বৈধ মনোনয়নের বিরুদ্ধেও চলছে আপিল, তালিকায় আ.লীগ-জাপার প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তারা ৭৩১টি বাতিল ঘোষণা করেছিলেন। প্রার্থিতা ফেরত পেতে সেই বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করছেন প্রার্থীরা, যা শেষ হচ্ছে আগামীকাল শনিবার (৯ ডিসেম্বর)। তবে, শুধু যে প্রার্থিতা ফেরত হতেই আপিল হচ্ছে তেমনটা নয়; চলছে বৈধ ঘোষিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধেও। সংখ্যা অনেক বেশি না হলেও তা নিয়ে চলছে বেশ আলোচনা। এই তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সদস্যও।
আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ৩০ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়। এরপর ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ৫ ডিসেম্বর শুরু হয় আপিল।
ইসির তথ্যমতে, গত ৫ ডিসেম্বর থেকে আপিল আবেদন জমা নেওয়া শুরু হওয়ার পর আজ পর্যন্ত মোট চার দিনে আবেদন হয়েছে ৪৩১টি। এর মধ্যে প্রথম দিন ৪২টি, দ্বিতীয় দিনে ১৪১টি, তৃতীয় দিনে ১৫৫টি ও চতুর্থ দিনে আজ শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ৯৩টি আপিল জমা হয়েছে। এর মধ্যে বৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে আটটি।
এবার বৈধতা ঘোষণার বিরুদ্ধে করা আপিলের তালিকায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত তিন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন–ফরিদপুর-৩ আসনের শামীম হক, কুমিল্লা-৩ আসনের ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন ও সিলেট-৩ আসনের হাবিবুর রহমান।
জাতীয় পার্টির (জাপা) রয়েছেন দুজন। তারা হলেন—জাপার কো-চেয়ারম্যান ও পটুয়াখালী-১ আসনের রুহুল আমিন হাওয়ালাদার, একই দলের মহাসচিব ও কিশোরগঞ্জ-৩ মুজিবুল হক চুন্নু।
স্বতন্ত্রের মধ্যে কক্সবাজার-১ আসনের জাফর আলমের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
আগামীকাল আপিল শেষে পরের দিন রোববার থেকে আপিল নিষ্পত্তির শুনানি শুরু হবে। তফসিল অনুযায়ী, ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর আপিল নিষ্পত্তি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৈধ প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব আশোক কুমার দেবনাথ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ঘোষণা করা আট বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপিল করা হয়েছে। এসব আপিল শুনানি করবেন মাননীয় কমিশন। তখন সবকিছু যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
যে কারণে বৈধ হওয়া প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল
ফরিদপুর- ৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হকের বিরুদ্ধে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে তার প্রার্থিতা বাতিলের জন্য আপিল করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ। আজ এই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে তার আইনজীবী মো. গোলাম কিবরিয়া আপিল আবেদন জমা দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় তথ্য-উপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ দিলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল না করে বৈধ ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হয়েছে।’
কুমিল্লা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আবেদন করেছেন একই আসনের কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী বসির আহম্মেদ। তার অভিযোগ, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের হলফনামায় ত্রুটি রয়েছে।
কুমিল্লা-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবুল কালাম আজাদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছেন একই আসনে তরীকত ফেডারেশনের প্রার্থী মো. আজহারুল করিম মুন্সি। তবে, বৈধ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য জানাতে রাজি হননি তিনি।
সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধেও দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগ এনে তার প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করা হয়েছে। এই আবেদনটি করেছেন একই আসনের জাপার প্রার্থী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। জাপার প্রার্থী জানান, হাবিবুর রহমান মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামাতেও দ্বৈত নাগকরিত্বের কথা স্বীকার করেছেন।
পটুয়াখালী-১ আসনে জাপার কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওয়ালাদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিতে আপিল করেছেন একই আসনের ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম। আবেদনে নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় রুহুল আমিন হাওয়ালাদের কর বকেয়া ছিল। বাছাইয়ের দিন তিনি বকেয়া পরিশোধ করেছেন। বিষয়টি নির্বাচনি আইন পরিপন্থি।
কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে জাপা প্রার্থী মুজিবুল হক চুন্নুর প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেছেন ওই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নাসিরুল ইসলাম খান। তবে, রিটার্নিং কর্মকর্তার বাছাইয়ে নাসিরুল ইসলাম খানের প্রার্থিতাও বাতিল হয়েছে। চুন্নুর বিরুদ্ধে নাসিরুল ইসলাম খানের অভিযোগ, রূপালী ব্যাংকের পুরানা পল্টন করপোরেট শাখা থেকে পাঁচ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে জামিনদার জাপার এই প্রার্থী। দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি চুন্নু। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রার্থিতা আইন মোতাবেক বাতিলযোগ্য।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রাথী প্রার্থী মাহমুদ হাসানের প্রার্থিতা বাতিলে আবেদন করেছে একই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বদরুল আলম প্রদীপ। আর কক্সবাজার-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য জাফর আলমের প্রার্থিতার বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে আপিল হয়েছে। জাফর আলমের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেন একই আসনের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির আবদুল আউয়াল মামুন। মামুন বলেন, জাফর আলম তার হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হকের মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেছেন ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রনজিত কুমার রায়।
বরিশাল-৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে আপিল করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী কে বি এস আহমেদ।