ভেলোস ব্র্যান্ডের যত সাইকেল
যাঁরা বাইসাইকেল সম্পর্কে ধারণা রাখেন, তাঁরা অবশ্যই ভেলোস (Veloce) ব্র্যান্ডের নাম শুনেছেন। বাংলাদেশের মেঘনা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সাইকেল লাইফ এক্সক্লুসিভ এই সাইকেল ব্র্যান্ড বাজারে এনেছে।
২০১৪ সালে বাজারে আসা এই ব্র্যান্ড প্রথম বছরেই অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর আবার নতুন মডেল বাজারে এনেছে তারা, যা আগের মডেল থেকে উন্নত এবং আকর্ষণীয়। নতুন মডেলটিতে উন্নত কনফিগারেশন এবং কালারের সমন্বয় ঘটেছে।
আপনি যদি অল্প দামের মধ্যে ভালো সাইকেল কিনতে চান, তাহলে ভেলোস আপনার জন্য সঠিক ব্র্যান্ড। বাজারের অন্য ব্র্যান্ডের তুলনায় ভেলোস দামে সস্তা, কিন্তু কনফিগারেশনে এটি অন্য সাইকেলের চেয়ে পিছিয়ে নেই। গুণের কারণেই অন্য সাইকেল থেকে এগিয়ে রয়েছে ভেলোস।
এর অন্যতম ভালো দিক হলো ভালো মানের ফ্রেম। আপনি ভেলোসে পাবেন ৬০৬১ বাটেড হাইড্রো ফর্ম (butted hydro form) ফ্রেম, যা বেশ মজবুত। সাধারণ ব্যবহারের জন্য এটি যথেষ্ট শক্তিশালী। এ বছর বের হওয়া প্রতিটি মডেলে এই একই ফ্রেম ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বছর ভেলোসের আটটি মডেল বাজারে এসেছে। লিজিওন ১০, লিজিওন ২০, লিজিওন ৩০, লিজিওন ৪০, লিজিওন ৫০, লেগেসি, লিজিওন ৫০ হাইড্রোলিক, লেগেসি হাইড্রোলিক। এর মধ্যে লিজিওন ৫০ হাইড্রোলিক, লেগেসি হাইড্রোলিক হলো হাইড্রোলিক ব্রেকসংবলিত।
এসব সাইকেলের মধ্যে লিজিওন ১০-এর মূল্য সবচেয়ে কম, মাত্র ১৪ হাজার টাকা। এটি লিজিওন সিরিজের বেসিক মডেল। এটিতে ১৮ গিয়ার রয়েছে, অর্থাৎ সামনে তিন গিয়ার ও পেছনে ছয় গিয়ার (৩ x ৬ = ১৮)। এর ব্রেকিং সিস্টেম ভি ব্রেক; কিন্তু এটি মানসম্পন্ন নয়। এর সাসপেনশনও ভালো নয়। জুমের ৬৩ মিলিমিটারের সাসপেনশনের সাইকেল না কেনাই ভালো।
লিজিওন ২০-এর মূল্য ১৬ হাজার টাকা। এটিও লিজিওন সিরিজের বেসিক মডেল। এতে রয়েছে ২১ গিয়ার। সামনে তিন গিয়ার ও পেছনে সাত গিয়ার (৩ x ৭ = ২১)। এর ব্রেকিং সিস্টেম ভি ব্রেক, তবে এটি মানসম্পন্ন ব্রেক। এতে টেকট্রো ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এর সাসপেনশন মোটামুটি ভালো। এস আর সানটুরের ৭৫ মিলিমিটারের সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। লিজিওন ১০ মডেলের চেয়ে লিজিওন ২০ মডেল কেনাই ভালো।
লিজিওন ৩০ মডেলটির মূল্য ১৭ হাজার টাকা। এটিও লিজিওন সিরিজের মিড বেসিক মডেল। এটিতে ২১ গিয়ার রয়েছে। সামনে তিন গিয়ার ও পেছনে সাত গিয়ার (৩ x ৭ = ২১)। এর ব্রেকিং সিস্টেম ভি ব্রেক। এতে টেকট্রো ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এর সাসপেনশন মোটামুটি ভালো। এস আর সানটুরের ১০০ মিলিমিটারের এক্সসিটি সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে।
লিজিওন ২০, লিজিওন ৩০ ও লিজিওন ৪০—এই তিনটি মডেলে একই রিয়ার ডেরা ব্যবহার করা হয়েছে।
লিজিওন ৪০-এর মূল্য ১৯ হাজার টাকা। এটিও লিজিওন সিরিজের মিড বেসিক মডেল। এটিতে ২৪ গিয়ার রয়েছে। সামনে তিন গিয়ার ও পেছনে আট গিয়ার (৩ x ৮ = ২৪)। এর ব্রেকিং সিস্টেম ভি ব্রেক। এতে টেকট্রো ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এর সাসপেনশনও মোটামুটি ভালো। এস আর সানটুরের ১০০ মিলিমিটার এক্সসিটি সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে।
লিজিওন ৩০ ও লিজিওন ৪০ মডেলের মূল পার্থক্য হলো গিয়ার নাম্বারে।
লিজিওন ৫০-এর মূল্য ২২ হাজার ৫০০ টাকা। এটিও লিজিওন সিরিজের মোটামুটি ভালো মডেল। এটিতে ২৪ গিয়ার। সামনে তিন গিয়ার ও পেছনে আট গিয়ার (৩ x ৮ = ২৪)। এর ব্রেকিং সিস্টেম মেকানিক্যাল ডিস্ক ব্রেক। তবে এটি তেমন মানসম্পন্ন ব্রেক নয়। এতে টেকট্রো ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এর সাসপেনশন ভালো। এস আর সানটুরের ১০০ মিলিমিটারের এক্সসিএম সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়েছে। এর আরেকটি ভার্সন আছে লিজিওন ৫০ হাইড্রোলিক। এটাতে শিমানো এম-৪৪৫ হাইড্রোলিক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত শক্তিশালী ব্রেক। এ ছাড়া এই ভার্সনে দামি সলবে টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মূল্য ২৭ হাজার টাকা।
ভেলোস লেগাসির মূল্য ২৫ হাজার ৫০০ টাকা। ভেলোস সিরিজের টপ অ্যান্ড বাইক এটি। এই বাইকের ব্রেকিং সিস্টেম ভালো। শ্রাম (sram) এর বিবি ৫, যা অনেক লো অ্যান্ড হাইড্রোলিক থেকে ভালো পারফরম্যান্স দেয়।
এর আরেকটি ভার্সন রয়েছে, লেগেসি হাইড্রোলিক। এটাতে শিমানো এম-৩৯৫ হাইড্রোলিক ব্রেক ব্যবহার করা হয়েছে। এটিও বেশ শক্তিশালী ব্রেক। এ ছাড়া এই ভার্সনে দামি সলবে টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। এর মূল্য ২৯ হাজার টাকা। দুটি মডেলেই সলবে টায়ার ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে লিজিওন ৫০ হাইড্রোলিক সাইকেলটি হলো ভেলোসের সবচেয়ে ভালো বাইক। যাঁরা সাইকেল কেনার কথা ভাবছেন, তাঁরা লিজিওন ৩০, ৪০ অথবা লিজিওন ৫০-এর যেকোনো মডেল কিনতে পারেন। তবে লিজিওন ১০ না কেনাই ভালো। লিজিওন ২০ ও লিজিওন ৩০ মডেলের মধ্যে দামের পার্থক্য মাত্র এক হাজার টাকা। তবে সাইকেল দুটির পারফরম্যান্সে পার্থক্য অনেক।