রোহিঙ্গারা গণহত্যার ‘ভয়াবহ ঝুঁকিতে’, বিচারের ‘মুখে’ সু চি
রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর সামরিক হামলার কারণে বিচারের আওতায় আনার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন মিয়ানমারের নোবেলজয়ী বেসামরিক নেত্রী অং সান সু চি। জাতিসংঘের একটি তদন্তকারী দলের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের একটি স্বাধীন ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’ বা তথ্যানুসন্ধান দল গতকাল মঙ্গলবার জেনেভায় মিয়ানমারবিষয়ক একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
তিন বছর হলো দায়িত্বে আছেন সু চি। এরই মধ্যে নন্দিত এক ব্যক্তিত্ব থেকে নিন্দিত চরিত্রে পরিণত হয়েছেন মিয়ানমারের এই আলোচিত নেত্রী। একসময় মিয়ানমারে গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনের পুরোধা সু চির এমন পতনের জন্য দায়ী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান।
১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পদকে ভূষিত হন সু চি। এ ছাড়া দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকা সু চি হয়ে ওঠেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনের প্রতীক। সেই সু চি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংস নিপীড়নের বিষয়ে সরকারের অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচিত ও নিন্দিত।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমরা এখনো নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন এবং গণহত্যার ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
প্রতিবেদনে এ ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে আবারও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কয়েকজন জেনারেলকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে তদন্তকারী দল।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো মিয়ানমারে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে বাস করছেন। তাঁদের চলাফেরার ওপর এত বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে যে, এর প্রভাব তাঁদের মৌলিক মানবিক চাহিদার ওপরও পড়েছে। এসব কারণে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর, যাঁদের বেশিরভাগই বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, রাখাইনে ফেরা অসম্ভব হয়ে উঠেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী ও জাতিসংঘ প্যানেলের সদস্য ক্রিস্টোফার সিডটি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মিয়ানমারে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা এখনো গণহত্যার শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।’
এদিকে জাতিসংঘের সত্যানুসন্ধানী প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর গতকালই এতে ‘পক্ষপাতদুষ্ট অভিযোগ’ ও ‘ভুল তথ্য’ পরিবেশন করা হয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছে মিয়ানমার। এ ছাড়া জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতহীনভাবে তদন্ত না করার অভিযোগ তোলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত কিয়ায়ো মো তুন। এ প্রতিবেদন মিয়ানমারের লাখ লাখ মানুষকে অর্থনৈতিক সমস্যার মুখে ঠেলে দেবে বলেও জানান মিয়ানমারের এ কর্মকর্তা।
২০১৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করা সু চি মিয়ানমারের মুসলিম-অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনীর চালানো নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সু চির প্রচণ্ড সমালোচনা হয়। এ ছাড়া সু চির বিরুদ্ধে মিয়ানমারে রাজনৈতিক স্বাধীনতার চর্চা না করতে দেওয়ার অভিযোগ করে আসছেন সমালোচকরা।
জাতিসংঘের তদন্তকারী দল আরো জানায়, মিয়ানমারের পার্লামেন্টে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন দল ৬০ শতাংশ আসন নিয়ন্ত্রণ করলেও দেশটির সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই ক্ষমতাসীন সু চি সরকারের। অথচ পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে, শুধু মিয়ানমারের সংবিধান পরিবর্তন করা ছাড়া, দেশের যেকোনো আইন পরিবর্তনের ক্ষমতা সু চি সরকারের রয়েছে।