লর্ড ডেনিংয়ের আইনের বই অনুবাদ করলেন জীবরুল হাসান

Looks like you've blocked notifications!

লর্ড ডেনিং বিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত বিচারক। তিনি ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড হতে গণিত ও  আইনে প্রথম শ্রেণির ডিগ্রি লাভ করে ১৯২৩ সালে ব্যারিস্টার হিসাবে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৪৪ সালে হাই কোর্টের বিচারক, ১৯৪৮ সালে সাধারণ লর্ড জাস্টিস অব আপিল এবং ১৯৫৭ সালে হাউস অব লর্ডসের লর্ড অব আপিল হন। হাউস অব লর্ডসে পাঁচ বছর অতিবাহিত করে ১৯৬২ সালে ফিরে আসেন প্রভাবশালী পদ কোর্ট অব আপিলের ‘মাস্টার অব দ্য রৌলস’ হিসেবে। এ পদে ছিলেন পরবর্তী ২০ বছর। প্রতি বছর কোর্ট অব আপিলে ৮০০টির মতো মামলা শুনতেন এবং তার মধ্যে মাত্র ৫০-৬০টি মামলা হাউস অব লর্ডসে আপিল হতো।   

ন্যায়বিচারের স্বার্থে লর্ড ডেনিং ছিলেন পূর্বের নজির অগ্রাহ্য করার পক্ষপাতি। সাধারণ ভাষায় লিখিত তার রায়গুলো প্রাঞ্জল। পক্ষপাতহীন বিচার ও জনগণের স্বার্থে তিনি আইনকে ব্যবহার করেছেন। ন্যায়বিচারের তীব্র অনুভূতি মাঝেমধ্যেই তাকে বিতর্কে জড়াত। বিশেষ করে আইনের ব্যাখ্যা না করে বরং আইন পরিবর্তন করা আদালতের কাজ কি না এই প্রশ্নে। ন্যায়বিচারের প্রতি তার গভীর অনুরক্তির মূলে ছিল নৈতিকতার দৃঢ় বিশ্বাস। বুদ্ধিবৃত্তিক গুণের সাথে তার সাধারণ স্বভাব ও আকর্ষণীয় ব্যবহারের মিল ছিল বেশ। তাকে বলা হতো ‘জনগণের বিচারক’।

পেশাগত জীবনের স্মৃতিচারণা ও আইন সংস্কারের বার্তা নিয়ে লিখেছেন বেশ কয়েকটি বই। তাদের  একটি ১৯৮২ সালে লেখা ‘হোয়াট নেক্সট ইন দ্য ল’ বইয়ে তিনি ইংল্যান্ডের গত কয়েক শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আইনজ্ঞ, জুরি ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলা ও ঘটনা, আইন সংস্কার, লিগ্যাল এইড ব্যবস্থা, মানহানি মামলা, গোপনতা ও আস্থা, বিল অব রাইট্স এবং  ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে  আলোচনা করেন। বিভিন্ন মামলার সূত্র, কমিশন রিপোর্ট ও নিজের লেখা রায়ের অংশ ব্যবহার করেন। বিদ্যমান ব্যবস্থার ত্রুটি-বিচ্যুতি উদ্ঘাটন করে সমাধান বাতলিয়ে দেন। আবার এ বইয়ের কারণেই তাকে ‘মাস্টার অব দ্য রৌলস’ হতে সরে দাঁড়াতে হয়। বাছবিচারহীনভাবে জুরি-সদস্য নেওয়ার সমালোচনা করেন। ধারণা করা হয়, ব্রিস্টল দাঙ্গা মামলায় জুরি-সদস্য হিসেবে কিছু কালো ব্যক্তি অনুপযুক্ত বলে ইঙ্গিত করেন। বই প্রকাশের পরপর দুই কালো জুরি-সদস্য তার বিরুদ্ধে মানহানি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি পর্যন্ত নেন। ঝামেলা আর না বাড়িয়ে বরং ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান লর্ড ডেনিং। পদত্যাগ করেন আদালতের বিচারকার্য থেকে।

জীবরুল হাসান লর্ড ডেনিংয়ের ‘হোয়াট নেক্সট ইন দ্য ল’ বইটি সম্প্রতি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন। অনুবাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে আইনে প্রথম শ্রেণিসহ স্মাতক ও স্মাতকোত্তর এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও জেনোসাইড বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে ২০১৩ সালে বিচারক হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের একান্ত সচিব (সিনিয়র সহকারী জজ)  হিসেবে কর্মরত আছেন জীবরুল।