লাখপতির গল্প

উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের বড় প্ল্যাটফর্ম উই : দীপা বণিক

Looks like you've blocked notifications!
সফল উদ্যোক্তা দীপা বণিক। ছবি : সংগৃহীত

সফল উদ্যোক্তা দীপা বণিক। তাঁর উদ্যোগের নাম ‘দীপান্বিতা’। কুমিল্লার বিখ্যাত খাদি ও বাটিকের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করে এখন লাখপতি তিনি। শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোশাক-পরিচ্ছদ বিক্রি করেন। ভেলভেটের টাইডাই বাটিকের শালও বেশ বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয় দীপা বণিকের। জানিয়েছেন নিজের উদ্যোক্তা-জীবনের খুঁটিনাটি।

এনটিভি অনলাইন : কেমন আছেন?

দীপা বণিক : ধন্যবাদ আপনাকে, সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ভালো আছি।

এনটিভি অনলাইন : কী নিয়ে এত ব্যস্ততা?

দীপা বণিক : সংসার এবং উদ্যোগ (দীপান্বিতা), দুটো নিয়েই মোটামুটি ব্যস্ত সময় পার করছি।

এনটিভি অনলাইন : আপনার দীপান্বিতা সম্পর্কে কিছু বলুন।

দীপা বণিক : আমার এক বন্ধুর জন্য প্রোডাক্ট কিনতে গিয়েই দীপান্বিতার শুরু। স্বাবলম্বী হওয়ার ইচ্ছে সব মেয়েরই থাকে, কিন্তু সবার হয়তো সুযোগ হয় না। আমারও ঠিক তাই। কিন্তু মনের ইচ্ছেটাকে বাস্তবে রূপ দিতেই দীপান্বিতার যাত্রা শুরু হয়। শখের বসে শুরু করলেও এখন এটাই আমার পেশা।

এনটিভি অনলাইন : কত দিন ধরে কাজ করছেন? কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

দীপা বণিক: ২০১৯ সালে আমি পেজ ওপেন করি। প্রায় এক বছর ছয় মাস আমার উদ্যোগের বয়স। প্রথম দিকে শুধু পরিচিতদের মধ্যে সেল হলেও এখন দেশের প্রায় সব জেলায় এবং দেশের বাইরেও নিয়মিত আমার পণ্য যাচ্ছে। শুরু থেকেই অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি।

এনটিভি অনলাইন : উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) আপনাকে কেমন সাহায্য করেছে?

দীপা বণিক : উই হচ্ছে নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল। নতুন নতুন প্রশিক্ষণ, রাজিব আহমেদ স্যার ও নিশা আপুর (নাসিমা আক্তার নিশা) মূল্যবান দিকনির্দেশনায় উই আমাদের কাছে হয়ে উঠেছে ভার্চুয়াল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উই বর্তমানে দেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম।  উই-এর সদস্য ১১ লাখ। এখানে বেশির ভাগই নারী উদ্যোক্তা। নিজেদের পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে এখানে। লকডাউনে অনেক পরিবারের পুরুষেরা যখন চাকরি হারিয়ে ঘরে বসেছিল, তখন নারীরা তাদের পরিবারের হাল ধরতে পেরেছে উই-এর মাধ্যমে। আমি বলব, আমাদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বপ্ন পূরণের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম উই।

এনটিভি অনলাইন : উদ্যোক্তা হতে পেরে কেমন লাগছে? আপনার অনুপ্রেরণা কে ছিল?

দীপা বণিক : উদ্যোক্তা হতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। কারণ, আমি ঘরে বসে পরিবারকে সময় দিয়েই স্বাবলম্বী হতে পারছি। যদি আমি উদ্যোক্তা না হতাম, তাহলে হয়তো পুরোটা সময় সংসারে ব্যয় করতাম। কিন্তু যখন দেখি সংসারের সাথে সাথে নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটছি—এ অনুভূতি সত্যিই অন্যরকম। এ কাজে অনুপ্রেরণা ছিলেন আমার মা, তিনি অনেক পরিশ্রমী। সব সময়ই চাইতেন আমি কিছু করি। মায়ের ইচ্ছে থেকেই মূলত উদ্যোক্তা হওয়া।

এনটিভি অনলাইন :  পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

দীপা বণিক : আমার হাজব্যান্ড প্রবাসী, তাই দেশে আমাকে সবকিছু একা সামলাতে হয়। প্রথম দিকে তার আগ্রহের কমতি ছিল না, কিন্তু আমি একা পারব কি না, এ নিয়ে সংশয় ছিল। তবে এখন সে পুরোপুরি সাপোর্ট করে।

এনটিভি অনলাইন : কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

দীপা বণিক : আমি কাজ করছি কুমিল্লার বিখ্যাত খাদি ও বাটিকের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে। এর মধ্যে শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবিই বেশি যাচ্ছে। ভেলভেটের টাইডাই বাটিকের শাল ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।

এনটিভি অনলাইন :  টাকার অঙ্কে সেটা কেমন?

দীপা বণিক : উই-এ মাত্র এক বছরে ১৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। অনেক বড় দুটো অর্ডার ছিল দেশের বাইরে। অস্ট্রেলিয়া ও জাপানে বড় দুটো অর্ডার গেছে। তারা আমার প্রোডাক্ট রেগুলার নিতে আগ্রহী।

এনটিভি অনলাইন : পণ্যের মান কীভাবে রক্ষা করেন?

দীপা বণিক : আমি চেষ্টা করি পণ্যের মান ঠিক রাখতে। এ জন্য আমি কাস্টমারদের মতামতকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কোনো পণ্য সম্পর্কে অভিযোগ থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করি এবং ভবিষ্যতে যেন সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়, সে চেষ্টা করি।

এনটিভি অনলাইন : আগামী দিনের পরিকল্পনা কী?

দীপা বণিক : উদ্যোগ নিয়ে আমার স্বপ্ন—একদিন দেশের বাইরেও সমানভাবে পরিচিত হবে আমার দীপান্বিতা। 

এনটিভি অনলাইন : উদ্যোক্তা হওয়ার পর মধুর কোনো স্মৃতি...

দীপা বণিক : উদ্যোক্তা হওয়ার পর অনেক স্মৃতি, যা খুব আনন্দ দেয়। প্রবাসী অর্ডার নিয়ে অনেক পোস্ট দেখতাম আর ভাবতাম আমার কবে আসবে। একদিন হঠাৎ দেশের বাইরে থেকে একটা ফোন আসে। সেই আপু অনেকক্ষণ কথা বলেন এবং আমার পণ্য অর্ডার করেন। প্রায় লাখ টাকার ওপর পণ্য অর্ডার করেন একসঙ্গে। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পণ্য দেশের বাইরে যাওয়ার চেয়ে আনন্দের কিছুই হতে পারে না।

এনটিভি অনলাইন : উদ্যোক্তা-জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল?

দীপা বণিক : আগে থেকে উদ্যোক্তা হতে চেয়েছিলাম, তবে তা অপূর্ণ রয়ে গিয়েছিল। এখন তা পূর্ণ করতে সাহায্য করেছে উই। উই-এর হাত ধরেই আজ এ পর্যন্ত এসেছি।

এনটিভি অনলাইন : এই কাজে কে কে আপনাকে সাহায্য করে?

দীপা বণিক : প্রথম দিকে আমার পণ্যের সোর্সিং, প্যাকিং, ডেলিভারি—সব একাই করতাম। কিন্তু এখন একজন ডেলিভারিম্যান রেখেছি, একজন দক্ষ কারিগর রয়েছেন।

এনটিভি অনলাইন : ক্রেতা আপনার পণ্য কেন কিনবে বলে মনে করেন?

দীপা বণিক :  প্রথমত আমি আমার পণ্যের মানের সঙ্গে আপস করি না। কাস্টমারদের মতামতকে প্রাধান্য দিই। ডিজাইনে ভিন্নতার কারণে আমার পণ্যের চাহিদা অনেক বেশি। মোট কথা, ইউনিক ডিজাইন এবং ঐতিহ্যবাহী পণ্যের সর্বোচ্চ মানের কারণে আমার পণ্য সবাই কিনবে।

এনটিভি অনলাইন :  মাসে কত টাকার পণ্য বিক্রি হয়, যদি প্রকাশ করতে চান...

দীপা বণিক : মাসে প্রায় লাখ টাকার ওপর পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

এনটিভি অনলাইন : বেকারত্ব বা উদ্যোক্তা হতে আগ্রহীদের উদ্দেশে কিছু বলুন...

দীপা বণিক : যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কর্মজগতে প্রবেশ করতে না পারাই বেকারত্ব। শিক্ষিত, অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত সব পর্যায়ের মানুষের মধ্যে রয়েছে বেকারত্ব। ইদানীং শিক্ষিত বেকারত্বের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। বলা হয়, যুবসমাজই দেশের আসল শক্তি। কিন্তু বেকারত্বে এই শক্তির সীমাহীন অপচয় হয়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সে জন্য পরিকল্পিতভাবে বেকার সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। সমাধানের জন্য শুধু যে কাজে দক্ষ হতে হবে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে, তা নয়; মানসিক উন্নতিরও প্রয়োজন। নিজেকে পরিচিত করতে হবে, নিজের উদ্যোগের জন্য যথেষ্ট সময় ও শ্রম দিতে হবে। নিজের পণ্য সম্পর্কে নিজে জানতে হবে ও অন্যকে জানাতে হবে। নিয়মিত থাকলেই সফল হওয়া যাবে।