ভোটের দিন কেউ অনিয়ম করলে ভোট বন্ধ করে দেব : ইসি রাশেদা

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আজ বুধবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা। ছবি : এনটিভি

ভোটের মাঠ আপনাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ইনশাল্লাহ। কোথাও কোনো অসুবিধা হলে জাস্ট প্রমাণ দেন, এখনি অ্যাকশান নেব। যেখানেই অনিয়ম, সেখানেই অ্যাকশন। প্রয়োজনে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। ভোটের দিনও যদি কেউ অনিয়ম করে, আমরা ভোট বন্ধ করে দেব।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আজ বুধবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা এ মন্তব্য করেন।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক দলের রাইট আছে ভোটে আসা না আসার। কিন্তু, ভোট প্রতিহত করা কিন্তু অসাংবিধানিক কাজ। ভোটকে কখনো প্রতিহত করা যাবে না। ভোটকে কেন্দ্র করে কোনো নাশকতামূলক কাজ করা যাবে না। সেটা আপনারা সবাই জানেন। যদি এ ধরনের কাজ কেউ করেন, আমরা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা প্রস্তুত আছে। প্রচলিত আইনে যেভাবে ব্যবস্থা নিতে হয়, তারা সেভাবে ব্যবস্থা নেবে।

দলীয় সরকারের অধীনে থেকে সবগুলো উইংসের নির্বাচন করার সক্ষমতা রাখছে কী এবং নিরপেক্ষ থাকছে কি না? এমন প্রশ্ন করলে রাশেদা সুলতানা বলেন, আমি কিন্তু বেশ কয়েকবার বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে গিয়েছি। আমি রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে আছি। প্রত্যেক জেলায়, প্রত্যেকটা বাহিনীর সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক সভাও করেছি আমরা। আমি বিশ্বাস করি নির্বাচন একটা টিমওয়ার্ক। সমন্বয় যদি না থাকে কাজটা হবে না। আমি রাশেদা সুলতানা একা যদি করার থাকত আমি আমার জীবনের সমস্ত কিছু, শ্রম সততা, নিরপেক্ষতা দিয়ে আমি করে ফেলতে পারতাম কি পারতাম না, তবে চেষ্টা থাকতো। যখন সবগুলো বাহিনী একসঙ্গে থাকে তাদের সবাইকে আমি যদি সমন্বয়ের মধ্যে আনতে না পারি, তাদের মধ্যে যদি বার্তা না পৌঁছাতে পারি তাহলে কিন্তু সমন্বয়ের কাজটা হয় না। যে কারণে আমরা বারবার গেছি এবং এজন্য আমি আশ্বস্ত। আমার মনে হয় সমন্বয়ের কাজটা খুব ভালোভাবেই হয়েছে। এর ফলে ভালোভাবে সবাই ফিল্ডে একত্রিত হয়ে কাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি এবারের খুব সুন্দর একটা নির্বাচন হবে।

এবারের নির্বাচনে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি আসছে না, সেক্ষেত্রে ভোটারদেরকে কেন্দ্রে আনতে আপনারা ব্যাপারটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন কিনা বা গ্ৰহণযোগ্য হবে কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা বলেন, এটাকে আমরা চ্যালেঞ্জ বলব না। তবে আমরা মাথায় নিয়েছি ভোটারদের উপস্থিতি লাগবে। ভোটারদের ইনভলমেন্টটা লাগবে এবং এই ব্যাপারটাকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছি। যে কারণে ভোটারদের আনার ব্যাপারে অনেকরকম প্রচারণা এবং ভোটার সচেতনতা নিয়ে সবসময় কিন্তু ম্যাসেজ যাচ্ছে। আমরা কিন্তু অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি, টিভিসি করেছি, আমাদের এলাকাভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলোতে কিন্তু সেগুলো প্রচার হচ্ছে। ইভেন আমরা লোকাল প্রশাসনকে বলে আসছি আপনারাও জনগণের মধ্যে প্রচার করেন। আমরা প্রার্থীদের সঙ্গেও বসেছি। প্রায় আট থেকে দশটা জেলার প্রার্থীদের সঙ্গে বসে আমি নিজে মিটিং করেছি। আমরা তাদের বলেছি ভোটার ছাড়া ভোটের কিন্তু দাম নেই, ভোটার হচ্ছে ভোটের প্রাণ। ভোটে যদি ভোটার না থাকে ভোট কিন্তু নিষ্প্রাণ হয়ে যাবে। আপনার এই জায়গাগুলো খেয়াল রাখবেন। আপনারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যান তাদের ভোটকেন্দ্রে আসার দিকে আকৃষ্ট করেন। ভোটার আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের। যদি ভোটার ভোটকেন্দ্রে কম হয়ে যায়, তবে তা উৎসবমুখর হবে না, একটু তো ভোট নিষ্প্রাণ হবেই।

তাহলে কী নির্বাচন প্রশ্নের মুখে পড়বে? এমন প্রশ্ন করা হলে রাশেদা সুলতানা বলেন, এটা আমি বলব না। সময় বলবে। তবে, উৎসবমুখর যে একটা ভাব, ভোটার যদি না থাকে তা কমে যাবে। আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বারবার গেছি এবং এজন্য আমি আশ্বস্ত। আমার মনে হয় সমন্বয়ের কাজটা খুব ভালোভাবেই হয়েছে। এর ফলে ভালোভাবে সবাই ফিল্ডে একত্রিত হয়ে কাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি এবারের নির্বাচনটা খুব সুন্দর একটা নির্বাচন হবে।

টার্ন আউট কেমন হবে, এমন প্রশ্নে রাশেদা বলেন, তা আমি বলতে পারব না। তবে, আমরা মাঠ পর্যায় থেকে যতটুকু তথ্য পাচ্ছি, তাতে আমরা আশাবাদী ভোটার আসবে। মাঠ দেখলেও একেবারে শতাংশ ধরে বলা মুশাকিল। তবে, আশা করি একটা ভালো অংশ আসবে।

দেশের অন্যতম একটি বড় দল নির্বাচনে শুধু অংশগ্রহণ করেনি, তা নয়। ভোট যখন হচ্ছে, তখন সে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীকে জেলে রাখা হয়েছে। সেই অবস্থায় আপনারা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কথা বলছেন, অন্যান্য দল থেকে কিংবা সব মহল থেকে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। আসলে এ অবস্থায় নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে বলে আপনি মনে করেন, এমন প্রশ্নে রাশেদা সুলতানা বলেন, জেলে রাখারাখি ব্যাপার না। আমার এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই। এটা পুরাই পলিটিক্যাল ব্যাপার। এটার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, আমরা যেটা মনে করি, ভোটে আসা বা না আসা দলের একেবারেই স্বাধীন ইচ্ছে। কেউ যদি ভোটে না আসে, তার জন্য তো আর সংবিধান থেমে থাকবে না। কমিশনেরও থেমে থাকার কোনো উপায় নেই। এটা সাংবিধানিক দায়িত্ব, আমাদের পালন করতে হবে। আমরা যদি ডিউ টাইমে ইলেকশন না করতে পারি, দেশ কিন্তু একটা সংকটের মধ্যে পড়ে যাবে। একটা সাংবিধানিক গ্যাপে পড়ে যাব। ওই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের আর ভাবার সময়ও নাই।

রাজনৈতিক কার্যালয় যদি বন্ধ থাকে, নেতাকর্মীরা যদি জেলে থাকে তাহলে তারা কীভাবে ভোটে আসবে, এমন প্রশ্নে রাশেদা সুলতানা বলেন, সেটা আমি বলতে পারব না। এটা পলিটিক্যাল ইস্যু, কীভাবে হবে, সেটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।

তাদের ভোটে না আসার কারণে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে, এ কথার পর রাশেদা সুলতানা বলেন, চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে কিনা, সেটা সময় উত্তর দেবে। আমি সময়ের আগে অগ্রিম কিছু বলব না। কারণ, ভোটটা যদি আসলেই সব মহলে সমাদৃত হয়, তাহলে আর চ্যালেঞ্জের কিছু থাকে না।

ভোটের দিন ইসির নিবন্ধিত কয়েকটি রাজনৈতিক দল যদি সহিংসতা করে, তাহলে ইসি কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা, এমন প্রশ্নে রাশেদা সুলতানা বলেন, রাজনৈতিক দল তারা আসতেও পারে, নাও পারে; এটা তাদের ইচ্ছে। এটা শুধু উনারা বর্জন করেছেন তা নয়, যেকোনো রাজনৈতিক দলের রাইট আছে ভোটে আসা না আসার। কিন্তু, ভোটকে প্রতিহত করা কিন্তু অসাংবিধানিক কাজ। ভোটকে কখনো প্রতিহত করা যাবে না। ভোটকে কেন্দ্র করে কোনো নাশকতামূলক কাজ করা যাবে না। সেটা আপনারা সবাই জানেন। যদি এ ধরনের কাজ তারা করেন, আমরা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি, তারা প্রস্তুত আছে। প্রচলিত আইনে যেভাবে ব্যবস্থা নিতে হয়, তারা সেভাবে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নেব কী নেব না, সে বিষয়ে আমরা এখনও কিছু ভাবিনি।