রংপুর সিটি নির্বাচন : কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে নির্বাচনি সামগ্রী, মাঠে ৪৯ ম্যাজিস্ট্রেট

Looks like you've blocked notifications!
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত ইভিএম মেশিন। ছবি : এনটিভি

আজ সোমবার সকাল থেকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য ইভিএম মেশিনসহ নির্বাচনি সামগ্রী ২২৯টি কেন্দ্রে পাঠানো শুরু হয়েছে। রংপুর পুলিশ লাইন্স মাঠ ও লালকুঠি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসব নির্বাচনি সামগ্রী গ্রহণ করে প্রিজাইডিং অফিসাররা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে যাচ্ছেন নির্দিষ্ট ভোট কেন্দ্রে।

রোববার রাত ১২টা থেকে নির্বাচনি প্রচার শেষ হয়েছে। কাল মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে ১৬ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৩৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গোটা নির্বাচনি এলাকায় বিজিবি, র‍্যাব ও পুলিশের টহল শুরু হয়েছে।

অন্যদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৮৬টি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন নির্বাচন কমিশন। এসব কেন্দ্রে থাকবে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও সিসিটিভি ক্যামেরায় মনিটরিংয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।  রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান,  ২২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৬টি কেন্দ্রকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে বাড়তি ব্যবস্থা হিসেবে কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ ব্যাহত করতে যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আবদুল বাতেন বলেন, ‘২২৯টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায়। এজন্য ভোটগ্রহণের শুরু থেকে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।’ রিটার্নিং কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পোলিং এজেন্টরা নিজ নিজ জায়গায় বসে থাকবেন। কেউ গোপন কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন না।’ 

রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন। আগামীকাল মঙ্গলবার ২২৯টি কেন্দ্রের ১,৩৪৯টি কক্ষে সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

এবার মেয়র পদে জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া এছাড়াও সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ জন এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এদিকে, পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন কড়া অবস্থানে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে ৩৩টি ওয়ার্ডে নিয়োগ করা হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেট। মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। থাকছে র‍্যাব ও বিজিবির স্ট্রাইকিং ফোর্স।

রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে রয়েছেন ১১ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ১১ জন সহায়ক কর্মকর্তা। ৩ হাজার ২শ’ নুতন ইভিএম মেশিন ঢাকা থেকে আনা হয়েছে। ইভিএম প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে যে পরিমাণ ইভিএম ব্যবহার হবে, তার দ্বিগুণ ইভিএম আমরা প্রস্তুত রেখেছি। কোথাও ইভিএমএ সমস্যা হলে সেই কেন্দ্রে থাকা টেকনিক্যাল বিভাগের লোকজন ঠিক করে দেবে। যদি তারা ব্যর্থ হন, তবে ভ্রাম্যমাণ টেকনিক্যাল টিম সেটি ঠিক করবে। যদি তারাও ঠিক করতে না পারেন, তাহলে ওই কেন্দ্রের ভোট যতটুকু ওই ইভিএমে নেয়া হয়েছে ততটুকু অক্ষুণ্ণ থাকবে। সবার উপস্থিতিতে সেটিও সংরক্ষণ করা হবে এবং নতুন আরেকটি ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হবে। দু'টির ফলাফল একত্রিত করে ফলাফল দেয়া হবে। এ জন্য আমরা পর্যাপ্ত ইভিএম রেখেছি।’

আব্দুল বাতেন বলেন, ‘প্রতিটি কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে বিজিবি, দু'টি কেন্দ্রের জন্য একটি র‍্যাবের টিম থাকবে। কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার থাকবে। এ ছাড়াও বিজিবি ও র‍্যাবের স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে, মোবাইল ফোর্স থাকবে। এর বাইরেও ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। কোথাও প্রয়োজন হলে রিজার্ভ ফোর্স ব্যবহার করা হবে।’

প্রতিটি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং সংরক্ষিত ১১ টি ওয়ার্ডের জন্য ১৬ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নিজ নিজ ওয়ার্ডে আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে কিনা, তদারকি করে সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা এর থেকেও কোনো বেশি নির্বাচনি অপরাধ থাকলে সেগুলোর জন্য মামলা নেয়া ও শাস্তি দেয়ার কাজ করবে, অপরাধ দমন করবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া আছে। যে কোনোভাবেই হোক নির্বাচনি এলাকায় সার্বিক পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রাখতে এবং ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে ভোট দেয়ার জন্য গোপন কক্ষে এসে ভোট দিতে পারেন এবং বাড়ি ফিরে যেতে পারেন, সেই বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা হবে।’

২০১২ সালের ২৮ জুন ২০৫.৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকার ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে রংপুর সিটি করপোরেশন গঠনের পর ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেবার ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট এবং বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট। ২০১২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৭৪২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ১২৮ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬১৪ জন।

দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু পেয়েছিলেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট এবং বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার ১৩৬ ভোট। ২০১৭ সালে ভোটার সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ ও নারী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন। এবার ভোটার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন।