আইনি জিজ্ঞাসা

সন্তানকে কি ত্যাজ্য করা যায়?

Looks like you've blocked notifications!

কোনো সন্তান কথা মতো না চললে, আদেশ না মানলে, অবাধ্য হলে বা ঝগড়া-বিবাদ করলে বাবা-মা তাদের ত্যাজ্য করার হুমকি দেন। এমনকি সন্তানকে ত্যাজ্য ঘোষণারও অনেক নজির আছে। এখন প্রশ্ন হলো, সেটা  আইনসঙ্গত কি না।

সন্তানকে ত্যাজ্য করার ঘোষণা সাধারণত মৌখিকভাবে দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই স্ট্যাম্পে লিখে বা নোটারি পাবলিক করেও সন্তানকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন। সেই পরিস্থিতিতে মা-বাবার মৃত্যুর পর  ত্যাজ্য সন্তানের নিকটাত্মীয় ও স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহল সক্রিয় হয়ে উঠে। তারা এমনই এক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যাতে করে সেই ত্যাজ্য সন্তান কোনো প্রকার সম্পদ পেতে না পারে।

অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি মূল মালিকের কাছে না পৌঁছে  হরিলুট করে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যদিও আইন অনুযায়ী, এটা সম্পূর্ণ বেআইনি, নীতি বহির্ভূত ও গর্হিত কাজ।

সুনির্দিষ্ট কোনো ধারা না থাকলে মুসলিম পারিবারিক আইন ও হিন্দু আইনে  পিতা-মাতা ও সন্তানের সম্পর্কটা কোনো চুক্তি নয়। সম্পর্কটি বিবাহ, তালাক বা দাসমুক্তির মতো নয় যে যেকোনো সময় ভেঙে ফেলা যায়। রক্তের সম্পর্ক কখনো মুখের কথায় পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হয় না। এটা  স্থায়ী বিষয়।

তবে একটা বিষয় সর্বদাই গ্রহণযোগ্য। তা হলো কেউ যদি ইচ্ছে করে, তাহলে তাঁর মোট সম্পদ থেকে এক তৃতীয়াংশ যেকোনো সময় যেকোনো ব্যক্তিকে দান করতে পারবে, যা মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে ওই ব্যক্তিকে কেউ বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু সেটি নিজের সন্তানদের ত্যাজ্য করে নয়।

তাই এই ধরনের ত্যাজ্য যদি কেউ করে, তাহলে সেই ত্যাজ্যের বিষয় ধর্মীয় বা রাষ্ট্রীয় কোনো নিয়মেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এই ধরনের নীতিমালা না ইসলামে আছে, না রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কোথাও লিপিবদ্ধ আছে। 

কিন্তু ত্যাজ্যপুত্র বা কন্যা বলতে কোনো আইনি বিধান না থাকলেও মা-বাবা ইচ্ছে করলে তাঁর সব সম্পত্তি সাফ কবলা রেজিস্ট্রি বা দান  করে অপর সন্তানকে বঞ্চিত করতে পারেন। তবে সাফ কবলা বা দান লিখিত ও রেজিস্ট্রিকৃত না হলে ত্যাজ্যপুত্র বা ত্যাজ্য কন্যা বললেই বা ঘোষণা করলেই সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবে না।  সম্পর্ক ছিন্নও হবে না।

মুসলিম আইন অনুযায়ী, কাউকে ত্যাজ্যপুত্র করা বা মৃত্যুর সময় অসিয়তের মাধ্যমে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হারাম এবং অবৈধ। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই যাকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করা হয় কিংবা যাকে তার উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার অসিয়ত করা হয়, সে কোনোভাবেই তার উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।

অন্যদিকে, হিন্দু আইনেও ত্যাজ্যপুত্র করার কোনো বিধান নেই। হিন্দু আইনে ‘তাজ্য’ করে কোনো ব্যক্তি তার উত্তরাধিকারীদের সম্পত্তির দাবি থেকে বঞ্চিত করতে পারে না।

উল্লিখিত আলোচনা থেকে স্পষ্ট, ত্যাজ্যপুত্র বলে কোনো বিধান আইনে নেই। তাই কেউ তার সন্তানকে ত্যাজ্য করলেও সে  উত্তরাধিকার থেকে বঞ্ছিত হবে না। এটা নিছক একটি ভ্রান্ত ধারণা।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট