মামলা না চালিয়েও আইনি প্রতিকার পেলেন চন্দনা

Looks like you've blocked notifications!

২০১৪ সালে পারিবারিকভাবে চন্দনা ভৌমিকের (ছদ্দনাম) বিয়ে হয় পলাশ বসুর সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই স্বামী পলাশ বসু, ভাশুর তমাল বসুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে যৌতুকের জন্য নির্যাতিত হন চন্দনা ভৌমিক। যৌতুকের জন্য বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় চন্দনাকে।

এর পর চন্দনা প্রতিকার পেতে যৌতুক নিরোধ আইনের, ১৯৮০-এর ৪ ধারায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে আরেকটি মামলা করেন।

উল্টো স্বামী পলাশ বসু, স্ত্রী চন্দনা ভৌমিক ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এভাবে দুই পক্ষের মধ্যে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর চন্দনা অবস্থা বেগতিক দেখে ও আইনির জটিলতা দেখে ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের দ্বারস্থ হন। লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজেশ চৌধুরীর মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষের মধ্যে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) সংক্রান্ত চুক্তি হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উভয় পক্ষ পৃথকভাবে বসবাস করতে সম্মত হয়।

আবেদনকারী প্রতিপক্ষের কাছ থেকে খোরপোষ বাবদ মোট তিন লাখ ২০ হাজার টাকা বুঝে পান। উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে পরস্পরের বিরুদ্ধে চলমান ১১টি মামলা প্রত্যাহার করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সম্মত হয়। আর এতে চন্দনা মামলা না চালিয়ে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আইনি সহায়তা পেলেন।

ঢাকার নিম্ন আদালতে চন্দনার মতো অনেক নারী ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য আদালতের বারান্দায় দিনের পর দিন ঘুরতে থাকেন। বিভিন্ন আইনি জটিলতায় শেষ পর্যন্ত হতাশা হয়ে বা আইনজীবী ও আদালতের বিভিন্ন কোর্ট ফির খরচ দিয়ে মামলা না চালিয়ে চলে যান। আর এতে তাঁরা ন্যায়বিচার পান না। কিন্তু সম্প্রতি ঢাকার লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা রাজেশ চৌধুরী যোগদান করার পর থেকে লিগ্যাল এইডে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীরা তাঁদের ন্যায়বিচার খুব সহজে পেয়ে গেছেন। আর এতে বিচারপ্রার্থীদের আদালতে দিনের পর ঘুরতে হয়নি।

তেমনি নাইমার (ছদ্দনাম) স্বামীকে নিয়ে সংসার নিয়ে ভালোই চলছিল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই যৌতুকের জন্য স্বামী ও শাশুড়ির নির্মমতার শিকার হতে হয় নাইমাকে। রাগে-অভিমানে নাইমা চলে যান বাবার বাড়ি। আশায় ছিলেন স্বামী তাঁর ভুল বুঝতে পারবেন, তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সময় চলে যায়, কেউ তাঁকে নিতে আসা তো দূরের কথা, লোকমুখে শুনতে পান তাঁর স্বামী আবার বিয়ে করবেন। দিশেহারা হয়ে ছুটে আসেন জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে (এডিআর) তিনি তাঁর সংসার ফিরে পান। বর্তমানে তিনি স্বামীর সংসারে ভালো আছেন।

শিউলি ও নাফিয়ার মতো ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত ১৬০টি এডিআর নিষ্পত্তি হয়েছে। এঁদের মধ্যে হতদরিদ্র পরিবার মামলা না করেই তাঁদের ন্যায়বিচার পেয়েছেন। তাঁরা লিগ্যাল এইডের অফিসের মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা দেনমোহর ও ক্ষতিপূরণ বাবদ পেয়েছেন।

এ বিষয়ে নাফিয়া এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজেশ চৌধুরীর সহায়তায় তিনি তাঁর স্বামীর সংসারে ফিরতে পেরেছেন। লিগ্যাল এইড অফিসার সমন্বয় করে তাঁর দাম্পত্য জীবন সুখকর করতে পেরেছেন।

এ বিষয়ে লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) রাজেশ চৌধুরী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মামলা না চালিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়া সম্ভব। এ জন্য ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড কাজ করে যাচ্ছে। দুস্থ ও গরিবদের জন্য লিগ্যাল এইডের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি অনেক কার্যকরী পদ্ধতি। সামনে থেকে সব মামলায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে  মামলা নিষ্পত্তি করা হবে।

ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড অফিস সহকারী মোহাম্মদ তুষার জানান, বর্তমান লিগ্যাল এইড অফিসার ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট যোগদান করেন। তিনি এক বছরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ১৬০টি সম্পন্ন করেছেন। এক বছরে চার হাজার ৮৯৩ জন বিচারপ্রার্থী আইনগত সহায়তা পেয়েছেন। এ ছাড়া এক হাজার ৭৯৯ জন বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার পেয়েছেন।

তুষার জানান, বর্তমানে অনেক বিচারপ্রার্থী বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে লিগ্যাল এইডে আসছেন। তবে লিগ্যাল এইডের পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবে অনেক আইন সহায়তা প্রার্থী আইনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ ছাড়া শহরাঞ্চলের লোকজন লিগ্যাল এইড সম্পর্কে কিছুটা জানলেও গ্রামাঞ্চলের লোকজন এ সেবা সম্পর্কে খুব একটা ভালো জানে না। এর জন্য গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক প্রচারণার প্রয়োজন আছে বলে জানান তিনি।