তালুকদার আব্দুল খালেকের হ্যাটট্রিক, না কি নতুন নগরপিতা?

Looks like you've blocked notifications!
তালুকদার আব্দুল খালেক। ফাইল ছবি

রাত পোহালেই খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে। সোমবার (১২ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ ভোটেই নির্ধারিত হবে সিটির নগরপিতা। এই পদে লড়ছেন সাতজন। আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকও। সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুও তিনি। প্রশ্ন ঘুরছে প্রকাশ্য ও মনে-মনে—তবে কি এবার কার হ্যাটট্রিক, না কি নতুন নগরপিতা?

গত ১৬ মে মনোনয়নপত্র দাখিলের মাধ্যমে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। আর আজ ১২ জুন সোমবার ভোটগ্রহণের পর নির্বাচিত হবেন একজন মেয়র ও ২৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১০ সংরক্ষিত কাউন্সিলর।

কাল রাতেই ঘোষণা হবে নির্বাচিত নগরপিতার নাম। এ ছাড়া ২৫ মে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর দুই কাউন্সিলরকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছিল।

সর্বপ্রথম ১৮৮৪ সালে খুলনা নগরের মর্যাদা পায়। কলকাতা গেজেট অনুযায়ী, ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর খুলনাকে মিউনিসিপাল বোর্ড ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৩ ডিসেম্বর রেভারেন্ড গগন চন্দ্র দত্ত প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে সময়ে টুটপাড়া, শেখপাড়া, চারাবাটি, হেলাতলা এবং কয়লাঘাট এলাকাযর সমন্বয়ে খুলনা পৌর সরকার যাত্রা শুরু করে। মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অর্ডিন্যান্স (পৌরসভা প্রশাসন অধ্যাদেশ) অনুসারে খুলনা মিউনিসিপাল বোর্ডের নাম পালটে খুলনা মিউনিসিপাল কমিটি করা হয়, পাশাপাশি পৌর এলাকাকে চার দশমিক ৬৪ বর্গমাইল থেকে উন্নীত করে ১৪ দশমিক ৩০ বর্গমাইল করা হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ লোকাল কাউন্সিল অ্যান্ড মিউনিসিপ্যাল কমিটি (ডেসোলেশন অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যারেঞ্জমেন্ট) অর্ডার- ১৯৭২ এর ক্ষমতা বলে খুলনা মিউনিসিপালিটির নাম বদলে খুলনা পৌরসভা করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১২ ডিসেম্বর খুলনা শহরের শতবর্ষপূর্তিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ খুলনাকে মিউনিসিপাল করপোরেশন হিসেবে উন্নীত করেন। ১৯৯০ সালের ৬ আগস্ট খুলনাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা হয়।

১৯৯৪ সালের সালের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে শৈখ তৈয়েবুর রহমান প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৮ সালের ১৩ মে পযর্ন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তারপর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক প্রথমবারে মতো মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মনিরুজ্জানের কাছে আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক পরাজিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পরাজিত করে তালুকদার আব্দুল খালেক দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।

২০২৩ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। ফলে অন্য পাঁচ মেয়র প্রার্থী থাকলেও তালুকদার আব্দুল খালেকের কোনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। সেজন্য তিনি কিছুটা খোশ মেজাজে রয়েছেন। নির্বাচনি প্রচারণাকালে তিনি বলেছেন, তার এবারের প্রচারণা মেয়র নির্বাচনের জন্য নয় আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জন্য।

এবার অন্য মেয়র প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টি মনোনীত শফিকুল ইসলাম মধু, ইসলামী আন্দোলনের  হাফেজ আব্দুল আওয়াল, স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফেক এবং জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন।

৩১টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন মোট ১৩৬ জন। এর মধ্যে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে খুরশিদ আহমেদ টোনা এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে এ জেড মাহমুদ ডন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এখন ২৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বি রয়েছেন। এর মধ্যে নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে সেনাপ্রধানের ভাই এস এম রফি উদ্দিন আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। অপরদিকে দশটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি) সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ—এই দুই ভাগে ভাগ করেছে। এ বছর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ১৬১টি ভোটকেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ ও বাকি ১২৮টি কেন্দ্রকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

জানা গেছে, নগরীর ৪, ৬, ৭, ১০ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ১৬, ১৯ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রগুলোকে অধিক ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে ছয়টি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৯টি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ১২টি, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৯টি, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১০টি, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সাতটি এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ডে সাতটি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মোট ভোটার পাঁচ লাখ ৩৫ হাজার ৫২২ জন, এর মধ্যে পুরুষ ভোটার দুই লাখ ৬৮ হাজার ৮২৮ জন এবং নারী ভোটার দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৪ জন।

খুলনা সিটি করোপরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে ভোটগ্রহণকে ঘিরে সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় আট হাজার ৩০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।