নির্বাচনি আচরণবিধি মানছেনই না ঝিনাইদহ-১ আসনের সাংসদ

Looks like you've blocked notifications!
রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম জমা দিচ্ছেন সাংসদ আব্দুল হাই। ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচনী আচরণবিধির কোনো তোয়াক্কাই করছেন না ঝিনাইদহ-১ আসনের (শৈলকূপা) সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। প্রায় প্রতিদিনই তিনি হাজার হাজার মানুষ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সভা-সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন এবং প্রকাশ্যে ভোট চাচ্ছেন। তিনি রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রার্থীর মনোনয়ন ফরমও জমা দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন আবাইপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস।

গত ২৭ নভেম্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করে নির্বাচ কমিশন। আগামী ৫ জানুয়ারি এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে শৈলকূপা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদও রয়েছে। এই ১২টির ৩টিতে ইউনিয়নে ইতোমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। বাকি নয়টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে।

নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী, স্থানীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের সুবিধাভোগী কেউই নির্বাচনী কোনো প্রচার-প্রচারণা ও কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। গত নির্বাচনগুলোতে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য স্থানীয় নির্বাচনে জড়িয়ে পড়ায় তাদের এলাকা ছাড়া করেছে নির্বাচন কমিশন।

শৈলকূপায় শিডিউল ঘোষণার পরই নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোটে নেমে পড়েন আব্দুল হাই। গত ৯ ডিসেম্বর এই সাংসদ নিজ হাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে নৌকার প্রার্থীদের মনোনয়পত্র জমা দেন। এভাবে নির্বাচনি আচরণবিধি ভেঙ্গে প্রকাশ্যে নৌকার প্রার্থীদের পক্ষ নেওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

মনোনয়পত্র জমার পর বাছাই শেষে প্রতীক বরাদ্দের আগেই নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েন সাংসদ আব্দুল হাই। আবাইপুর, মির্জাপুর, দুধসর, দিগনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার নামে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত ঘটিয়ে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন সাংসদ আব্দুল হাই।

আবাইপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হেলাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এখানে গত সোমবার বিশাল সমাবেশ করে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন সংসদ সদস্য আব্দুল হাই। বর্ধিত সভার কথা বলা হলেও আসলে তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনি জনসভা করে বেড়াচ্ছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্যের এই দৌরাত্ম্যের প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে আবেদনও করেছেন শৈলকুপা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই সহসভাপতি।

গতকাল বুধবার দিগনগর ইউনিয়নে নির্বাচনী সমাবেশ করেছেন স্থানীয় সাংসদ। এ বিষয়ে দিগনগর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ বি এম মুক্তারুজ্জামান বলেন, স্থানীয় সাংসদ বর্ধিতসভা করতে এসে তিনি প্রকাশ্যে ভোট চাচ্ছেন, এতে বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। আমরা নিরপেক্ষ ভোট ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চাই।

এ বিষয়ে জানতে শৈলকূপার সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তার ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

স্থানীয় সাংসদ কীভাবে এটা করছেন—এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, তার কাছে এই ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তিনি এই বিষয়ে বলতে পারবেন।

ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আ. ছালেক বলেন, সংসদ সদস্যের ভোট চাওয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে একটি লিখিত অভিাযোগ এসেছে। আমরা সংসদ সদস্যকে নিষেধ করেছি যেন এ কাজ তিনি না করেন। এবং আইনের প্রতি সম্মান দেখান। তিনিও আমাদের কথা দিয়েছেন—এটা আর করেবেন না।