রম্য
ভালোবাসা দিবসের সিনেমা : ধাক্কা খেয়ে প্রেম
ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে হাস্যরসের প্রযোজনায় এবং এই রম্যলেখকের কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা ও পরিচালনায় মুক্তি পাচ্ছে অপূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা ‘ধাক্কা খেয়ে প্রেম’!
অভিনয়ে : নায়ক শান্টু খান, নায়িকা অনু বিশ্বাস, ভিলেন দিশা সওদাগরসহ আরো অনেকে।
সূচনা দৃশ্য : গরিব ঘরের সন্তান শান্টু খান। তিনি যখন ছোট ছিলেন, তখনই হারিয়েছেন বাবাকে। এরপর তার মা অনেক কষ্টে ছেলেকে পড়ালেখা করিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা না থাকায় শান্টু এখন ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়েছেন।
অনু বিশ্বাস ধনীর দুলালি। দুধে-ভাতে তার বেড়ে ওঠা। পড়ালেখায় তেমন মন নেই তার। শুধু ‘পড়াশোনা চলছে’ এই তকমা ধরে রাখতে তিনিও ভর্তি হয়েছেন ডিগ্রি কলেজে।
দ্বিতীয় দৃশ্য : রোদ্রৌজ্জ্বল দিন। বাসে করে কলেজগেটের সামনে এসে নামলেন শান্টু খান। একই সময়ে প্রাডো জিপ থেকে নামলেন অনু বিশ্বাস। এবং ঠিক ওই সময়ে হুট করে কোথা থেকে যেন নেমে এলো বৃষ্টি (রোদ্রৌজ্জ্বল দিনে বৃষ্টি হুট করে কীভাবে হতে পারে, এ প্রশ্ন তোলা অবান্তর; কারণ, এটা বাংলা সিনেমা)। বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচতে শান্টু ও অনু একই সময়ে দৌড় দিলেন এবং কলেজের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশের সময় তাঁদের মধ্যে লেগে গেল ধাক্কা। হুমড়ি খেয়ে পড়লেন একজন আরেকজনের ওপর।
চোখে চোখ পড়ল দুজনার। এবং তাঁদের মনে ঘণ্টি বাজল একটি কথাই—ওএমজি। কী সুন্দর চোখ-মুখ।
তৃতীয় দৃশ্য : জোছনাময় রাত। কেন যেন মনের মধ্যে ঝড় বইছে অনু বিশ্বাসের। তিনি এর কারণ বুঝতে পারছেন না। তার শুধু শান্টু খানের কথাই মনে পড়ছে। কলেজে ধাক্কা খাওয়ার পর দুজনেই ‘সরি’ বলেছিলেন। সেখানে নিজেদের মধ্যে পরিচয়ও হয়েছে। এখন রাতের বেলা অনু বিশ্বাসের মনে দিনে দেখা শান্টুর চেহারাই ভাসছে। রাতে ভালো ঘুম হল না অনুর। ছটফট করতে করতে তিনি বুঝে গেলেন—শান্টুর প্রেমে পড়েছেন! সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘কালই শান্টুকে মনের কথা না বললে আমি মরে যাবো!’
চতুর্থ দৃশ্য : ক্লাস শুরু ১০টায়, কিন্তু অনু কলেজে এসে বসে আছেন ৯টা থেকেই। বাসায় তার মন টিকছিল না শান্টুকে দেখার জন্য। ক্লাস শুরুর কিছুক্ষণ আগে কলেজে এলেন শান্টু। তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন অনু, ডেকে নিলেন একপাশে। অনু বললেন, ‘তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে, শান্টু।’ শান্টু কিছুটা অবাক হলেও কথা শুনতে চাইলেন। অনু বললেন, ‘শান্টু, কাল তোমার সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে, তোমাকে প্রথম দেখেই আমি প্রেমে পড়ে গেছি। কাল রাতে আমি শুধু তোমার কথাই ভেবেছি। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, শান্টু! আই লাভ ইউ!’
শান্টুর মনের মধ্যে খুশির জোয়ার বইল। কিন্তু সেটা চেপে তিনি বললেন, ‘তা হয় না, অনু। তোমার সাথে আমার যায় না। আমি গরিবের সন্তান, তুমি ধনীর দুলালি...।’ শান্টুর কথা থামিয়ে অনু বললেন, ‘শান্টু, ধনী-গরিব চিন্তা করে প্রেম হয় না!’ শান্টু বললেন, ‘কিন্তু অনু, তোমার-আমার সম্পর্ক কেউ মানবে না।’ অনু এবার কেঁদে ফেললেন; বললেন, ‘তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না। তোমাকে ছাড়া আমি মরে যাবো!’ শান্টু এবার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে ‘না পেরে’ অনুকে বুকে টেনে নিয়ে বললেন, ‘এমন কথা কক্ষণো বলবে না। আমিও তোমাকে কাল দেখার পরেই ভালোবেসে ফেলেছি। আমারও কাল রাতে ঘুম হয়নি তোমার কথা ভেবে।’ এরপর শুরু হলো গান, সঙ্গে বৃষ্টি।
পঞ্চম দৃশ্য : গান শেষ হতেই দিশা সওদাগরের ছেলে বল্টু সওদাগর এসে হাজির। বল্টু বখাটে হিসেবে পরিচিত। অনুর বাবা আর দিশা বন্ধু। অনুকে পছন্দ করেন বল্টু। আজ শান্টুর সঙ্গে অনুকে দেখে বল্টুর রাগ হলো। আর ‘রাগ হলে’ বল্টু ‘বাঘ’ হয়ে ‘কামড়’ দেন। হাজির হয়েই তিনি শান্টুর কলার চেপে ধরে হুমকি দিলেন, ‘তোর এত বড় কলিজা। আমার অনুর লগে মিশছস তুই। খাইয়া ফালামু তোরে!’ বলেই শান্টুকে মারতে উদ্যত হলেন বল্টু। কিন্তু শান্টু ছবির নায়ক, তাকে মার খেলে চলবে না। তাই তিনিই উল্টো বল্টুকে মেরেটেরে একাকার করে দিলেন।
ষষ্ঠ দৃশ্য : অনুকে পছন্দ করা এবং পরে শান্টুর হাতে মার খাওয়ার কথা বাবা দিশা সওদাগরকে জানালেন বল্টু। দিশা এলাকার মাস্তান, প্রচুর টাকার মালিক। তার কথায় সবাই ওঠবস করে। সব শুনে হুঙ্কার দিলেন দিশা, ‘বা...র বাচ্চা। আমার ছেলেকে মারে।’ বল্টুকে নিয়ে দিশা সোজা গেলেন অনু বিশ্বাসের বাবার কাছে। ‘ছোটলোকের’ ছেলের সঙ্গে মেয়ের প্রেমের কথা শুনে অনুর বাবা মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন। প্রেমের সাহসে বলীয়ান অনু সব স্বীকার করলেন। রাগান্বিত হয়ে অনুর বাবা তৎক্ষণাৎ মেয়েকে দিশার ছেলের সঙ্গে বিয়ের ব্যবস্থা করতে লাগলেন।
শেষ দৃশ্য : অনুকে জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া হচ্ছে শুনে তাদের বাড়িতে এসে হাজির হলেন শান্টু। দিশা সওদাগরের বাহিনীকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিলেন তিনি। দিশাকেও দিলেন পিটুনি। ওই সময় পুলিশ এসে বলল, ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না!’ পুলিশ ইন্সপেক্টর শান্টুকে বললেন, ‘দিশাকে অনেক দিন ধরে খুঁজছি আমরা। সে একজন বড় ক্রিমিনাল। আজ আপনি খবর দেওয়ায় তাকে ধরতে পারলাম আমরা।’ পুলিশ সঙ্গীদেরসহ দিশাকে ধরে নিয়ে গেল। দিশা ক্রিমিনাল শুনে অবাক হলেন অনু বিশ্বাসের বাবা। বন্ধু হলেও দিশার অপকর্ম জানতেন না তিনি। মুহূর্তেই নিজের ‘ভুল’ বুঝতে পারলেন অনুর বাবা। তিনি শান্টুর সঙ্গেই বিয়ে দিলেন অনুর। এরপর তাহারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।