রংপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী ১০, নেই বিএনপি

Looks like you've blocked notifications!
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করছেন জাতীয় পার্টি (বামে) ও আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থী। ছবি : এনটিভি

অবশেষে সব উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির (জাপা) একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। জাপার রওশনপন্থি হিসেবে গুঞ্জনে থাকা আব্দুর রউফ মানিক মনোনয়নপত্র কিনলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেননি। 

আজ মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমা দেন মোস্তফা।

গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকেই সমর্থন দিয়েছেন রওশন এরশাদ। ফলে ফুরফুরে মেজাজে পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকছেন তিনি।

মনোনয়ন জমা দেওয়ার পর মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, রংপুরের মানুষ অতীতে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি, এবারও সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না। আগামী ২৭ ডিসেম্বর যে ভোট অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে লাঙল প্রতীককে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় ইভিএম নিয়ে বাইরের কেউ যেন কোনো কারসাজি করতে না পারে সেজন্য নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সজাগ থাকারও আহ্বান জানান মোস্তফা।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া আজ বেলা ২টায় দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রংপুর  মহানগরের কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু।

মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘রংপুরের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উদগ্রিব হয়ে আছে। ২৭ ডিসেম্বর হবে নৌকা মার্কার বিজয়ের দিন। আমরা রংপুরবাসী এদিন বিজয় ছিনিয়ে আনব।’

ডালিয়া বলেন, ‘রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। তাদের সবার সহযোগিতা ও রংপুরের সাধারণ মানুষের দোয়া এবং সমর্থন নিয়ে এবার নৌকা মার্কার জয় হবেই।’

দলীয় অপর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডালিয়া বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনি কিছু বলার নেই। সময় এখনও আছে। শেষ পর্যন্ত তারা নাও থাকতে পারেন। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতারা অবগত আছেন। এ বিষয়ে তারাই ব্যবস্থা নেবেন।’

বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নেবে না, তা আগে থেকেই ঘোষণা দিয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর রংপুর মহানগরের সাবেক আমির মাহবুবুর রহমান বেলাল এতদিন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেননি। 

এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং  স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আজ বেলা ৪টা পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে মেয়র পদে ১০ জন, ১১টি সংরক্ষিত নারী আসনে ৬৯ জন এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৯৮ জনসহ মোট ২৭৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ১ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ৯ ডিসেম্বর।

২০১২ সালের ২৮ জুন ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে এক লাখ ছয় হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপিনেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট।  

২০১২ সালের সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল  তিন লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন। দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এক লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পান ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। 

২০১৭ সালে  ভোটার সংখ্যা ছিল তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ এবং নারী এক লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন। 

এবার ভোটার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ এবং নারী ভোটার দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন। ২২৯টি কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।