রাত পোহালেই নওগাঁ-২ আসনে ভোট

Looks like you've blocked notifications!
নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগেরসহ দুই স্বতন্ত্রপ্রার্থী। ছবি : এনটিভি

রাত পোহালেই বাতিল হওয়া নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনের সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চার প্রার্থী। জাপা, দুই স্বতন্ত্রপ্রার্থীর সঙ্গে লড়াই হবে নৌকার।

জেলার বরেন্দ্র জনপদ হিসেবে পরিচিত নওগাঁ-২ (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) আসনে আজ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে হচ্ছেন সংসদ সদস্য? আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু। তাঁর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে স্বতন্ত্রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলমের। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এই প্রার্থী ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় পাল্টে যেতে পারে ভোটের হিসাব-নিকাশ। 

গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে নির্বাচনি প্রচারণা শেষ হয়েছে। এ নির্বাচনে কে জয়ী হবেন, তা নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা পাড়া-মহল্লায় এবং চায়ের টেবিলে প্রার্থীদের পক্ষে ও বিপক্ষে চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা। অপর দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাহমুদ রেজা ৩০ জানুয়ারি দুপুরে উচ্চ আদালতের রায়ে তাঁর প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। ৩১ জানুয়ারি দুপুরে ঈগল প্রতীক পেয়েছেন তিনি। তিনিসহ এ আসনে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি কে হাসবেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।

স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, শহীদুজ্জামান সরকার ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নানকে হারিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শামসুজ্জোহা খান জোহা (১৯৯৬-২০০১) সালে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু এলাকায় দাপট দেখিয়ে আসছেন। 

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলায় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রামের হাট-বাজার ও বিভিন্ন মোড়ে, পাড়া-মহল্লায় প্রার্থীদের ব্যানার আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে। শেষ মুহূর্তে কর্মী-সমর্থকদের নানা কৌশল ও পরামর্শ দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

ভোটের মাঠে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা গেছে, এই আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সাবেক ও বর্তমান পদ বঞ্চিত নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে ইঞ্জিনিয়ার আখতারুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

অপর স্বতন্ত্রপ্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আইয়ুব হোসেন নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্রপ্রার্থী আখতারুলের পক্ষ নিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে, এ আসনে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না—এমনটাই দাবি আওয়ামী লীগের একাধিক পদ বঞ্চিত সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক একাধিক চেয়ারম্যানের। তবে এ দৌড়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই  জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেনও।

উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আব্দুল হাই দুলাল বলেন, ‘এর আগে উপজেলায় চার খলিফা ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে অর্ধশতাধিক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বালু মহল থেকে শুরু করে সব জায়গায় টেন্ডারবাজিসহ নিজেদের ইচ্ছেমতো অপকর্ম করে যাচ্ছে। এর পরিবর্তন না হলে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে।’

পত্নীতলা উপজেলার (পাটিচড়া) পাটিচোড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার ছাদেক উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘বর্তমান সংসদ সদস্য দুই উপজেলায় তাঁর পছন্দের খলিফারদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তা ছাড়া যে নেতার কাছে সাধারণ মানুষ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেতে পারেন না তাদের পরিবর্তন দরকার। এ কারণেই অনেকেই আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্রপ্রার্থী আখতারুলের পক্ষ নিয়েছে।’

লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন বলেন, নওগাঁর এ অবহেলিত জনপদের (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে আমি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে এ এলাকার সাধারণ ভোটাররা আমাকেই ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন বলে আশা করছি।’

স্বতন্ত্রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলম বলেন, ‘অবহেলিত এ জনপদের মানুষ টেন্ডারবাজি ও সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি চায়। তাই আমি এ এলাকায় কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব তৈরি এবং পাশাপাশি দুই উপজেলার শিক্ষিত ও বেকার তরুণদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের নিয়ে কৃষিবান্ধব, শিল্পসমৃদ্ধ উপজেলা গড়ে তুলতে চাই। সাধারণ ভোটারা আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবেন বলে আশা করছি।’

সাবেক সংসদ সদস্য ও নৌকা প্রতীকার প্রার্থী শহিদুজ্জামান সরকারের পক্ষে  ধামইরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলদার হোসেন বলেন, ‘খলিফা বলে এখানে কেউ নেই। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনে গণতান্ত্রিক পন্থায় বিভিন্ন কমিটি হয়েছে। কমিটিতে অনেক নতুন মুখ এসেছে, আবার পুরাতন অনেকেই বাদ পড়েছেন। এতে অনেকের মনে কষ্ট থাকতে পারে কিন্তু ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলছুট হয়েছে বা অন্য পক্ষ নিয়েছে এমন তথ্য জানা নেই। দীর্ঘ ১৫ বছর দল ক্ষমতায়। এমপিও ক্ষমতায়। এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাধারণ মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকেই ভোট দেবে।’

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ধামইরহাট উপজেলায় আট ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৫৭ হাজার ১৫। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৮ হাজার ৩০১ জন, মহিলা ৭৮ হাজার ৭১৩ এবং তৃতীয় লিঙ্গের একজন। 

নির্বাচনে ৫৩ প্রিজাইডিং অফিসার ও ৩০৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন ৬০৮ জন এবং ৫৩টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ২৯১ এবং অস্থায়ী ১৩টি। এবারই প্রথমবারের মতো ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে। ভোটের দিন  পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে নয়জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। অপর দিকে পত্নীতলা উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ ৯৯ হাজার ১১৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ৯৯ হাজার ২৭১ এবং নারী ভোটার সংখ্যা ৯৯ হাজার ৮৪৬ জন। 

নির্বাচনে ৭১ জন প্রিজাইডিং অফিসার ও ৪০২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৮০৪ জন এবং ৭১টি ভোটকেন্দ্রে স্থায়ী ভোট কক্ষের সংখ্যা ৪০২ এবং অস্থায়ী ২৮টি। ১২ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। 

ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আসমা খাতুন এবং পত্নীতলার (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্ত)  ইউএনও ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার টুকটুক তালুকদার বলেন, এ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শতভাগ উৎসবমুখর ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন ও নিরাপত্তার দায়িত্বে (দুই উপজেলার দুটি পৌরসভা ও ১৯টি ইউনিয়নে)  ২১ জন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও আট প্লাটুন বিজিবিসহ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে চারজন ও সাধারণ কেন্দ্রে তিনজন পুলিশ, আনসার ৬৩৬ জন, পুলিশের মোবাইল টিম ১৩টি, স্ট্রাইকিং টিম তিনটি ও ছয়টি চেকপোস্ট নিয়মিত কাজ করছে।

ভোটগ্রহণের জন্য দুই উপজেলায়ই সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।