আইনজ্ঞদের বিশ্লেষণ

বোমা হামলায় কী বিচার

Looks like you've blocked notifications!

সারা দেশে বোমা বা পেট্রলবোমা হামলার ঘটনায় অপরাধীদের ব্যাপারে কঠোর হতে যাচ্ছে সরকার। আর অপরাধের বিচার কোন আইনে হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বোমা হামলার ঘটনা বিচারের জন্য ২০০৯ সালের সন্ত্রাস দমন আইন (সংশোধিত ২০১৩) সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা আছে। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের।’ এ আইনের সঠিক ও কার্যকর প্রয়োগের বিষয়ে মাঠপর্যায়েও আলাপ হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী। তিনি আরো জানান, ‘এ আইন বাস্তবায়ন হলে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন হয়রানির শিকার না হন, সেটি মাথায় রেখেই এর প্রয়োগ করা হবে।’ 

তবে অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করছেন, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগ ছাড়াই পেট্রলবোমা নিক্ষেপকারীর বিচার সম্ভব। এসিড আইনের মাধ্যমে বোমা নিক্ষেপকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন আইন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি বোমা হামলাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ বাস্তবায়নে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে এ মতামত দেন আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বোমা হামলার বিচার সাধারণ আইনে সম্ভব। বোমার আঘাতে নিহত হলে ফৌজদারি দণ্ডবিধি ৩০২ ধারা অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তিতে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। হুকুমের আসামিদের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে। তবে আহতদের ক্ষেত্রে এসিড আইন ব্যবহার করা যেতে পারে।’

তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকট শ ম রেজাউল করিম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দাহ্য জাতীয় পদার্থ দিয়ে কাউকে জখম করা এবং জখমের ফলে স্থানীয়ভাবে শরীরের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্থায়ীভাবে বিকৃত বা কর্মক্ষমতা হারালে তা এসিড অপরাধ দমন আইনে বিচার্য। ওই জখমের ফলে মৃত্যু হলে, সে অপরাধ এসিড অপরাধ আইনে সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এসিড অপরাধ আইনে অপরাধকারী, মধ্যস্থতাকারী, প্ররোচনাদানকারী, শাস্তির আওতায় আসবে।’

রেজাউল করিম যোগ করেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে এ আইনে। এ ক্ষেত্রে ৩০২ প্রযোজ্য নয়। কেননা লাঠি দিয়ে কাউকে যদি পিটিয়ে হত্যা করা হয় বা গুলি করে অথবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়, তাহলে কেবল মাত্র ৩০২ ধারায় শাস্তি প্রযোজ্য।’ তিনি আরো বলেন, ‘বোমা বিস্ফোরণে আহত হলে এসিড আইনের মামলায় ৩, ৪ ৫ ও ৬ নম্বর আইন অনুযায়ী যাবজ্জীবন হচ্ছে সর্বোচ্চ শাস্তি। পেট্রলবোমার বিচার হবে এসিড আইন অনুযায়ী। মূল অপরাধীর যে সাজা হবে, হুকুমদাতা ও প্ররোচনাদানকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনিও একই অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। এ ক্ষেত্রে এ আইনে তাঁকে একই সাজা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য আইনটি প্রয়োগ করা হলে সাময়িক সুফল মিলতে পারে। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ হবে ভয়াবহ। এমনকি যাঁরা এর অপপ্রয়োগ করবেন, তাঁরাই এ আইনের শিকার হতে পারেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘কঠোর আইন করলে এবং কঠোরভাবে তা প্রয়োগ করলেই অপরাধ দমন করা যায় না। যাঁরা প্রয়োগ করবেন, তাঁদের সততা ও নিষ্ঠা এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর বিভিন্ন ধারা-উপধারায় বলা হয়েছে :

(ক) কোনো ব্যক্তি পেট্রল বা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ বা কোনো অস্ত্র সন্ত্রাসীকার্যে ব্যবহার করলে বা এ উদ্দেশ্যে নিজ দখলে রাখলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড।

(খ) কোনো ব্যক্তি পেট্রল বা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যা অথবা গুরুতর জখম করলে বা চেষ্টা করলে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড।

(গ) কোনো ব্যক্তি পেট্রল বা অন্য কোনো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যা অথবা গুরুতর জখম করার ষড়যন্ত্র বা সহায়তা বা প্ররোচিত করলে তার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড।

(ঘ) কোনো ব্যক্তি/সংগঠন উত্তরূপ সন্ত্রাসীকার্যে আর্থিকভাবে সহায়তা করলে তার শাস্তি ২০ বছরের কারাদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড।

(ঙ) কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন পেট্রলবোমা বহনকারী বা প্রস্তুতকারী বা প্রয়োগকারী কোনো অপরাধীকে আশ্রয় প্রদান করলে তার শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড।

(চ) পেট্রল বোমা বা কোনো দাহ্য পদার্থ দ্বারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা বা যানবাহনে অগ্নিসংযোগকারী কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে উসকানিমূলক সহায়তা প্রদানের নিমিত্ত যদি কোনো ইলেকট্রনিক বা প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচার করেন তাহলে তার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও তদুপরি অর্থদণ্ড।