় পরিসরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্য আসার আগপর্যন্ত ওই ওষুধগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার প্রতি জোর দেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনার ভ্যাকসিনের খোঁজে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষকরা কাজ করে চলেছেন। নভেল করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে ৪২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।